গুরুত্বপূর্ণ পদে আসছেন তারা

২০তম জাতীয় সম্মেলন ঘিরে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগে শুরু হয়েছে বিরাট কর্মযজ্ঞ। দলের নেতৃত্বে নির্বাচনের আনুষ্ঠানিকতায় নিজেকে কোনো না কোনোভাবে সম্পৃক্ত করতে উঠেপড়ে লেগেছেন নেতারা। আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনে বরাবরই নতুনরা আসেন নেতৃত্বে। এবারও তার ব্যতিক্রম হবে নাÑএরই মধ্যে মিলেছে ইঙ্গিত। এই নতুনরা কারা? সে নিয়ে চলছে আলোচনা, জল্পনা, হিসাব নিকাশ।

নেত্রীর কাছাকাছি আসতে আপ্রাণ চেষ্টা করছেন নেতারা। তবে এরই মধ্যে শেখ হাসিনা বেশ কয়েকজন নেতার বিষয়ে সবুজ সংকেত দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন। সম্মেলনের আগেই এই নেতাদের নিয়ে দলের ভেতর চলছে আলোচনা। আওয়ামী লীগের সবশেষ জাতীয় সম্মেলন হয়েছিল ২০১২ সালের ডিসেম্বরে। তিন বছর মেয়াদি বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে গত ডিসেম্বরে। গত ৯ জানুয়ারি কমিটির মেয়াদ ছয় মাস বাড়ানো হয়। এরপর মার্চে জাতীয় সম্মেলন করার ঘোষণা দেওয়া হলেও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের কারণে তা পেছানো হয়। পরে ১০ ও ১১ জুলাই জাতীয় সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হয়।

নির্ধারিত এই তারিখ সামনে রেখে সম্মেলনের প্রস্তুতির কাজ চলছে জোরেশোরে। এরই মধ্যে গঠিত হয়েছে ১১টি উপ-পরিষদ। আর এই প্রত্যেকটি উপ-পরিষদের সদস্যরা প্রায়ই নিজেদের মধ্যে বৈঠক করছেন।

আলোচনা সাধারণ সম্পাদক নিয়ে

জাতীয় সম্মেলনে সারা দেশ থেকে আসা কাউন্সিলরদের ভোটে দলের নেতৃত্ব নির্বাচনের বিধান আছে। তবে সভাপতি নির্বাচন নিয়ে কোনো রকমের সংশয়-সন্দেহ নেই। শেখ হাসিনাই যে আবার এই পদে আসছেন সেটা নিশ্চিত বলেই জানিয়েছেন নেতারা। দলের ভেতর তার প্রতিদ্বন্দ্বী হওয়ার মতো নেতৃত্ব বা বাস্তবতা বাংলাদেশে নেই বলেই মনে করছেন নেতারা।

গত দুই জাতীয় সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। তবে এইবার তিনি আবার নির্বাচিত হবেন, নাকি নতুন কেউ দায়িত্ব পেতে যাচ্ছেন, সে নিয়ে আছে নানা কথা। সৈয়দ আশরাফকে ঘিরে আওয়ামী লীগে দুটি পক্ষ সক্রিয়। একটি পক্ষ এই পদে তাকে পছন্দ করছেন না। তারা চান নতুন কেউ এই দায়িত্ব নিক। তবে অপর একটি অংশ চাচ্ছে সাধারণ সম্পাদক পদে পুনরায় তিনি বহাল থাকেন। দুই পক্ষই এ বিষয়ে দলীয় সভাপতির কাছে ধরনা দিচ্ছেন।

সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে দলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন সৈয়দ আশরাফ। সে সময় তিনি ও ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জিল্লুর রহমানের ভূমিকাকে এখনো স্মরণ করেন আওয়ামী লীগের সব পর্যায়ের নেতা-কর্মী। আর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর জাতীয় সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন সৈয়দ আশরাফ। আর মহাজোট সরকারের দ্বিতীয় প্রধান পদ হিসেবে বিবেচিত স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের (এলজিআরডি) দায়িত্ব পান তিনি। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকারেও এলজিআরডি মন্ত্রীর দায়িত্ব পান সৈয়দ আশরাফ। তবে এক বছর সাত মাসের মাথায় ২০১৫ সালের ৯ জুলাই তাকে ওই পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। পরে জনপ্রশাসনমন্ত্রী করা হয় তাকে। সবশেষ গত ৩ মে তাকে সংসদে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

এসব নানা ঘটনার কারণে দলে সৈয়দ আশরাফের অবস্থান নড়বড়ে হয়েছে বলে মনে করছেন নেতাদের কেউ কেউ। এ কারণেই তার বিকল্প নিয়ে আলোচনা চলছে। তারা জানিয়েছেন, সৈয়দ আশরাফ সাধারণ সম্পাদক না থাকলে সভাপতিম-লীর সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ, ওবায়দুল কাদের, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, দিপু মনি ও কৃষিবিষয়ক সম্পাদক ড. আবদুর রাজ্জাকের নাম বিবেচনায় থাকতে পারে।

গুরুত্বপূর্ণ পদে আসতে পারেন রাজ্জাক

বর্তমানে আওয়ামী লীগের কৃষিবিষয়ক সম্পাদক তিনি। মহাজোট সরকারের আমলে খাদ্যমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক অবশ্য বর্তমান মন্ত্রিসভায় স্থান পাননি। তবে দলের কর্মকা-ে সক্রিয় হয়েছেন আগের চেয়ে বেশি। সর্বশেষ ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীর সমন্বয়কের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। এছাড়াও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের কমিটি পুনর্গঠনেও দল থেকে তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। গত সরকারের আমলে মন্ত্রী থাকাকালে রাজ্জাককে নিয়ে নেতিবাচক তেমন কোনো খবর প্রকাশ হয়নি গণমাধ্যমে। বরং মিষ্টভাষী এই নেতার অনেকটাই স্বচ্ছ ভাবমূর্তি আছে। একে কাজে লাগাচ্ছে আওয়ামী লীগ। সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সৈয়দ আশরাফ ছাড়াও যাদের নাম আলোচনায় আসছে তাদের একজন এই রাজ্জাক। তবে দলের দ্বিতীয় প্রধান পদ না পেলেও দলের নীতি নির্ধারণী সর্বোচ্চ ফোরাম সভাপতিম-লীতে তার অন্তর্ভুক্তির জোরাল সম্ভাবনা আছে বলে জানিয়েছেন শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ একাধিক নেতা।

আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বরাবরই টাঙ্গাইলের এক বা একাধিক নেতা থাকেন। কিন্তু সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকীকে দল থেকে বহিষ্কারের পর এখন সভাপতিম-লীতে টাঙ্গাইলের কেউ নেই। তাই সাধারণ সম্পাদক না হলেও দলের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী পর্ষদে রাজ্জাকের অন্তর্ভুক্তি অনেকটাই নিশ্চিত বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা। রাজ্জাক ২০০১ সালে টাঙ্গাইলের মধুপুর থেকে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তবে তার রাজনীতিতে হাতেখড়ি ছাত্র জীবনেই। বঙ্গবন্ধুর ৬ দফা ও ’৬৯ সালে এগার দফা আন্দোলনে তার সক্রিয় অবস্থান ছিল। সে সময় তাকে কারাবরণও করতে হয়।

মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী (’৭২-৭৩) সেশনে তিনি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসংসদের জিএস নির্বাচিত হন। বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক, সভাপতির দায়িত্ব পালন শেষে তখন তিনি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নির্বাহী কমিটির সদস্যও নির্বাচিত হন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধেও সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল রাজ্জাকের। টাঙ্গাইলে মুক্তিযোদ্ধাদের কোম্পানি কমান্ডার ছিলেন তিনি। এক-এগারোর পর শেখ হাসিনা গ্রেপ্তার হলে তার মুক্তির দাবিতে জরুরি অবস্থা চলাকালেই বিভিন্ন কর্মসূচিতে সক্রিয় অংশগ্রহণ করে কর্মীদের আস্থায় আসেন আবদুর রাজ্জাক। ১৯৭১ সালে ময়মনসিংহে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ¯œাতক ও ১৯৭২ সালে ¯œাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন আবদুর রাজ্জাক। ১৯৮৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের পারডু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপরই বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন সংস্থার প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবে ২০০১ সালে অবসরে যান তিনি।

দীপু মনির পদোন্নতির সম্ভাবনা

সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে এই নেত্রী আলোচনায় আসেন শেখ হাসিনার পাশে থেকে। শেখ হাসিনার মুক্তির দাবিতে জরুরি অবস্থা চলাকালেই বিভিন্ন কর্মসূচিতে সক্রিয় অংশগ্রহণ করে কর্মীদের আস্থায় আসেন তিনি। সে সময় তিনি ছিলেন আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চাঁদপুরের একটি আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে জিতে আসেন তিনি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে তার দায়িত্ব পাওয়ার খবর অনেকটাই বিস্মিত করে পরিচিতজনদেরও। মন্ত্রিত্বের পাশাপাশি ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন দীপু মনি। তবে আওয়ামী লীগ দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতায় আসার পর মন্ত্রিসভায় স্থান মেলেনি এই নেত্রীর। তবে দলে আগের মতোই সক্রিয় তিনি।

এবারের জাতীয় সম্মেলনে দলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে যাদের নাম আলোচনায় আছে তাদের একজন দীপু মনি। দলের শীর্ষ নেতারা জানিয়েছেন, সাধারণ সম্পাদক না হলেও দলের সভাপতিম-লীতে তার অন্তর্ভুক্তি হলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। দীপু মনি যে পরিবার থেকে উঠে এসেছেন তার রাজনীতিতে ঐতিহ্য আছে। তার বাবা এম এ ওয়াদুদ ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতাকালীন সদস্য। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিতি ছিল তার।

কপাল খুলতে পারে ফারুক খানের

১৯৯৬ সাল থেকেই গোপালগঞ্জের কাশিয়ানি-মুকসুদপুর আসন থেকে আওয়ামী লীগের টিকিটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে আসছেন ফারুক খান। সংসদ সদস্যের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা। এর আগে ২০০২ সালের জাতীয় সম্মেলনে আওয়ামী লীগের শিল্প বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক হন।

মহাজোট সরকারের আমলে প্রথমে বাণিজ্য মন্ত্রী ও পরে বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন ফারুক খান। বর্তমান মন্ত্রিসভায় না থাকলেও দলের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে ফারুক খানকে। ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীর পক্ষে প্রধান সমন্বয়কের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। এরপর ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের কমিটি গঠনের সমন্বয়কের দায়িত্ব দেওয়া হয় ফারুক খানকে। আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা জানিয়েছেন, আগামী জাতীয় সম্মেলনে দলের সভাপতিম-লীতে স্থান পেতে পারেন এই নেতা।

আওয়ামী লীগে পদ পাচ্ছেন বিসিবি সভাপতি

জন্ম রাজনৈতিক পরিবারে। তবে পুরোদস্তর রাজনীতিবিদ হিসেবে পরিচিতি ছিল না তার। তবে ব্যবসার অঙ্গনে বরাবরই প্রতিষ্ঠিত মুখ ছিলেন নাজমুল হাসান পাপন। বাবা জিল্লুর রহমান রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর ২০০৯ সালে তার ছেড়ে দেওয়া ভৈরব আসনে উপনির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। পরে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও দলের টিকিটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন নাজমুল হাসান।

তবে নিজ দল আওয়ামী লীগে এখনো কোনো পদ নেই তার। তবে এবারের জাতীয় সম্মেলনে সম্পাদকীয় পদে মিষ্টভাষী, সদালাপী ও মিশুক প্রকৃতির এই নেতার অন্তর্ভুক্তি অনেকটাই নিশ্চিত বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি হিসেবেও সাফল্যের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন নাজমুল হাসান। এর আগে ঢাকাভিত্তিক ক্রীড়া সংস্থা আবাহনী লিমিটেডের ক্রিকেট কমিটির সভাপতিও ছিলেন তিনি। দেশের অন্যতম বৃহৎ ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের পরিচালক হিসেবেও দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেছেন নাজমুল হাসান।

সভাপতিমণ্ডলীতে অন্তর্ভুক্তি হতে পারেন যারা

বর্তমান গঠনতন্ত্রে সভাপতিম-লীর সদস্য আছেন ১৫ জন। সম্মেলনের মাধ্যমে এটা বাড়িয়ে ১৭ বা ১৯ করা হতে পারে বলে বলে আলোচনা আছে। যদিও সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ এ পদে আছেন ১২ জন। তাই দলের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরামে নতুন মুখ আসছেন এটা নিশ্চিত। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের সূত্র জানিয়েছে, সভাপতিম-লীর সদস্য হিসেবে যারা বিবেচনায় আছেন তারা হলেন, স্থানীয় সরকারমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন, আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফের নামও আলোচনায় আছে।

উপদেষ্টা পরিষদ থেকেও কেউ কেউ সভাপতিম-লীতে আসতে পারেন। এরা হলেন আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু, মহীউদ্দীন খান আলমগীর অন্যতম। এরা সবাই কখনো না কখনো সভাপতিম-লীতে ছিলেন।

বাড়ছে কার্যনির্বাহী সংসদের আকার

আওয়ামী লীগের সূত্র জানিয়েছে, দলের কার্যনির্বাহী সংসদের আকার ৭৩ থেকে বাড়িয়ে ৮১ বা ৮৩ সদস্যের করার বিষয়ে দলে আলোচনা চলছে। বর্তমানে সম্পাদকম-লীর সদস্য আছেন ৩২ জন। এটা বাড়িয়ে ৩৯ কিংবা ৪২ করা হতে পারে। এর মধ্যে সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ সাতটি থেকে বাড়িয়ে ১০টি করা হতে পারে। কারণ প্রতিটি বিভাগের জন্য আওয়ামী লীগের একজন করে সাংগঠনিক সম্পাদক আছে। ময়মনসিংহ নতুন বিভাগ হয়েছে। কুমিল্লা ও ফরিদপুরকে বিভাগ করার পরিকল্পনা রয়েছে। তাই সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ বৃদ্ধি করতে হবে বলে জানা গেছে।

দলে বর্তমানে তিন জন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রয়েছেন। এ সংখ্যা বাড়িয়ে এবার পাঁচজন করা হতে পারে। তথ্য ও প্রযুক্তি (আইসিটি), নির্বাচনবিষয়ক, প্রশিক্ষণ, মানবাধিকারসহ কয়েকটি সম্পাদকীয় পদ সৃষ্টি করা হতে পারে। প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক, কৃষি ও সমবায়, অর্থ ও পরিকল্পনা পদ ভেঙে আলাদা দুটি পদ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে সূত্রটি। বর্তমান গঠনতন্ত্রে কোষাধ্যক্ষসহ ২৬টি সদস্য পদ থাকলেও বেশ কয়েকটি কমানো হতে পারে। এই পদ থাকতে পারে ২১টি। তবে সব কিছুই নির্ভর করছে সভাপতি শেখ হাসিনার সম্মতির ওপর।

গত ৪ মে জাতীয় সম্মেলন উপলক্ষে গঠিত গঠনতন্ত্র উপ-পরিষদের বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের কমিটির আহ্বায়ক আবদুর রাজ্জাক বলেন, যেহেতু দলীয় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী প্রতি বিভাগে একজন করে সাংগঠনিক সম্পাদক থাকার বিধান রয়েছে, সে ক্ষেত্রে এই পদ বাড়াতে হতে পারে। সভাপতিম-লীর সদস্যসংখ্যা ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের পদের সংখ্যাও বাড়তে পারে বলে জানান তিনি। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবেও পদোন্নতি পেতে পারেন কেউ কেউ। বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান ছাড়াও এ ক্ষেত্রে আলোচনায় আছেন বর্তমান কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাছিম, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।

পরিবর্তন আসছে সম্পাদকমণ্ডলীতেও

গত দুই জাতীয় সম্মেলনে সম্পাদকম-লীর পদে তেমন কোনো পরিবর্তন না হলেও এবারের সম্মেলনে পরিবর্তন আসছে। নতুন পদে নতুন নেতৃত্ব ছাড়াও সম্পাদকম-লীর পদে নতুন মুখ আসতে পারে। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী আওয়ামী লীগের সম্পাদকম-লীর পদ ৩২টি। সম্মেলনের পর এ পদ সংখ্যা বেড়ে হতে পারে ৩৯ কিংবা ৪২টি। এছাড়াও পদোন্নতি পেতে পারেন বেশ কয়েকজন নেতা।

নতুন যারা সম্পাদকম-লীতে স্থান পেতে পারেন এমন আলোচনায় বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, তথ্য ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম, সংসদ সদস্য শেখ ফজলে নুর তাপস, ইসরাফিল আলম, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ। এছাড়াও কার্যনির্বাহী পদ থেকে পদোন্নতি পেতে পারেন এস এম কামাল হোসেন, সুজিত রায় নন্দী ও আমিনুল ইসলাম আমিন। আসন্ন সম্মেলনে কমিটির আকার বাড়ার সম্ভাবনা সম্পর্কে জানতে চাইলে আবদুর রাজ্জাক এই সময়কে বলেন, সময়ের প্রয়োজনে কিছু পদ বাড়াতে হবে। সম্মেলনের আগে গঠনতন্ত্রের সংশোধনের বিষয়ে খসড়া তৈরি করা হবে।

যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, আওয়ামী লীগ এমন একটি রাজনৈতিক সংগঠন এখানে যোগ্যতা-দক্ষতার মূল্যায়ন হয়। নিষ্ঠার সঙ্গে যার যার দায়িত্ব পালন করলে অবশ্যই পদোন্নতি হবে। আবার দায়িত্ব পালনে অবহেলা করলে বাদ পড়তে হবে। সভাপতিম-লীর সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সম্মেলনে সব সময় নতুনরা নেতৃত্বে আসেন, বিদায় নেন পুরনোরা। এটাই দলের শক্তি। এবারও তাই হবে।’-সাপ্তাহিক এই সময়-এর সৌজন্যে।

Print Friendly, PDF & Email

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর