স্বাস্থ্য খাত নিয়ে অস্বস্তিতে সরকার-আওয়ামী লীগ

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ করোনা ভাইরাস মহামারি পরিস্থিতিতে দেশের স্বাস্থ্য খাতে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে অস্বস্তিতে সরকার ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দুর্নীতি-অনিয়মের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ব্যর্থতার এবং এর সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের দলের নাম ভাঙিয়ে প্রভাব খাটানোর অভিযোগও উঠেছে।

স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগ সরকার ও দলের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগ এবং সরকারের নীতি নির্ধারকরা। প্রকৃতিক দুর্যোগ, করোনা মহামারি মোকাবিলায় যখন সরকারকে হিমশিম খেতে হচ্ছে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সর্বাত্বক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সেই পরিস্থিতিতে এ ধরনের দুর্নীতি-অনিয়ম সরকার ও আওয়ামী লীগকে অস্বস্তির মধ্যে ফেলে দিয়েছে।

করোনার নমুনা পরীক্ষা ও মিথ্যা সার্টিফিকেট দেওয়ার প্রতারণার অভিযোগে রিজেন্ট গ্রুপ চেয়ারম্যান ও রিজেন্ট হাসপাতাল মালিক সাহেদ করিমকে নিয়ে দেশব্যাপী ব্যাপক সমালোচনার ঝড় চলছে। শুধু তাই নয়, আন্তর্জাতিক সমালোচনার মুখেও পড়তে হয়েছে বাংলাদেশকে। করোনা পরীক্ষা নিয়ে জালিয়াতির অভিযোগে জোবেদা খাতুন হেলথ কেয়ারের (জেকেজি) চেয়ারম্যান ডা. সাবরিনা আরিফ চৌধুরীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এদের প্রতিষ্ঠানের করোনা পরীক্ষার অনুমতি পাওয়ার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রভাব এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। বিশেষ করে সাহেদ নিজেকে সরাসরি আওয়ামী লীগ নেতা পরিচয় দিয়ে ঘুরে বেরিয়েছেন এবং আওয়ামী লীগের প্রভাশালী নেতা ও মন্ত্রীদের সঙ্গে তার সম্পর্কও তিনি প্রচার করেছেন। তার অনুমতি পাওয়ার পেছনে এই সব প্রভাব কাজ করেছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। যদিও আওয়ামী লীগের পক্ষ্য থেকে দাবি করা হচ্ছে, সাহেদ দলের কেউ নন। জেকেজির ক্ষেত্রেও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনিয়ম ও রাজনৈতিক প্রভাবের অভিযোগ উঠেছে।

এদিকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মধ্যে সমন্বয়হীনতার অভিযোগও উঠেছে। যদিও মঙ্গলবার (১৪ জুলাই) সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক দাবি করেছেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে মন্ত্রণালয়ের কোনো সমস্যা নেই।

গত ৮ মার্চ দেশে করোনা শনাক্ত হয়। এর পর পরিস্থিতি ক্রমেই অবনতি হতে থাকে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিলেও স্বাস্থ্য খাতের দুর্বলতা সামনে চলে আসে। সেই সঙ্গে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠে। এ নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্যমন্ত্রীও সমালোচিত হন। চলতি অর্থ বছরের জন্য সদ্য সমাপ্ত জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশনে বিরোধী দলের সদস্যরা স্বাস্থ্য খাত নিয়ে ব্যাপক সমালোচনায় সোচ্চার হয়ে উঠেন। এ সময় কেই কেউ স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেককে এই মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে দেওয়ারও প্রস্তাব করেন। এই সার্বিক বিষয় সরকার ও আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এটা সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে বলেও দলের নেতা ও মন্ত্রীরা মনে করছেন।

এসব বিষয়ে কৃষিমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক বাংলানিউজকে বলেন, আওয়ামী লীগ অনেক বড় দল। বর্ণ চোরারা নানাভাবে দলে ঢুকে পড়ছে। সরকারের সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করছে। এতে অবশ্যই দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। একজন (সাহেদ) দলের কিছুই না। বলা হচ্ছে আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক উপ-কমিটির সদস্য। অথচ আমরা এটা জানি না। তবে আমরা দুর্নীতিবাজদের প্রশ্রয় দিচ্ছি না। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। দুর্নীতি-অনিয়মের সঙ্গে যারাই জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

এদিকে গত বছর সেপ্টেম্বরে সরকার দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে শুদ্ধি অভিযান শুরু করে। ও্ই সময় আওয়ামী লীগের সংযোগী সংগঠন ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ অন্যান্য সংগঠনের কোনো কোনো নেতার দুর্নীতি-অনিয়মের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ও সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এদের কয়েকজনকে গ্রেফতারও করা হয়। সরকারের ওই পদক্ষেপ তখন মানুষের কাছে প্রশংসিতও হয়। সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতা ও মন্ত্রীরা বলে আসছেন দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে। যদিও গত কয়েক মাস এই বিষয়টি দৃশ্যমান ছিল না। তবে স্বাস্থ্যখাতের সাম্প্রতিক ঘটনাবলী নতুন করে সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।

আওয়ামী লীগের নেতা ও মন্ত্রীরা জানান, এক শ্রেণীর লোক আছে যারা সব সময়ই সরকারের সুবিধা নেওয়ার জন্য তৎপর থাকে। এ জন্য তারা দলের নাম ভাঙানোর চেষ্টা করে। আওয়ামী লীগ বড় দল হওয়ায় বিভিন্নভাবে দলের মধ্যে ঢুকে পড়ে। তবে এসব দুর্নীতিবাজ ও অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের সরকার ছাড় দিচ্ছে না এবং সঙ্গে সঙ্গেই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এদের ব্যাপারে সরকারের স্পষ্ট কঠোর অবস্থান রয়েছে।

এ বিষয়ে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতা খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, সরকার কোনো কিছু গোপন করতে চাচ্ছে না। সব বিষয়েই তথ্য উন্মোচন করে দিচ্ছে। সরকারের নেগেটিভ দৃষ্টিভঙ্গি থাকলে এসব জনসমক্ষে আসতো না। সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি পজিটিভ। এ জন্য সরকারকে অ্যাপরেসিয়েট করা উচিত। করোনা যখন শুরু হয় তখন একটি ল্যাব ছিল। এখন তো সেই পর্যায়ে নেই। সরকারের অনেক অর্জন আছে। এই একজন, দু’জনের কারণে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়ে যাবে সেটা মনে করি না। তবে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় জন্য এক শ্রেণীর সুবিধাবাদী অনুপ্রবেশের জন্য তৎপর থাকে। এই অনুপ্রবেশকারীরা সরকারের সুবিধা নেওয়া চ্ষ্টো করে। কিন্তু সরকার তো এদের ব্যাপারে জিরো টলারেন্স।

Print Friendly, PDF & Email

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর