কিশোরগঞ্জে নিকলীতে ফুটন্ত তেলে যুবককে ঝলসে দেয়া ইউপি সদস্য গ্রেপ্তার

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ কিশোরগঞ্জের নিকলীতে তুচ্ছ ঘটনার জেরে ফুটন্ত তেলের কড়াইয়ে ফেলে মো. খলিল মিয়া (৩৫) নামে এক যুবককে ঝলসে দেয়ার ঘটনায় অভিযুক্ত ইউপি সদস্য শিশু মিয়া (৪৫) কে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে উপজেলার গুরুই পূর্বপাড়া এলাকায় পুলিশ অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার আগে।

এর আগে একই দিন দুপুরে দগ্ধ মো. খলিল মিয়ার ভাই মো. জুয়েল মিয়া বাদী হয়ে ইউপি সদস্য শিশু মিয়াকে আসামী করে নিকলী থানায় মামলা দায়ের করেন।

গ্রেপ্তার হওয়া শিশু মিয়া উপজেলার গুরুই ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের বর্তমান সদস্য এবং গুরুই পূর্বপাড়ার মৃত শহর আলীর ছেলে।

অন্যদিকে দগ্ধ মো. খলিল মিয়া উপজেলার জারইতলা ইউনিয়নের কামালপুর গ্রামের জলিল মিয়ার ছেলে।

নিকলী থানার ওসি মো. শামছুল ইসলাম সিদ্দিকী জানান, রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ২টার দিকে দগ্ধ খলিল মিয়ার ভাই জুয়েল মিয়া বাদী হয়ে ইউপি সদস্য শিশু মিয়াকে আসামি করে থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পর পরই অভিযান চালিয়ে আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়।

দগ্ধ মো. খলিল মিয়া জানান, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি গুরুই শাহী মসজিদের মেলায় তিনি সিদ্ধ ডিম ও ডালের বড়া বিক্রির অস্থায়ী দোকান দিয়েছিলেন। রাতে ইউপি সদস্য শিশু মিয়া তার দোকানে এসে ডালে মরিচ নাই কেন জিজ্ঞেস করে গালিগালাজ শুরু করেন।

মরিচ শেষ হয়ে গেছে বলে জানালে ইউপি সদস্য আরো ক্ষিপ্ত হন। এক পর্যায়ে তাকে লাথি মেরে ফুটন্ত তেলের কড়াইয়ে ফেলে দেন। এতে তার ডান হাত, ডান পা ও মুখের ডান পাশ ঝলসে যায়।

এ সময় তিনি আর্তচিৎকার করলেও ইউপি সদস্যের ভয়ে কেউ তাকে সহায়তা করতে এগিয়ে যায়নি। ইউপি সদস্য শিশু মিয়া চলে যাওয়ার পর একজন গ্রামপুলিশ তাকে বাড়ি পৌঁছে দেন। পরদিন ১৯ ফেব্রুয়ারি তিনি বাজিতপুর জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে সাময়িক চিকিৎসা নেন।

অর্থাভাবে সেখানে চিকিৎসা শেষ না করেই নিকলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হন। সেখান থেকে তাকে কিশোরগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়। কিশোরগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল থেকে তাকে ঢাকায় রেফার্ড করা হয়।

কিন্তু ঢাকায় গিয়ে চিকিৎসা করানোর সামর্থ্য না থাকায় নিরুপায় হয়ে বাড়ি ফিরে আসেন। এখন বাড়িতেই যন্ত্রণায় ছটফট করছেন।

এদিকে পরিবার জানিয়েছে, বিষয়টি ধামাচাপা দিতে শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) এলাকায় সালিশ বসে। সালিশে বিষয়টি মিটমাট করার জন্য খলিল মিয়াকে চাপ দেয়া হয়।

এ ব্যাপারে গুরুই ইউপি চেয়ারম্যান মো. আবু তাহের জানিয়েছিলেন, বিষয়টি নিয়ে শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে তারা বসেছিলেন। খলিল মিয়ার চিকিৎসার খরচ ও সংসার চালানোর খরচ ইউপি সদস্য শিশু মিয়া বহন করবেন এ রকম সিদ্ধান্ত হয়েছে।

এজন্যে ৭ হাজার টাকাও খলিলকে দেয়া হয়েছে। আর শুরু থেকেই খলিলকে চিকিৎসাসহ সার্বিকভাবে দেখাশোনা করছেন ইউপি সদস্যের বড় ভাই।

দগ্ধ খলিল মিয়ার আর্তনাদ আর দুঃসহ যন্ত্রণার বিষয়ে রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারি) একাধিক জাতীয় সংবাদপত্রে প্রকাশিত হওয়ার পর তোলপাড় সৃষ্টি হয়। বিষয়টি সংশ্লিষ্টদেরও নজরে আসে।

এ পরিস্থিতিতে দুপুরে দগ্ধ খলিল মিয়ার ভাই জুয়েল মিয়া নিকলী থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পর তাৎক্ষণিক অভিযান পরিচালনা করে অভিযুক্ত ইউপি সদস্য শিশু মিয়াকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

Print Friendly, PDF & Email

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর