সেই দানবীর নাজিম প্রধানমন্ত্রীর উপহারের পাকা ঘরে উঠছেন

 বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ মানবিকতার মহৎ দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী শেরপুরের ঝিনাইগাতীর সেই দানবীর নাজিম উদ্দিনের (৮০) জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় ঘর তৈরির কাজ শেষ হয়েছে।

রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ওই নবনির্মিত বসতঘর আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করে ঘরের চাবি নাজিম উদ্দিনের কাছে হস্তান্তর করবেন শেরপুরের জেলা প্রশাসক আনার কলি মাহবুব।

ঝিনাইগাতী উপজেলার কাংশা ইউনিয়নের নিভৃত পল্লী গারো পাহাড়সংলগ্ন গান্ধীগাঁও গ্রামে একখণ্ড জমির ওপর নির্মাণাধীন সেই ঘরের পুরোটা ইট দিয়ে গেঁথে তোলা হয়েছে। টিনশেড হাফ বিল্ডিং ওই ঘরে থাকছে দু’টি কক্ষ।

ঘরের ওপরে রঙিন টিনের ছাউনি। দু’পাশে লোহার গ্রিল দিয়ে বারান্দা করা হয়েছে। রয়েছে রান্নাঘর, তার পাশে গোসলখানা ও শৌচাগার। আর এটিই নিজের শেষ সম্বলটুকু দান করে দেয়া নাজিম উদ্দিনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর উপহার।

এছাড়া জেলা প্রশাসক আনার কলি মাহবুব নাজিম উদ্দিনকে গান্ধীগাঁও বাজারে একটি দোকানঘর করে দিয়ে ব্যবসা করার জন্য নগদ ২০ হাজার টাকাও দিয়েছেন। ওই বসতঘর দেখতে এখন প্রায় প্রতিদিনই আশপাশের এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন ভিড় করছেন।

করোনা ভাইরাসজনিত পরিস্থিতিতে লকডাউনে সারা দেশের মতো সীমান্তবর্তী ঝিনাইগাতীসহ শেরপুরে কর্মহীন হয়ে পড়া হতদরিদ্র ও অসহায় মানুষের জীবনে দুর্ভোগ-কষ্ট নেমে আসে। এ সময় তাদের সহায়তায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সহায়তা তহবিলে গত ২১ এপ্রিল নিজের ঘর করার জন্য খুব কষ্টে জমানো ১০ হাজার টাকা দান করেন ভিক্ষুক নাজিম উদ্দিন।

গান্ধীগাঁও গ্রামের মৃত ইয়ার উদ্দিনের ছেলে নাজিম উদ্দিনের দানের ওই ঘটনা সারা দেশে তোলপাড় সৃষ্টি করে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বয়ং মগ্ধ হন নাজিম উদ্দিনের শেষ সম্বল দান করে দেয়ার ঘটনায়।

ওই সময় তার ঘরে খাবারও ছিল না। কিন্তু সেই মানুষটা নিজের জমানো শেষ সম্বল ১০ হাজার টাকা দান করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে ওই ভিক্ষুকের মহানুভবতার কথা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেন।

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে শেরপুরের জেলা প্রশাসক আনার কলি মাহবুব ঘোষণা দেন নাজিম উদ্দিনকে পাকাঘর করে দেয়ার পাশাপাশি যাবতীয় সরকারি সুযোগ সুবিধা দেয়ার।

প্রধানমন্ত্রীর সেই নির্দেশনা মোতাবেক ২২ এপ্রিল নাজিম উদ্দিনকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সভাকক্ষ রজনীগন্ধায় সংবর্ধনা দেয়ার পাশাপাশি তার হাতে তুলে দেয়া হয় নগদ ২০ হাজার টাকা।

এর পরপরই তার বাড়ি নির্মাণের জন্য জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বাছাই করা হয় সরকারি খাস খতিয়ানের এক খণ্ড জমি।

পাকা ঘর পেয়ে সেই দানবীর ভিক্ষুক নাজিম উদ্দিন নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন, ‘৮০ বছর বয়স অইলো। আইজ পর্যন্ত পাক্কা গরে থাহি নাই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমারে পাক্কা ঘর কইরা দিতাছে। স্বপ্নেও ভাবি নাই আমার মত ভিখারি দালান ঘরে থাকমু।’

তিনি বলেন, খুব ভাল লাগতাছে। আল্লাহ মাবুদ শেখ হাসিনারে বাঁচায়া রাখুক, সুখি করুক। আর দেশরে করোনামুক্ত করুক। এইডাই আমার চাওয়া।

এ ব্যাপারে ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুবেল মাহমুদ বলেন, নাজিম উদ্দিন ঘর তৈরি করার জন্য অনেক কষ্টে ১০ হাজার টাকা সঞ্চয় করেছিলেন। সেই টাকা তিনি সরকারি করোনা তহবিলে দান করে অনন্য নজির সৃষ্টি করেন, যা প্রধানমন্ত্রীর নজরে আসে।

এর প্রেক্ষিতেই তিনি বিরল সেই দৃষ্টান্তের স্বীকৃতিস্বরূপ জায়গাসহ থাকার ঘর নির্মাণ করে দেয়ার নির্দেশ দেন। সেই নির্দেশনা মোতাবেক এক খণ্ড জায়গাতে টিনশেড হাফ বিল্ডিং নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। নাজিম উদ্দিন যে ঘরটিতে এতদিন ছিলেন সেটি মূলত সরকারের খাস জমিতে ছিল। এটি ভিক্ষুক নাজিম উদ্দিনও এতদিন জানতেন না।

সরকারের এই খাস জমিটিও ভিক্ষুক নাজিম উদ্দিনের নামে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। নাজিম উদ্দিন যে ঘরে থাকতেন সেই জমি কিছুটা সম্প্রসারণ করে ১৫ শতাংশ জমি তার নামে বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। নাজিম উদ্দিনকে যাতে আর কখনো ভিক্ষে করতে না হয় সেজন্য তাকে একটি দোকানও করে দিয়েছেন জেলা প্রশাসক।

Print Friendly, PDF & Email

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর