গিবত যখন গুনাহ নয়

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ কোনো ব্যক্তি ধর্মীয় ক্ষেত্রে মানুষের কাছে অনুসরণীয় কিন্তু তার দৃষ্টিভঙ্গি ও চিন্তাচেতনা ভ্রান্ত মানুষের সামনে তার ভ্রান্ত চিন্তা তুলে ধরা যাবে। যাতে মানুষ ওই ব্যক্তির বিভ্রান্তিপূর্ণ চিন্তাধারা অবলম্বন করে পথভ্রষ্ট না হয়। শরিয়তের দৃষ্টিতে ওই ব্যক্তির সমালোচনাকে গিবত ধরা হয় না। কেননা দীনের হেফাজতের জন্য ভারসাম্য বজায় রেখে ও ঝগড়া-বিবাদ থেকে রক্ষা করে, পরিবেশ-পরিস্থিতি ও সর্বসাধারণের কল্যাণে ওই ব্যক্তির বিভ্রান্তিমূলক চিন্তাধারা সম্পর্কে আলোচনা করা গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় প্রয়োজন।

ইমাম নববি ও ইমাম গাজালি (রহ.)-এর বক্তব্য

ইমাম নববি (রহ.) ‘রিয়াজুস সালেহিন’ কিতাবে এবং ইমাম গাজালি (রহ.) ‘ইহইয়াউ উলুমিদ্বিন’ কিতাবে লিখেছেন, ধর্মীয় উদ্দেশ্যে মৃত বা জীবিত ব্যক্তির গিবত করা বৈধ। বিশেষত যখন এ ছাড়া বিকল্প কোনো পথ থাকে না। আর ছয় স্থানে এই বৈধতা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে চতুর্থ নম্বর হলো কোনো ব্যক্তির অনিষ্ট থেকে মুসলমানদের হেফাজত করা ও তাদের হিতাকাক্সক্ষী হওয়া। আর পঞ্চম নম্বর হলো, যদি সেই ব্যক্তি নিজেই নিজের ভ্রান্তি প্রকাশ করে, তাহলে শুধু ততটুকুই মানুষের সামনে বলা যাবে, যতটুকু ওই ব্যক্তি প্রকাশ করেছে। এর বেশি তার কোনো দোষত্রুটি নিয়ে আলোচনা করবে না। (আল-মাওসুওয়াতুল ফিকহিয়্যা আল-কুয়েতিয়্যাহ, খণ্ড : ৩১, পৃষ্ঠা : ৩৩৫ ও ৩৩৬; আদুররুল মুখতার, খণ্ড : ৯, পৃষ্ঠা : ৫৮৬ ও ৫৮৬)

ফিকাহবিদ আবুল লাইস সমরকন্দি ‘তাম্বিহুল গাফিলিন’ কিতাবে লিখেছেন, গিবত চার ধরনের। এর মধ্যে একটি বৈধ মুবাহ বা শরিয়ত কর্র্তৃক অনুমোদিত। আর তা হলো, যে ব্যক্তি নিজের ভ্রান্ত বিশ্বাসের কথা প্রকাশ্যে বলে অথবা বিদআতের সঙ্গে জড়িত থাকে। সুতরাং যদি ফাসেকের ব্যাপারে মানুষকে সতর্ক করার উদ্দেশ্যে কিছু বলে, তা গিবত তো হবেই না, বরং বক্তব্যদাতাকে তা বিশেষ সম্মান দান করবে।

ছয়টি কারণে গিবত করা জায়েজ

এক. জুলুম থেকে নিজে বাঁচতে, অন্যকে বাঁচাতে জালিমের ব্যাপারে এমন ব্যক্তির কাছে গিবত করতে পারবে, যে তাকে প্রতিহত করতে পারবে।

দুই. খারাপ কাজ বন্ধ করার জন্য সাহায্য চাইতে এমন ব্যক্তির কাছে গিবত করতে পারবে, যে তা বন্ধ করার ক্ষমতা রাখে।

তিন. কোনো বিষয় সম্পর্কে ইসলামি বিধান জানতে গিবত করে মূল বিষয় উপস্থাপন করা জায়েজ আছে। যেমন এ কথা বলা যে, অমুক ব্যক্তি আমাকে আঘাত করেছে, আমার জন্য কি তাকে আঘাত করা জায়েজ? ইত্যাদি।

চার. সাধারণ মুসলমানদের ধোঁকা ও প্রতারণা থেকে বাঁচাতে গিবত করা জায়েজ। যেমন সাক্ষ্য সম্পর্কে, হাদিস ও ইতিহাস বর্ণনাকারী সম্পর্কে, লেখক, বক্তা প্রমুখ সম্পর্কে জনসমক্ষে বলা বৈধ, যাতে মানুষ তার ধোঁকা ও মিথ্যাচার থেকে বাঁচতে পারে।

পাঁচ. প্রকাশ্যে যদি কেউ গর্হিত কাজ করে, তাহলে তার অপকর্ম এমন ব্যক্তির কাছে বর্ণনা করা যায়, যারা এর দ্বারা বিভ্রান্ত হওয়া থেকে রক্ষা পেতে পারে। যেমন কেউ প্রকাশ্যে মদপান করে, তাহলে মানুষের সামনে তার সম্পর্কে বলা জায়েজ। যেন এমন খারাপ কাজ করতে ভবিষ্যতে কেউ সাহস না করে।

ছয়. কারও পরিচয় প্রকাশ করতে তার গিবত করা যায়, যদি সে এই নামে প্রসিদ্ধ হয়। যেমন কেউ অন্ধ। তার পরিচয় দেওয়া দরকার। কিন্তু অন্ধ বললেই সবাই চিনে নেয়। তখন তাকে অন্ধ বলা বাহ্যিক দৃষ্টিতে গিবত মনে হলেও এটা বৈধ। এতে গিবতের গুনাহ হবে না। (তাফসিরে রুহুল মাআনি : ১৪/২৪২, সুরা : হুজরাত, আয়াত : ১২)

Print Friendly, PDF & Email

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর