আগাম ব্যবস্থায় নিয়ন্ত্রণে ডেঙ্গু

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ এবার ভরা মৌসুমেও রাজধানীতে ডেঙ্গুর প্রকোপ কম। গত বছর এপ্রিল থেকে আগস্ট পর্যন্ত ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা লাখ ছাড়ালেও এবার সেই সংখ্যা পাঁচশও ছাড়ায়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এডিসের লার্ভা নিয়ন্ত্রণে দুই সিটি করপোরেশন আগাম ব্যবস্থা নেয়ার সুফল এটি। তবে দুই সিটির এখনো ২৫টি ওয়ার্ড ডেঙ্গুর মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

গত বছর ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাবের পর এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে নানা প্রকল্প, উদ্যোগ ও পরিকল্পনার কথা বলা হয়েছিল। এজন্য কলকাতা ও সিঙ্গাপুরের অভিজ্ঞতাও নিয়েছিল দুই সিটি করপোরেশন। পাশাপাশি ডেঙ্গু প্রতিরোধে আলাদা বিভাগ চালুর ঘোষণা দেয়া হয়। কিন্তু বছর পেরিয়ে গেলেও তার সিংহভাগই বাস্তবায়ন হয়নি। তবে এ বছর দুই সিটি করপোরেশন বরাদ্দ বাড়িয়ে প্রথম থেকেই মশক নিধন কাজে গুরুত্ব দিয়েছে। সূত্র জানায়, দুই ধরনের পরিকল্পনা দিয়ে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে মাঠে নেমেছে ঢাকার সিটি করপোরেশন। প্রথমত বছরব্যাপী, দ্বিতীয়ত দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। এই পরিকল্পনাটি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া হয়েছে। পরিকল্পনাটি যাচাই-বাছাই শেষ পর্যায়ে। এরই মধ্যে মন্ত্রণালয় ও মেয়রের নেতৃত্বে পাঁচটি বৈঠকে এ ব্যাপারে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়কে দিকনির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া বছরব্যাপী কর্মপরিকল্পনার অংশ হিসেবে প্রতিদিন সকাল-বিকাল ৪ ঘণ্টা করে ওষুধ ছিটানো হচ্ছে। পাশাপাশি বরাদ্দ, যন্ত্রপাতি এবং জনবল বাড়িয়ে বিশেষ পরিচ্ছন্নতা অভিযান বা চিরুনি অভিযানও চলছে।

বছরব্যাপী পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বিশেষ অভিযান চালাচ্ছে ডিএনসিসি। গত ৮ আগস্ট থেকে তৃতীয় দফা অভিযান চালাচ্ছে ডিএনসিসি। এ পর্যায়ে ১০ দিনের অভিযানে ১ লাখ ৩০ হাজার ৯৭৪টি বাড়ি, স্থাপনা, নির্মাণাধীন ভবন ইত্যাদি পরিদর্শন করে মোট ৬৯১টিতে এডিসের লার্ভা এবং ৭৭ হাজার ৩৩২টিতে এডিস মশা বংশবিস্তার উপযোগী পরিবেশ পাওয়া যায়। মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে মোট ১০ লাখ ৪ হাজার ৩০০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।
এদিকে, রোগীদের সুরক্ষা ও ডেঙ্গু ঝুঁকি থেকে মুক্তি দিতে রাজধানীর হাসপাতালগুলোতেও ডিএনসিসির বিশেষ ডেঙ্গু অভিযান চলমান রয়েছে। এ ছাড়াও নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও হাসপাতালগুলোতে ডিএনসিসির উদ্যোগে বিনামূল্যে ডেঙ্গু পরীক্ষা করানো হয়েছে।

জানতে চাইলে ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মোমিনুর রহমান মামুন ভোরের কাগজকে বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী জানুয়ারি থেকে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা কমে আসছে। এরপরও আমরা বসে নেই। গত মে থেকে মশা নিধনে চিরুনি অভিযান পরিচালনা করেছি। প্রতি ওয়ার্ডকে ১০ ভাগে ভাগ করে এই অভিযান পরিচালনা করা হয়। তৃতীয় মেয়াদের চিরুনি অভিযান শেষে পর্যালোচনা চলছে। খুব শিগগিরই ফের অভিযান শুরু হবে। ঝুঁকিপূর্ণ ওয়ার্ডগুলোকে বিশেষ নজরে রাখা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

অন্যদিকে, দেরিতে হলেও গত ১৬ আগস্ট থেকে প্রথম দফায় মশক নিধন অভিযান শুরু করেছে ডিএসসিসি। গত ২০ আগস্ট অভিযানের ৫ম দিন শেষে ৩৭০টি স্থাপনায় পরিদর্শন শেষে ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা জরিমানা ও ২০টি মামলা করা হয়। এ ছাড়াও ডেঙ্গু প্রতিরোধ ও মশা নিধনে নাগরিক সংশ্লিষ্টতা বাড়াতে অ্যাম্বাসাডর নিয়োগ দিয়েছে ডিএসসিসি। যেহেতু অ্যাম্বাসাডর তার এলাকার প্রতিনিধিত্ব করেন তাই তাদের কাজ হচ্ছে তার এলাকায় কোথায় কী ধরনের অসুবিধা আছে, কোথায় মশা মারার ওষুধ ছিটাতে হবে বা ওষুধ ঠিকমতো ছিটানো হচ্ছে কি না – তা কাউন্সিলরের সঙ্গে পরামর্শ করে ব্যবস্থা করা।

জাতীয় ম্যালেরিয়া ও এডিসবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির আওতায় জরিপ চালিয়ে ২ সিটির ২৫টি ওয়ার্ডকে ডেঙ্গুর ঝুঁকিযুক্ত এলাকা মনে করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এরমধ্যে উত্তরে ৯টি ও দক্ষিণে ১৬ ওয়ার্ড রয়েছে। এসব ওয়ার্ডে এডিস মশার লার্ভার ঘনত্বের সূচক ব্রুটো ইনডেক্স ২০ এর বেশি। ঢাকা উত্তরের ১০, ১১, ১৭, ১৯, ২১, ২৩, ২৪, ২৯, ৩২ ওয়ার্ডে এবং দক্ষিণের ২, ৪, ৮, ৯, ১২, ১৩, ১৪, ১৫, ১৬, ১৮, ২৫, ৩৪, ৪০, ৪১, ৪৫ এবং ৫১ নম্বর ওয়ার্ডে এডিস মশার উপস্থিতি বেশি পাওয়া গেছে।

জানতে চাইলে ডিএসসিসির উপপ্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, করোনা চলাকালেও ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে প্রথম থেকেই দক্ষিণ সিটি গুরুত্ব নিয়ে কাজ করছে। যার ফলে গতবারের তুলনায় এবার ডেঙ্গুর প্রকোপ অনেক কম। তিনি বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জরিপ অনুযায়ী যে ১৬টি ঝুঁকিপূর্ণ ওয়ার্ড শনাক্ত করা হয়েছে সেসব এলাকাকে অধিক মশা নিধনে অধিক গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। এ ছাড়াও চিরুনি অভিযান চলবে।

Print Friendly, PDF & Email

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর