সুন্দরবনে শুটকীর লক্ষ্যমাত্রা ২ কোটি ৮০ লাখ নির্ধারণ

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ বৃটিশ আমল থেকে সমুদ্রতটের জেলেরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মৎস্য আহরণ করলেও নানা প্রতিকূলতায় ভাগ্যের চাকা ঘোরাতে পারেনি। বরং দিন দিন তাদের অবস্থার অবনতিই ঘটেছে। ক্রমবর্ধমান ক্ষতির মুখে ইতিমধ্যে পুঁজি ও জাল-নৌকা হারিয়ে অনেকেই পেশা হারিয়েছেন। আবার অনেকে চড়া হারে মহাজনদের সুদের মাশুল গুণে এ পেশায় টিকে থাকার জন্য কঠোর সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন।  

সংগ্রামী এসব জেলেরা আবারও নামছেন সমুদ্রে। বৃহস্পতিবার (৫ নভেম্বর) থেকে প্রায় ১০ হাজার জেলে এবার সমুদ্র যাত্রা করবে। তারা সামুদ্রিক সম্পদ আহরণ করে দুবলাসহ মোট সাতটি চরে শুটকী তৈরী করবেন। আর এই শুটকী খাত থেকে দুই কোটি ৮০ লাখ টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে বনবিভাগ। পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় বনকর্মকর্তা (ডিএফও) মুাম্মদ বেলায়েত হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন- বঙ্গোপসাগর সংলগ্ন দুবলা, শেলা, নারিকেল বাড়িয়া, আলোর কোল, অফিস কিল্লা, মাঝির কিল্লা ও মেহের আলীর চরে শুটকী প্রক্রিয়ার জন্য এবার ৯৫০টি জেলেঘরের জন্য অনুমতি দিয়েছেন তারা। ১৫ জন বহাদ্দরকে (জেলে মহাজন) এসব ঘরের অনুমতি দিয়েছেন।

সুন্দরবন বনবিভাগ সূত্র থেকে জানা গেছে, বৃটিশ আমল থেকে চলে আশা শুটকী পল্লীর কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর থেকে মগ বা সন্দীপ ও চট্টগ্রামের উপকূলীয় জেলেরা সুন্দরবনের চরে অস্থায়ী বাসা তৈরী করে মৎস্য আহরণ করত। পরে আশির দশক থেকে খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, মোংলা, পিরোজপুর, বরগুনা ও পটুয়াখালীর জেলেরা সুন্দরবন এলাকায় শুটকীর জন্য বঙ্গোপসাগরের উপকূলীয় এলাকায় মৎস্য আহরণ শুরু করেন। সেই থেকে নানান প্রতিকূলতার মধ্য থেকে জেলেরা মৎস্য আহরণ করে আসছে।

এসব জেলেরা ডাঙ্গায় বাঘ, জলে কুমির-হাঙ্গর, বনদস্যু-জলদস্যুর উৎপাত ও বনরক্ষীদের হয়রানীর মধ্যেও তাদের পেশা টিকিয়ে রেখেছে।

এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে- ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৭ হাজার ৩২৫ জন শুটকী পল্লীর জেলের কাছ থেকে ২ কোটি ৪৬ লক্ষ ৬৭ হাজার ৮১৯ টাকা ও ২০১৯-২০ সালে অর্থবছরে ৭ হাজার ৭৮৭ জন শুটকী পল্লীর জেলের কাছ থেকে ২ কোটি ৭৩ লক্ষ ৯৮ হাজার ৪৮ টাকা সরকারিভাবে রাজস্ব আদায় করা হয়েছে। যা বিগত বছরের তুলনায় বেড়ে ২৭ লক্ষ টাকারও বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে।

সরকার ও বন বিভাগের বাস্তবমূখী পদক্ষেপ গ্রহণ করা, সুন্দরবনের দস্যু মুক্ত করায় ও বনবিভাগের অসাধু সদস্যদের হয়রানী বন্ধ হওয়ায় এবং নজরদারী বৃদ্ধি পাওয়ায় সুন্দরবন ও উপকূলীয় শুটকী পল্লী থেকে রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি পেয়েছে।

সমুদ্রগামী জেলে আবুল বশার, মোঃ শাহজাহান, শহিদ মল্লিকসহ কয়েকজন জানান, দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে সমুদ্র উপকূলীয় এলাকায় মৎস্য আহরণ করে সরকারকে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব দিলেও জেলেদের ভাগ্যের চাকা ঘোরাতে পারেনি।

তারা জানান, মৎস্য সমিতির মাধ্যমে সহজ শর্তে ঋণ না পাওয়ায়, চিকিৎসার জন্য অস্থায়ী বা ভাসমান হাসপাতাল না থাকায়, ঝড় ও জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষার জন্য সাইক্লোন শেল্টার ও সুপেয় পানি এবং স্যানিটেশন ব্যবস্থা না থাকায় সিমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে জেলেদের।

এ প্রসঙ্গে পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় বনকর্মকর্তা (ডিএফও) মুহম্মদ বেলায়েত হোসেন বলেন- জেলেদের জন্য হাসপাতাল নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নের অপেক্ষায় আছে।

এ বিষয়ে সেভ দ্য সুন্দরবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ও সুন্দরবন বিশেষজ্ঞ লায়ন ডক্টর শেখ ফরিদুল ইসলাম বলেন- বন বিভাগের ব্যবস্থাপনাকে আধুনিক ও যুগোপযোগী করে গড়ে তোলার পাশাপাশি জেলেরা যাতে প্রশিক্ষণ নিয়ে শুটকী প্রক্রিয়াজাতকরণ করতে পারে এজন্য তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। শিশু শ্রম বন্ধের বিষয়টিও নজরদারী করতে হবে। চিকিৎসার জন্য ভাসমান হাসপাতাল, সুপেয় পানির জন্য পুকুর খনন ও জেলেদের নিরাপত্তা জোরদার করতে হবে।

ডিএফও মুহম্মদ বেলায়েত হোসেন জানান- এবারের শুটকী মৌসুম থেকে দুই কোটি ৮০ লাখ টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ঠিকা করা হয়েছে। আগমী ২৮ ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত জেলেদের শুটকী প্রকিয়াকরণের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তবে কোনও কারণে এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হলে সেক্ষেত্রে আরও এক মাস বাড়ানো হবে বলেও জানান তিনি।

Print Friendly, PDF & Email

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর