গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে ভিডিও, অভিযোগের দেড় ঘণ্টার মধ্যেই গ্রেফতার

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ ঝিনাইদহে জোর করে বিবস্ত্র করে গৃহবধূর ছবি ও ভিডিও ধারণ করে চাঁদা দাবির অভিযোগে চার যুবককে গ্রেপ্তার করেছে জেলা পুলিশ। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জেলা গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল তাদের গ্রেপ্তার করে।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) মো. সোহেল রানা। তিনি জানান, তাদের কাছ থেকে আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও জব্দ করেছে পুলিশ।

গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা হলেন-সানি মুন্সি (২৩), মো. শাওন (২৪), মো. মারুফ বিল্লাহ (২৫) ও সোহান (২৫)।

বৃহস্পতিবার বিকেলে ভিকটিম ও তার স্বামী পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এসে অভিযোগ করেছেন। বর্তমানে তারা ঝিনাইদহ শহরের একটি বাসায় ভাড়া থাকেন। ভিকটিমের স্বামী পেশায় ইলেকট্রিক মেকানিক।

পুলিশ জানিয়েছে, গত ১৮ জুন সন্ধ্যার দিকে তার ইলেকট্রিক কাজের সহকারী এক কিশোরকে দিয়ে বাসায় বাজার পাঠান। ওই সহকারী বাসায় গিয়ে দরজা নক করলে ওই গৃহবধূ দরজা খুলে দেন। তখন ওই সহকারীর পেছন পেছন এলাকার বখাটে ও মাদকসেবী ওই চার যুবক অতর্কিতভাবে ওই বাসার ভেতরে ঠুকে পড়েন। এ সময় গৃহবধূর মেয়ে পাশের কক্ষে ছিল।

পুলিশ আরও জানায়, অভিযুক্তরা মেয়েকে পাশের কক্ষে আটকে রেখে গৃহবধূ ও ওই কিশোরকে নানা ধরনের ভয়ভীতি দেখান। এরপর ওই চার যুবক সহকারী কিশোরের পোশাক খুলে ভিকটিমের পাশে বসিয়ে ছবি তোলেন। এ ছাড়া আরও ‘আপত্তিকর কাজ’ করতে বললে তাতে রাজি না হওয়ায় ওই কিশোরকে মারধর করেন তারা। পরবর্তী সময়ে ওই যুবকেরা ভিকটিমকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন। কিন্তু তাতেও ব্যর্থ হয়ে জোর করে ভিকটিমকে বিবস্ত্র করে ছবি তোলেন ও ভিডিও ধারণ করেন। তবে এসব কথা কাউকে না জানাতে শাসিয়ে যান। বিষয়টি কাউকে জানালে ছবি ও ভি‌ডিও ইন্টারনেটে ছেড়ে দেওয়ার এবং আরও বড় ধরনের ক্ষতি করার হুমকি দেন।

ওই নারী এবং তার স্বামীর বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, তারা ওই এলাকায় ভাড়া থাকেন, তাই মান-সম্মানের ভয়ে শুরুতে বিষয়টি কাউকে জানানো থেকে বিরত থাকেন। কিন্তু ঘটনার পর ওই যুবকেরা ছবি ও ভি‌ডিও ইন্টারনেটে ছেড়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে চাঁদা দাবি শুরু করলে তারা পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ করেন।

গতকাল বিকেল ৫টার দিকে অভিযোগ পাওয়া মাত্রই অভিযুক্তদের ধরতে অভিযানে নামে ঝিনাইদহ জেলা পুলিশ। মাত্র দেড় ঘণ্টার মধ্যেই অভিযুক্ত চার যুবককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ সময় ভিকটিমের আপত্তিকর ছবি ও ভিডিওসহ চারটি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়।

গ্রেপ্তার যুবকদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, অনেকদিন ধরেই ওই নারীকে টার্গেট করেছিলেন তারা। কিন্তু সুযোগ না পেয়ে বাসায় ঢুকতে পারেননি। ঘটনার দিন ওই সহকারী বাজার নিয়ে বাসায় ফেরার পথে তাকে অনুসরণ করেন তারা। সহকারী ঘরে ঢোকার পর দরজা খোলা পেয়ে তারাও বাসার ভেতরে ঢুকে পড়েন। শুরুতে পরিকল্পনা ছিল, ভিকটিম ও সহকারীর আপত্তিকর ছবি তুলে তা দিয়ে ব্ল্যাকমেইল করা। কিন্তু সহকারী তাতে রাজি না হওয়ার, তারা নিজেরা ধর্ষণের চেষ্টা করেন।

কিন্তু তাতে সফল না হয়ে ভিকটিমকে জোর করে বিবস্ত্র করে ছবি তুলে ও ভিডিও করে নেন। কেন এমনটা করেছেন-এমন প্রশ্নের জবাবে ওই চার অভিযুক্তের উত্তর, মাদকের টাকা সংগ্রহের জন্য চাঁদাবাজি এবং পরবর্তী সময়ে ভিকটিমের কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা হাসিলের জন্য এটা করেছে তারা।

এ ঘটনায় ওই চার যুবকের বিরুদ্ধে মামলা নিয়েছে পুলিশ। এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে এলাকার চিহ্নিত মাদকসেবী ও বখাটেদের বিরুদ্ধে বিশেষ অভিযান চালাচ্ছে জেলা পুলিশ।

Print Friendly, PDF & Email

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর