৫০টা খুনের কথা মনে আছে, তারপর আর হিসাব রাখিনি

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ দিল্লি পুলিশ দাবি করছে যে তারা এমন এক সিরিয়াল কিলারকে গ্রেপ্তার করেছে, যিনি অন্তত ৫০টা খুন করেছেন বলে নিজেই স্বীকার করেছেন। অপহরণ করে খুন করার পরে একটি খালে মৃতদেহগুলো ফেলে দিতেন তিনি, যাতে কুমীররা সেগুলো খেয়ে ফেলে – আর তার অপরাধের প্রমাণও লোপাট হয়ে যায়।

আদতে এক পাশ করা আয়ুর্বেদ চিকিৎসক ৬২ বছর বয়সী ওই ব্যক্তির নাম দেভেন্দার শর্মা।

মঙ্গলবার রাতে দিল্লির উপকন্ঠে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে পুলিশ জানাচ্ছে।

জেরায় দেভেন্দার শর্মা জানিয়েছেন এতগুলো খুন করেছেন তিনি, যে ৫০ এর পরে আর হিসাব রাখেননি। খুন ছাড়াও কিডনি পাচার এবং আরও নানা জালিয়াতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন ওই ব্যক্তি, এমনটাই দাবি দিল্লি পুলিশের।

দিল্লির ক্রাইম ব্রাঞ্চের ডেপুটি কমিশনার রাকেশ পাওয়েরিয়া বলছেন, আমাদের ধারণা একশোরও বেশি খুন করে থাকতে পারে এই ব্যক্তি। আমরা উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান, হরিয়ানা আর দিল্লির পুরনো তথ্য খুঁজে বার করার চেষ্টা করছি।

বেশ কয়েকটি খুন আর অপহরণ আর একশোরও বেশি কিডনি পাচারের মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়ে রাজস্থানে যাবজ্জীবন কারাদন্ড ভোগ করছিলেন দেভিন্দার শর্মা।

ষোলো বছর কারাবাসের পরে জানুয়ারি মাসে তাকে ২০ দিনের জন্য প্যারোলে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল এবং তারপর থেকেই তিনি নিরুদ্দেশ হয়ে যান।

প্যারোল ফাঁকি দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার জন্যই তাকে খুঁজছিল দিল্লি পুলিশ।

তারা জানতে পারে যে প্রথমে তিনি দিল্লিতে এক আত্মীয়ের বাড়িতে ছিলেন। তারপর তিনি বাপরোলায় চলে যায়।

সেখানে এক দূর সম্পর্কের আত্মীয়াকে বিয়ে করে জমি বাড়ির দালালি করছিলেন এবং দিল্লির প্রাণকেন্দ্র কনট প্লেসের একটি বাড়ি বিক্রি করার চেষ্টা করছিলেন জয়পুরের এক ব্যবসায়ীর কাছে।

এইসব সূত্রই দিল্লি পুলিশের কাছে এসে পৌঁছায় আর তার বাসস্থানে তল্লাশি চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে ডিসিপি ক্রাইম পাওয়েরিয়া জানিয়েছেন।

একজন চিকিৎসক থেকে সাংঘাতিক খুনী হয়ে ওঠার যে বিবরণ দেভেন্দার শর্মা জেরার সময়ে পুলিশকে দিয়েছেন, তা খুবই অদ্ভুত। বিহার থেকে ডাক্তারি পাশ করে তিনি রাজস্থান চলে যান আশির দশকের মাঝামাঝি।

নব্বইয়ের দশকের গোড়ায় তিনি একটা রান্নার গ্যাসের এজেন্সি নিতে চেষ্টা করেন। এর জন্য তার ১১ লক্ষ টাকা খরচ হয়ে গেলেও তিনি ধোঁকা খান। নেমে আসে আর্থিক অনটন।

‘তারপরেই ধীরে ধীরে তার অপরাধ জীবনের শুরু। তিনি জাল গ্যাস এজেন্সি খোলেন উত্তরপ্রদেশের আলিগড়ে। আবার ওদিকে রাজস্থানে কিডনি পাচার চক্রের সঙ্গেও যুক্ত হয়ে পড়েন। ১২৫টি কিডনি তিনি পাচার করেছেন, যার প্রতিটার জন্য ৫ থেকে ৭ লাখ টাকা পেতেন। ২০০১ সালে জালিয়াতির জন্য ধরাও পড়েন উত্তরপ্রদেশে,’ জানিয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তারা।

এরপরেই তিনি একের পর এক খুন করতে শুরু করেন। তাদের খুন করার কায়দাটা ছিল অভিনব।

তিনি এবং সঙ্গীসাথীরা একটি গাড়ি ভাড়া করতেন উত্তরপ্রদেশের আলিগড়ে যাওয়ার জন্য। চালককে একটা নির্জন জায়গায় গিয়ে খুন করে কাশগঞ্জের হাজারা খালে ফেলে দেওয়া হত বলে পুলিশ জেরা থেকে জেনেছে।

ওই খালটিতে প্রচুর কুমীর রয়েছে। মৃতদেহ সেগুলোই খেয়ে ফেলত। তাই দেহ আর খুঁজে পাওয়া যেত না। একই ভাবে রান্নার গ্যাস ভর্তি ট্রাকও ছিনতাই করে চালককে হত্যা করে মৃতদেহ ফেলে দেওয়া হত ওই খালে।

পাওয়েরিয়া জানিয়েছেন তারা রাজস্থান পুলিশকে জানিয়েছেন যে দেভিন্দার শর্মাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি যেহেতু ওই রাজ্যেই বন্দী ছিলেন, তাই তারাই ধৃতকে নিয়ে যাবেন এখন। খবর: বিবিসি বাংলা।

Print Friendly, PDF & Email

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর