পুঠিয়ার সাবেক ওসি নিয়ে রায় বহাল

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ রাজশাহীর পুঠিয়ার শ্রমিক নেতা নুরুল ইসলাম হত্যা মামলায় এজাহার বদলে দেওয়ার ঘটনায় তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাকিল উদ্দিন আহমেদের বিষয়ে তদন্ত করতে হাইকোর্টের রায় বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ।

প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ আজ রবিবার (১ মার্চ) হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সাকিল উদ্দিন আহমেদের আবেদন খারিজ করে এ আদেশ দেন।

আদালতে সাকিল উদ্দিনের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন ও আব্দুল মতিন খসরু। অপরপক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ফিদা এম কামাল। সঙ্গে ছিলেন ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া।

আদেশের পর জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, হাইকোর্টের আদেশ মতো তদন্ত চলমান থাকা অবস্থায় তিনি আপিল বিভাগে আবেদন করেন। সেটি খারিজ করেছেন আপিল বিভাগ। এখন এফআইআর বদলে দেওয়ার ঘটনায় হাইকোর্ট দুদককে যে তদন্ত করতে বলেছিলেন তা চলবে। এছাড়া তার বিরুদ্ধে আসা বিভিন্ন অভিযোগ তদন্ত করে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কার্যক্রমও চলবে।

এর আগে গত ১ ডিসেম্বর রাজশাহীর পুঠিয়ার শ্রমিক নেতা নুরুল ইসলাম হত্যা মামলা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। মামলার যাবতীয় নথি পিবিআই’র কাছে হস্তান্তর করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই তদন্তকালে আবেদনকারীর মূল এজাহার, রাজশাহীর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের তদন্ত প্রতিবেদন ও সাক্ষীদের সাক্ষ্য বিবেচনা করতে বলা হয়েছে। এই তদন্ত কার্যক্রম তদারকি করতে পিবিআই প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এদিকে, পুঠিয়ার সাবেক ওসি শাকিল উদ্দিন আহমেদ বাপ্পির বিরুদ্ধে রিট আবেদনকারী, পুলিশ সদস্য, তার শাশুড়ির করা অভিযোগের বিষয় দ্রুত তদন্ত করে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে আইজিকে নির্দেশ দেওয়া হয়। এ ছাড়া নুরুল ইসলাম হত্যা মামলার এজাহার বদলে ফেলা, সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেওয়াসহ সকল অনিয়ম তদন্ত করতে দুদককে নির্দেশ দেন বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ।

রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, ওসির মত দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তার এ ধরনের কর্মকাণ্ড নি:সন্দেহে গুরুতর অপরাধ। যা দণ্ডবিধির ১৬৬ ও ১৬৭ ধারায় শাস্তিযোগ্য এবং দুর্নীতি দমন প্রতিরোধ আইনের তফশিলভুক্ত অপরাধ। এ কারণে ওসি সাকিলের বিরুদ্ধে বিচার বিভাগীয় অনুসন্ধান প্রতিবেদন ও আনুষাঙ্গিক নথি দুর্নীতি দমন কমিশনে প্রেরণের নির্দেশ দেওয়া হলো। এসব নথির ভিত্তিতে ওসি শাকিলের বিরুদ্ধে দুদককে পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হলো।

রায়ে বলা হয়, আমরা দৈনন্দিন বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করতে গিয়ে ইদানীং প্রায়শ লক্ষ্য করছি যে, দেশের বিভিন্ন স্থানে স্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তাসহ পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে নানাবিধ অভিযোগ উত্থাপিত হচ্ছে এবং ভুক্তভোগীরা এসব বিষয়ে পুলিশের আইজি বরাবর লিখিত অভিযোগও দায়ের করেছেন এবং করছেন। কিন্তু ওইসব অভিযোগগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করা হচ্ছে না।

আদালত বলেন, বাংলাদেশ পুলিশ মহান মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং পরবর্তী বিভিন্ন সময়ে দেশের সামগ্রিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষা ও উন্নয়ন, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ দমন, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, জাতিসংঘ শান্তি মিশনের কার্যক্রমে অনবদ্য অবিস্মরণীয় ভূমিকা রেখেছে এবং রেখে চলেছে। এটা শুধু পুলিশ বাহিনীর জন্যই গৌরবের নয়, সমগ্র জাতির গৌরব। কিন্তু এই গৌরব গুটিকয়েক পুলিশ কর্মকর্তা বা সদস্যদের অন্যায়, বেআইনি আচরণ ও অপরাধের কারণে ম্লান হতে দেওয়া যাবে না। এ কারণে আদালত প্রত্যাশা করে যে, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ উত্থাপিত হলে ওই অভিযোগ সম্পর্কে দ্রুততার সাথে বিভাগীয় তদন্ত সম্পন্ন এবং দোষী প্রমাণিত হলে দ্রুত আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। আমরা মনে করি, আদালতের এ প্রত্যাশা বিবেচনায় নিয়ে পুলিশের আইজি এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ এবং ‘আইজিপি কমপ্লেইন্টস মনিটরিং সেল’ এর কার্যক্রমকে আরো কার্যকর ও গতিশীল করবেন।

পুঠিয়া সড়ক পরিবহন মটর শ্রমিক ইউনিয়ন নির্বাচন নিয়ে বিরোধের জের ধরে খুন হন শ্রমিক নেতা নুরুল ইসলাম। গত ১১ জুন সকালে পুঠিয়ার কাঁঠালবাড়িয়া এলাকার ‘এসএস ব্রিক ফিল্ড’  নামক ইটভাটা থেকে নুরুল ইসলামের লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় নিহতের মেয়ে নিগার সুলতানা থানায় এজাহার দাখিল করেন। কিন্তু তার এজাহার গ্রহণ না করে তার কাছ থেকে সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেওয়া হয়। এরপর কয়েকদিন থানা থেকে কোনো তৎপরতা না দেখে নিহতের স্ত্রী সাজেদা বেগম পুঠিয়া উপজেলা মে আদালতে নালিশি মামলা করেন। এই মামলায় শুনানিকালে পুঠিয়া থানা থেকে নিগার সুলতানার স্বাক্ষর করা একটি এজাহার হাজির করে থানা পুলিশ। তাতে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি দেখানো হয়। ওই এজাহারে সন্দেহজনক হিসেবে পাঁচজনের নাম বলা হয়।

এই এজাহারের বিষয়ে তখনই নিগার সুলতানা ও তার মা সাজেদা বেগম আপত্তি জানিয়ে বলেন, এই এজাহার তাদের নয়। পরবর্তীতে নিহত নুরুল ইসলামের পরিবারের পক্ষ থেকে গত ১৮ জুলাই আইজি, রাজশাহী রেঞ্জের পুলিশের ডিআইজি ও রাজশাহীর এসপির কাছে এজাহার বদলে ফেলার অভিযোগ দাখিল করে। কিন্তু পুলিশ প্রশাসন ব্যবস্থা নেয়নি। এ অবস্থায় হাইকোর্টে রিট আবেদন করা হয়। এ রিট আবেদনে হাইকোর্ট রুল জারি করেন এবং বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেন।

হাইকোর্টের নির্দেশে অভিযোগ তদন্ত করে ওসি সাকিলসহ ৫ পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দাখিল করেন রাজশাহীর মূখ্য মহানগর হাকিম মো. মেহেদী হাসান তালুকদার। এই প্রতিবেদন গত ৬ নভেম্বর হাইকোর্টে পাঠানো হয়। আজ এই প্রতিবেদনের ওপর শুনানি হয়। শুনানি শেষে গত ১ ডিসেম্বর রায় দেন আদালত।

Print Friendly, PDF & Email

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর