মূর্তি অপসারণ চান সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবীরাও

মূর্তি সরিয়ে ফেলা উচিত -ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ  : ধর্মীয় অনুভূতি আঘাতের সম্ভাবনা- অ্যাডভোকেট আবদুল বাসেত মজুমদার : আশা করি প্রধান বিচারপতি এটা অপসারণ করবেন- অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন
মালেক মল্লিক : সুপ্রিমকোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে মূর্তি (ভাস্কর্য) অপসারণ বিষয়ে একমত পোষণ করেছেন সুপ্রিম কোর্টের অধিকাংশ আইনজীবীরা ও কর্মকর্তারা। তাদের মতে, ৯০ ভাগ মুসলমানের এ দেশে মূর্তি স্থাপন গভীর যড়যন্ত্রের শামিল বলে। জাতীয় ঈদগাহ ময়দানের সামনে এ রকম মূর্তি বসানো ঠিক হয়নি। সুপ্রিম কোর্টের নকশার কোথাও মূর্তি নেই। দ্রæত সময়ের মধ্যে এটা অপসারণ করতে হবে। সরকার সমর্র্থিত আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াত সমর্থিত আইনজীবীরাও ভাস্কর্য অপসারণে একমত। সুপ্রিম কোর্টের সামনে ‘মূর্তি’ স্থাপন সংবিধানের ১২ ও ২৩ অনুচ্ছেদের পরিপন্থী উল্লেখ করে রিটও করেন একজন আইনজীবী। এছাড়া সুপ্রিম কোর্টের বিভিন্ন দপ্তরে কর্মরত কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা ভাস্কর্যের অপসারণ চান। যা শুনানি অপেক্ষায়।
এটা অপসারণে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন হেফাজতে ইসলাম। এদাবির সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে আওয়ামী ওলামা লীগ ও জাতীয় পার্টি (জাপা)। গত ১৫ এপ্রিল বিচারপতিদের বাসভবন উদ্ধোধন কালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও ভাস্কর্যটি সরিয়ে ফেলতে বা ঢেকে দেয়ার ব্যবস্থা করা যায় কিনা তা বিবেচনা করতে প্রধান বিচারপতির প্রতি আহŸান জানান। সর্বশেষ সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবীরা মূতি অপসারণে মানববন্ধন করেন।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্ট সিনিয়র আইনজীবী ও সাবেক আইন মন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ ইনকিলাবকে বলেন, সুপ্রিম কোর্টের সামনে স্থাপিত গ্রীকদের দেবীর আদলে মূর্তি (ভাস্কর্য) নিয়ে বিভিন্ন মহলে বির্তক সৃষ্টি হয়েছে। সুপ্রিমকোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে অন্যত্র সরিরে নিলে বির্তক অবসান হবে। এমন তো না অন্য জায়গা সরানো যাবে না। তিনি বলেন, আমাদের দেশে অধিকাংশ মানুষ মুসলিম। এই ভাস্কর্য মেনে নিতে পারছে না। তিনি বলেন, জাতীয় ঈদগাহের মাঠ সেখানে মুসল্লিরা ঈদের নামায পড়বেন। এইসব বিষয় বিবেচনা করে মূর্তি সরিয়ে ফেলা উচিত। নিশ্চিয় প্রধান বিচারপতি একটা পদক্ষেপ নিবেন বলেও আশা প্রকাশ করেন সাবেক এই মন্ত্রী।
বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদের আহবায়ক আবদুল বাসেত মজুমদার ইনকিলাবকে, আমার দেশটিকে যদিও ধর্মনিপেক্ষ বলা হয়, কিন্তু আমাদের দেশে শতকরা ৯৯ ভাগ মুসলমান। এখানে একটা ধর্মীয় সেন্টিমেন্টাল (অনুভূতি) আছে। এটা স্থাপনের ফলে ধর্মীয় সেন্টিমেন্টাল (অনুভূতি) আঘাতের সম্ভাবনা আছে। তিনি বলেন, আদালতে পাশে আমাদের জাতীয় ঈদগাহের মাঠ; ভাস্কর্যটি স্থাপন করতে সামগ্রীক দিক খেয়াল করা উচিত ছিল। এটা নিয়ে এক ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে পারে। ভাস্কর্যটি অপসারণ করার জোর দাবি জানাচ্ছি।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেস্টা অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন ইনকিলাবকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী ও আইনমন্ত্রী ভাস্কর্য সরানো নিয়ে প্রধান বিচারপতি সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিবেন বলে কথা বলেছেন। তাই আশা করি দ্রæত সময়ের মধ্যে এটা সরানো হবে। আইনজীবী নেতা বলেন, প্রধান বিচারপতি নিজেস্ব চিন্তা- চেতনা থেকে এটা স্থাপন করেন; বারের সঙ্গে কোন আলাপ আলোচনা করেনি। আশা করি, সরকার প্রধানে কথা মতো প্রধান বিচারপতি এটা অপসারণ করবেন। তবে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের পক্ষে কোন কর্মকর্তা এ বিষয়ে বক্তব্য দিতে রাজি হয়নি।
গত বুধবার মূতি অপসারণের দাবিতে মানববন্ধন করে মূর্তি সরাতে প্রধান বিচারপতি প্রতি আহŸান জানান। বক্তারা বলেন, এরকম এটা বসানো যড়যন্ত্রমূলক। ১৯৪৭-৪৮ সালে সুপ্রিম কোর্ট স্থাপনের পর থেকে এখানে কোনো ভাস্কর্য নির্মাণ করা হয়নি। প্রায় অর্ধশত আইনজীবীরা মানববন্ধনে অংশ নেন। এ কর্মসূচির প্রতি একমত পোষণ করেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সমর্থিত আইনজীবীরা। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি ও জামায়াত পন্থীরাও ওই মূর্তি অপসারণে মত দেন। তাদের মধ্যে একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সুপ্রিম কোর্ট একটি পবিত্র স্থান, কিন্তু হঠাৎ করে কেন স্থাপন হলো। এটা নিয়ে আমার নয় সকল আইনজীবীর প্রশ্ন। সুপ্রিম  কোর্টের একজন কর্মচারী নাম না প্রকাশ করার শর্তে বলেন, এখানে স্থাপন করা উচিত হয়নি।
গতবছর ১৮ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্টে মূলভবনের সামনে ফোয়ারার মধ্যে স্থাপন করা হয় মূর্তিটি। এটি স্থাপনের পর থেকে বেশ কয়েকটি সংগঠন প্রধান বিচারপতি বরাবর স্মারকলিপি ও মানববন্ধন করে অপসারণে দাবি জানায়; অন্যথায় বৃহত্তর আন্দোলনেরও হুমকি দেয়।
গত ১১ এপ্রিল হেফাজতের আমির শাহ আহমদ শফীর নেতৃত্বাধীন একদল ওলামা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতে আদালত প্রাঙ্গণের স্থাপিত মূর্তি দ্রæত সরিয়ে ফেলার দাবি জানলে প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি দেখবেন বলে তাদের আশ্বস্ত করেন। এরপর গত ২৫ এপ্রিল আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, এখানে যখন ভাস্কর্য বসানো হয়, তখন সেটা আমাদের জানানো হয়নি; সরানো হবে কিনা, সে বিষয়েও সিদ্ধান্ত প্রধান বিচারপতিই নেবেন।
এর আগে গত ৯ এপ্রিল মূর্তি অপসারণের নির্দেশনা চেয়ে রিট আবেদন করে আরিফুর রহমান নামে এক ব্যক্তি। রিটে এটা অপসারণে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না, তা জানতে রুল জারির আর্জি জানানো হয়েছে। রিটে ধর্ম সচিব, আইন সচিব, গণপূর্ত সচিব, সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল ও দুই রেজিস্ট্রার, গণপূর্ত বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী ও নির্বাহী প্রকৌশলী এবং আইনজীবী সমিতির সম্পাদককে বিবাদী করা হয়। আবেদনে সুপ্রিম কোর্টের সামনে ‘মূর্তি’ স্থাপন সংবিধানের ১২ ও ২৩ অনুচ্ছেদের পরিপন্থী।
হেফাজতের বিবৃতি: পবিত্র রমজান মাস শুরু হওয়ার আগেই অপসারণের দাবি জানিয়েছেন হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরী ও সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদী। অন্যথায় তাঁরা রাস্তায় নেমে আন্দোলন হুমকি। গত বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক যুক্ত বিবৃতিতে তাঁরা এই দাবি জানান। প্রধান বিচারপতির কাছে দাবি জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়,তৌহিদি জনতার চাওয়াকে গুরুত্ব দিন এবং এই ইস্যুতে দেশে  যেন বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি না হয়, সে জন্য মূর্তি অপসারণে দ্রæত পদক্ষেপ নিন। এদিকে কাল (রোববার) প্রধান মন্ত্রী বরবার মূর্তি অপসারণের দাবিতে স্মারকলিপি প্রদান করবে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস। এছাড়াও আগামী ২৫ মে প্রধান বিচারপতি বরাবর স্মারকলিপি প্রধান করবেন বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর