ইসলামে হিজরি সনের সূচনা ও প্রভাব

 বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ ইসলামে মুমিন মুসলমানের জীবনে হিজরি সন বা চন্দ্রবর্ষের প্রভাব ব্যাপক। এ সনের গুরুত্বও অত্যধিক। বিশেষ করে মুসলমানের জন্য ঈমানের অন্যতম রোকন ও ইবাদত রোজা, ঈদ, হজ ও কোরবানি ও জাকাত- এ হিজরি তারিখের ওপর নির্ভরশীল। চন্দ্র বছরের তারিখ ও ক্ষণ গণনা করেই এ ইবাদতের সময় নির্ধারণ করতে হয়।

শুধু তা-ই নয়, কোনো নারীর স্বামীর মৃত্যু হলে কিংবা কেউ তালাকপ্রাপ্ত হলে চাঁদের সময় হিসেব করেই তাদের ইদ্দত পালন করতে হয়। সন্তান-সন্তুতির জন্ম ও দুধ পানের হিসাবও চন্দ্র মাসের হিসাব অনুযায়ী ধরতে হয়।

বাংলাদেশে হিজরি তারিখ ব্যবহার হয় সীমিতভাবে। যদিও হিজরি সনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে মুসলমানদের ইবাদত-বন্দেগির নানা বিষয়।

ধর্মীয় বিধি-নিষেধের কারণে হিজরি সনকে কেন্দ্র করে তেমন কোনো আয়োজন পরিলক্ষিত হয় না- এটা সত্য। কিন্তু হিজরি তারিখ ব্যবহারের অনীহা কোনোভাবেই কাম্য নয়।

আমরা জানি, হজরত ঈসা আলাইহিস সালামের আসমানে গমনের পর থেকে খ্রিস্টাব্দ সাল গণনা করা হয়। আর শেষ নবী হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মক্কা থেকে মদিনায় হিজরতের দিন অর্থাৎ ৬২২ খ্রিস্টাব্দ থেকে হিজরি সন গণনা করা হয়। হিজরি সন নবী করিম (সা.) এর সময় থেকে প্রচলিত ছিল না। তার ইন্তেকালের সাত বছর পর দ্বিতীয় খলিফা হজরত ওমর (রা.) এর শাসনামলে ১৭ হিজরি থেকে হিজরি সনের প্রচলন করা হয়।

হজরত ওমর (রা.) অর্ধ পৃথিবীর শাসনকর্তা ছিলেন। শাসন পরিচালনার ক্ষেত্রে বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় ফরমান জারি, শাসনাধীন এলাকায় চিঠিপত্র প্রেরণসহ নানাক্ষেত্রে প্রশাসনিক জটিলতা এড়াতে তিনি সমসাময়িক সাহাবাদের পরামর্শক্রমে হিজরি সন প্রবর্তনের সিদ্ধান্ত নেন।

মুসলিম মানসে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে হিজরি সন। কারণ, মুসলমানদের সব ইবাদত-বন্দেগির সঙ্গে হিজরি সনের সম্পৃক্ততা রয়েছে। তাই বিশ্বের মুসলমানরা হিজরি সনকে অন্য সালের তুলনায় অনন্য মর্যাদায় সমাসীন করে থাকেন।

ইসলামি চিন্তাবিদরা মনে করেন, সত্যিকারের আত্মসংশোধন ও আত্মউন্নয়ন ছাড়া নববর্ষ উদযাপন, স্মরণ ও সম্মান প্রদর্শন সার্থক নয়। বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও চিন্তার বটে। হিজরি সন মানবাত্মাকে পরিশীলিত ও সংস্কারের মহাসুযোগ বয়ে আনে। এই সুযোগ হলো- আল্লাহ তায়ালার স্মরণের মাধ্যমে হৃদয়কে সজীব করার সুযোগ। তাই এই সুযোগকে সর্বোচ্চমাত্রায় কাজে লাগানো উচিত।

হিজরি সনের প্রথম মাস মহররম। এ মাসে পৃথিবীর ইতিহাসের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। মহররম মাসের ১০ তারিখেই কেয়ামত সংঘটিত হবে। তাই মহররম মাসকে উপলক্ষ করে আল্লাহ তায়ালার সামনে মানুষের দাসত্ব ও বিনম্রতা প্রকাশ করা বেশি জরুরি।

Print Friendly, PDF & Email

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর