স্বামীর প্রেরণায় বিসিএস ক্যাডার জিনিয়া

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ সাফল্যে মোড়ানো এখন জিনিয়া। বলছিলাম  নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্য ও সমুদ্র বিজ্ঞান বিভাগের ৫ম ব্যাচের নিগার সুলতানা জিনিয়ার কথা। স্বামীর অনুপ্রেরণায় ৩৮ তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশ প্রাপ্ত হয়েছেন। বর্তমানে তিনি নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলার মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয়ের সম্প্রসারণ কর্মকর্তা হিসেবে রয়েছেন।

কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার মেহার গ্রামের সন্তান জিনিয়া। বাবা মো. জসীমউদ্দিন ভূঁইয়া কুমিল্লা জেলার চান্দিনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর প্রধান সহকারী কাম হিসাব রক্ষক হিসাবে কর্মরত ছিলেন। মাতা তাহমিনা আক্তার একই স্থানের সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক হিসেবে নিযুক্ত রয়েছেন। পরিবারের ৩ ভাই-বোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। বড় বোন আজমেরী সুলতান পাপিয়া এলএলবিতে অধ্যয়নরত। ছোট ভাই মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া (মাহিন) কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগে অধ্যয়নরত।

জিনিয়া পড়ালেখা শুরু করেন কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার ডা. ফিরোজা পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে। পড়াশোনার ফলাফল ছিলো তার সবসময় চোখ ধাঁধানো। পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ থাকায় অষ্টম শ্রেণিতে বৃত্তি পেয়েছেন। ২০০৭ সালে এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ এবং মেধাতালিকায় বোর্ডের অধীনে বৃত্তি পান। এরপর ভর্তি হন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের বিজ্ঞান বিভাগে। একাদশ শ্রেণিতেও ভালো ফলাফলের চেষ্টা অব্যাহত থাকে। ২০০৯ সালে এইচএসসি পরীক্ষায়ও জিপিএ-৫ পেয়ে একই বোর্ডের অধীনে বৃত্তি পান জিনিয়া।

এরপর উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ অ্যান্ড মেরিন সায়েন্স বিভাগে ভর্তি হন। পড়াশোনায় বুদ হলেন। স্নাতকে তার বিভাগে পেলেন সিজিপিএ ৪.০০ এর মধ্যে ৩.৮৬ পান। বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে পুরোপুরি বদলে যান জিনিয়া। ২০১৬ সালে এমএসসি পরীক্ষায় বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ফিশারিজ বায়োলজি অ্যান্ড জেনেটিকস বিভাগ থেকে সিজিপিএ-৩.৮৪ এবং ফার্স্ট ক্লাস থার্ড হন তিনি।

স্বপ্ন জয়ের গল্পে জিনিয়া বলেন, অনার্স থাকা অবস্থায় চাকরির প্রতি তেমন চিন্তা ছিল না। যখন মাস্টার্স করার জন্য বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে যাই তখন চাকরির পরিসর দেখে নিজের মধ্যে চাকরির চিন্তা আসলো। আমার মাস্টার্স এর সাবজেক্ট ছিলো ফিশারিজ বায়োলজি অ্যান্ড জেনেটিকস তাই এই বিভাগের ল্যাবের জন্য অনেক চাপ ছিলো যার কারনে একাডেমিক পড়াশোনার পর চাকরির পড়াশোনার জন্য তেমন সময় পেতাম না। এরপর যখন মাস্টার্স করে বাসায় চলে আসি তখন টিচারশীপের জন্য ভাইবা দেই কিন্তু সেটাও হলোনা। পরবর্তীতে বিসিএসের প্রস্তুতি নিতে শুরু করি এবং মনেপ্রাণে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম হইলে বিসিএস ক্যাডার হবো নতুবা অন্য কোনো চাকরি করবো না।

অনুভূতি প্রকাশ করে জিনিয়া বলেন, বিসিএস পরীক্ষায় যে প্রথম হয়েছে সে নিজেও বলতে পারবে না প্রথম হবে। আল্লাহর রহমতে যা চেয়েছি তার থেকে অনেক বেশিই পেয়েছি। বাবা-মা ও শিক্ষকদের দোয়া পেয়ে সফলতায় পৌঁছাতে পেরেছি। তিনি বলেন পৃথিবীতে যারা নিজের কর্মকান্ডের জন্য বাবা-মার মুখে হাসি ফোটাতে পারে আমি সেই ভাগ্যবানদের মধ্যে একজন। আমার খুশির পরিধিটা কতটুকু এরপর আর বলার থাকে না।

চলতি বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাচমেট আবু কায়সার দিদারকে বিয়ে করেন নিগার সুলতানা জিনিয়া। তার স্বামী নিজের অডিট ফার্মের সিনিয়র ইনভেস্টিগেটর।

বিয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে জিনিয়া বলেন, আবু কায়সার স্বামী হওয়ার আগে আমার বন্ধু। বিসিএসের প্রস্তুতির শুরু থেকে আমাকে সহযোগিতা করেছে দিদার। আগে বন্ধু হিসেবে পাশে ছিল, এখন স্বামী হিসেবে আছে। আপনার যেকোনো সাফল্যের জন্য একজন বন্ধু পাশে থাকা চাই। আমার সাফল্যে আমার স্বামী ভীষণ খুশি। পাশাপাশি তার পরিবারের সবাইও খুশি।

অনুপ্রেরণার কথা বলতে গিয়ে জিনিয়া বলেন, যেকোনো সফলতায় একজন বন্ধু পাশে থাকা দরকার। সে দিক থেকে আমি খুব ভাগ্যবান। কারন আমার স্বামী আগে আমার বন্ধু তারপর স্বামী। তার সবসময় বিশ্বাস ছিলো একাডেমিক সফলতার পাশাপাশি বিসিএসে ভালো করতে পারব। তার এই বিশ্বাস আমার আত্মবিশ্বাসকে আরো বাড়িয়ে দিতো। আর তাছাড়া আমি যেহেতু কুমিল্লায় ছিলাম আর সে ছিলো ঢাকায় তাই বিসিএস সম্পর্কিত বিভিন্ন নোটস ও বই এসব কিছুর সাপোর্ট পেতাম। আমার আজকের এই সফলতায় তার অবদানও অনস্বীকার্য।

ভবিষ্যৎ প্রত্যাশা নিয়ে নিগার সুলতানা জিনিয়া বলেন, আমি ন্যায় ও নিষ্ঠার সঙ্গে সরকার কর্তৃক অর্পিত দায়িত্ব পালন করব। সবসময় জনগণের কল্যাণে কাজ করব। যেহেতু আমি নারী তাই নারীর ক্ষমতায়নে বিশেষ ভূমিকা পালন করব।

Print Friendly, PDF & Email

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর