জীবন খেয়া’ ভেসে ভেসেই চিকিৎসা দেবে বিনামূল্যে

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ প্রথমবারের মতো চিকিৎসা সেবার ব্রত নিয়ে বঙ্গোপসাগরে জাহাজ ভাসাতে চলেছে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন। স্বেচ্ছাসেবী এই সংগঠন ও বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের যৌথ উদ্যোগে খুলনায় চালু হতে চলেছে ভাসমান হাসপাতাল ‘জীবন খেয়া’।

বন্যার পানি এবং ঘূর্ণিঝড়ে চরাঞ্চলের মানুষেরা মূহ্যমান। নিত্যদিন তারা পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। তাদের কাছে ভালো চিকিৎসা পৌঁছে দেয়ার প্রয়াসেই চালু হতে যাচ্ছে বিদ্যানন্দের এই ভাসমান হাসপাতাল। স্বেচ্ছাসেবী এই সংগঠনটি বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের সহায়তায় এই কার্যক্রমের রূপরেখা প্রস্তুত করছেন।

জাহাজের ছাদ

জাহাজের ছাদ নদী অববাহিকা, চরাঞ্চল ও সুন্দরবনের মতো দুর্গম এলাকায় দরিদ্রপীড়িত মানুষের বসবাস। তাদের কাছে ভালো চিকিৎসা এমনকি ওষুধ পর্যন্ত পৌঁছায় না। এ কারণেই হতদরিদ্রদের চিকিৎসায় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন ভাসমান হাসপাতাল প্রস্তুত করছে। নিজস্ব চিকিৎসক ও ওষুধ দিয়েই তারা দরিদ্র এসব জনগোষ্ঠীর চিকিৎসা চালাবে। রোগীরা নয় বরং ‘জীবন খেয়া’ ছুটবে রোগীর বাড়িতে।

বিদ্যানন্দের কর্মকর্তারা জানান, চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের সঙ্গে যৌথভাবে ১০০ শয্যার করোনা হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার পর ‘জীবন খেয়া’ হতে যাচ্ছে সংগঠনটির আরেকটি প্রয়াস। বিদ্যানন্দের প্রচেষ্টায় এবার সুন্দরবনের হতদরিদ্র মানুষদের চিকিৎসা সেবা পাবে। আগামী সপ্তাহ থেকে ‘জীবন খেয়া’ মানুষের জীবন বাঁচাতে ছুটবে বঙ্গোপসাগরে। নদী উপকূলের বাসিন্দারাই পাবেন বিনামূল্যের এই চিকিৎসা সেবা।

জাহাজের সুসজ্জিত কেবিন

জাহাজের সুসজ্জিত কেবিন বিদ্যানন্দের এক স্বেচ্ছাসেবক সালমান খান ডেইলি বাংলাদেশকে বলেন, আমাদের মূল উদ্দেশ্য হলো চরাঞ্চলের মানুষদের কাছে চিকিৎসা সেবা পৌঁছানো। বিনামূল্যে তাদেরকে সঠিক চিকিৎসা সেবা দেয়াই আমাদের এই কার্যক্রমের মূল লক্ষ্য। বর্তমানে খুলনায় আমাদের একটি দল বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের সহায়তায় কাজ করছে। তারা ভাসমান এই হাসপাতাল তৈরির কাজে নিযুক্ত রয়েছে। মূলত আমরা খুলনার রূপসা নদীতে থাকা একটি পর্যটন তরীকেই হাসপাতালে রূপান্তর করার চেষ্টা চালাচ্ছি।

কোস্টগার্ডের সহায়তায় ব্যাপকভাবে কাজ চলছে এই সেবা তরীর। জাহাজটিতে ২১টি কেবিন রয়েছে। নিউ রেইনবো ট্যুর নামে একটি পর্যটন প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন এই জাহাজটি আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে হাসপাতাল হিসেবে তৈরি হয়ে যাবে। প্রাথমিকভাবে হাসপাতালটির রুট প্ল্যান কী হবে তা কোস্টগার্ড নির্ধারণ করছে বলে জানান সালমান খান।

জীবন খেয়া

জীবন খেয় কীভাবে এই ভাসমান ‘জীবন খেয়া’ চিকিৎসা সেবা দেবে? এই বিষয়ে সালমান খান বলেন, বর্তমানে জাহাজটিতে রঙের কাজ চলেছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে জাহাজটি জীবন খেয়ায় রূপান্তরিত হবে। এরপর থেকে ভাসমান এই হাসপাতালে চিকিৎসক, নার্সসহ মোট আট জন স্টাফ থাকবে। জীবন খেয়া চলবে সুন্দরবনের দিকে। আগে থেকে কোস্টগার্ড উপকূলের জনগণকে জীবন খেয়ার আগমন বার্তা জানিয়ে দেবে। বিদ্যানন্দের চিকিৎসকসহ স্টাফরা আউটডোরেই রোগীদেরকে দেখবেন এবং পথ্যের যোগন দেবে। এভাবে আগামী দুইমাস এই সেবা তরীর কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।

চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত ‘জীবন খেয়া’ নামক জাহাজের নিরাপত্তার পুরো দায়িত্বে থাকবে কোস্টগার্ড। বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান কিশোর কুমার দাশ এই ভাসমান হাসাপাতাল প্রতিষ্ঠার পেছনের কারণ উল্লেখ করে বলেন, মানবতার সেবায় সংগঠনটি নানা সৃষ্টিশীল ভাবনা ভেবে থাকে। সব সময় আমরা কিছু উদাহরণ তৈরি করতে চেয়েছি। এটিও তার অংশ।

রোগীর চিকিৎসা দিতে প্রস্তুত হচ্ছে জাহাজটিরোগীর চিকিৎসা দিতে প্রস্তুত হচ্ছে জাহাজটি নদীমাতৃক ব-দ্বীপ বাংলাদেশে ঝড়, বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করেই মানুষকে বাঁচতে হয়। দীর্ঘস্থায়ী বন্যার কারণে উপকূলবাসীদের নাস্তানাবুদ হতে হয়। এসব মানুষেরা ঝড়-বৃষ্টি, বন্যাসহ বিভিন্ন দুযোর্গ মোকাবিলা করে বেঁচে থাকার চেষ্টা চালাচ্ছেন। তবে তারা বর্তমান এই করোনা মহামারিকালে অসুখ-বিসুখে জর্জরিত হলেও সামান্য চিকিৎসা সেবা মিলছে না। এই মানুষগুলোকে কিছুটা স্বস্তি দেয়ার জন্যই এমন উদ্যোগ নিয়েছে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন।

স্বাস্থ্য সেবায় সরকারি নানা উদ্যোগের পাশাপাশি বিদ্যানন্দ সবসময় ভালো উদাহরণ নিয়ে সামনে এসেছে। ঠিক তেমনই এক উদাহরণ হলো এই জীবন খেয়া। যাতায়াত অসুবিধার কারণে উপকূল ও নদী অববাহিকায় বসবাসরত মানুষ দূরের স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে যেতে পারে না। এ কারণেই বিদ্যানন্দের ‘জীবন খেয়া’ নোঙর ফেলে সেসব উপকূলবাসীদের আঙিনায় গিয়ে চিকিৎসা সেবা দেবে।

জাহাজের বারান্দাজাহাজের বারান্দা বাংলাদেশের জনগণের অর্থে পরিচালিত বিদ্যানন্দ সবসময়ই জনগণের কাছে সহায়তার আহ্বান জানিয়েছে। ‘জীবন খেয়া’ চালু করতেও সবাইকে অর্থ, ওষুধ বা অন্য যেকোনো কিছু নিয়ে এগিয়ে আসতে আহ্বান জানিয়েছে এই সংগঠনটি। এরই মধ্যে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন তাদের ফেসবুক পেইজে বিভিন্ন ওষুধের একটি তালিকা দিয়েছে। দেশের ওষুধ কোম্পানিগুলো কিংবা দাতাদেরকে এগিয়ে আসার জন্য আহ্বান জানিয়েছে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন।
Print Friendly, PDF & Email

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর