আমদানির পেঁয়াজে পচন, বেশিরভাগই যাচ্ছে খালে

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ পেঁয়াজ নিয়ে অস্থিরতার মধ্যে দেশে অতিরিক্ত পেঁয়াজ আমদানি করে নতুন বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। ভারত রপ্তানি বন্ধ করে দেয়ার পর বেশ কয়েকটি দেশ থেকে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে পেঁয়াজ আমদানির প্রক্রিয়া শুরু হয়। এই সুযোগে অতিমুনাফার লোভে অনেক অনভিজ্ঞ ব্যবসায়ীও পেঁয়াজ আমদানিতে নামেন। বর্তমানে মিশর, তুরস্ক, পাকিস্তান, চীন, উজবেকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি হচ্ছে।

কিন্তু চাহিদার তুলনায় বিপুল পরিমাণ আমদানি হওয়া পেঁয়াজের বেশিরভাগই পচে যাচ্ছে। টনে টনে সেসব পচা পেঁয়াজ ফেলা হচ্ছে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের খালে আর ভাগাড়ে। এতে প্রকৃত ব্যবসায়ীরা পুঁজি হারানোর শঙ্কায় রয়েছেন। পেঁয়াজে লোকসানের প্রভাব সামনে আরও করুণ হতে পারে বলে শঙ্কা তাদের।

পেঁয়াজ পচে যাওয়ার কারণ হিসেবে খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীদের ভাষ্য, যেসব দেশ থেকে এখন পেঁয়াজ আমদানি করা হচ্ছে তা খাতুনগঞ্জে পৌঁছতে কমপক্ষে ২০ দিন সময় লাগছে। সহনশীল তাপমাত্রা থেকে বেশি তাপমাত্রা হলেই পেঁয়াজ পচে যাচ্ছে। আবার কম তাপমাত্রা হলে পেঁয়াজে অংকুর গজাচ্ছে।

দেশের পেঁয়াজের বাজার অনেকাংশেই ভারতনির্ভর ছিল। তবে দেশটি পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেয়। প্রথম দফায় ২০১৯ সালে ভারত রপ্তানি বন্ধ করলে দেশের খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম কেজিতে তিনশ টাকা ছাড়িয়ে যায়।

দেশটি পরেরবার গত ১৪ সেপ্টেম্বর রপ্তানি বন্ধ করার পর দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম ১৩০ থেকে ১৫০ টাকায় পৌঁছায়। তবে সরকারি-বেসরকারিভাবে আরও কয়েকটি দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি শুরু হওয়ায় নিত্যপণ্যটির দাম এখন অনেকটাই নাগালে। বর্তমানে পেঁয়াজ ভেদে কেজি ৩০-৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চট্টগ্রামের এক আমদানিকারক ঢাকাটাইমসকে বলেন, পেঁয়াজের দাম বাড়তে দেখে লোহা ব্যাপারীরাও আমদানিতে নেমেছেন। কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করে এভাবে আমদানির কারণে বর্তমানে দেশের বাজারে চাহিদার চেয়ে পেঁয়াজের জোগান বেশি। যে কারণে বিক্রি কম। এছাড়া আমদানির পেঁয়াজ দেশে আসতে অন্তত বিশ দিন সময় লাগছে। জাহাজ থেকে খালাসের পর দেখা যাচ্ছে পেঁয়াজে পচন ধরেছে। এতে পুঁজি হারানোর শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

নিত্যপণ্যের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে বুধবার মিয়ানমারের পেঁয়াজ ২৮ থেকে ৩২ টাকা, পাকিস্তানের পেঁয়াজ ২০ থেকে ২৫ টাকা, মিশর ও চীনের পেঁয়াজ প্রতি কেজি ২০ থেকে ২৬ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

চট্টগ্রাম বন্দরের উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ কেন্দ্রের তথ্য মতে, প্রতিষ্ঠানটি ৩ সেপ্টেম্বর থেকে বিভিন্ন দেশ থেকে বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দিতে শুরু করে। ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত ৪৭৮টি আবেদনের প্রেক্ষিতে মোট ২ লাখ ৬ হাজার ৭৮৮ টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেয়া হয়। ২৮ অক্টোবর থেকে দেশে আসতে শুরু করে অনুমতি পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর পেঁয়াজ। ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত ২০ দিনে ৪৮ হাজার ৩৮৯ টন পেঁয়াজ বন্দর থেকে খালাস হয়েছে।

দাম কমাতে প্রভাব ফেলেছে টিসিবি

এদিকে হঠাৎ করে পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাওয়ায় খোলা বাজারে পেঁয়াজ বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। গত ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে ৩০ টাকায় পেঁয়াজ বিক্রি ঢাকাসহ সারাদেশে ২৭৫ জন ডিলারের ভ্রাম্যমাণ ট্রাকে পেঁয়াজ বিক্রি শুরু করে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। অনলাইনে ৩৬ টাকায় কেনা যাচ্ছে মিশরের পেঁয়াজ। কোথাও মিলছে চায়নার পেঁয়াজও। টিসিবির মাধ্যমে পেঁয়াজ বিক্রি শুরু করায় কিছুটা স্বস্তি আসে ক্রেতাদের মাঝে। অনেকে লাইন দিয়ে কিনছেন। তবে বাজারেও দাম কমতে থাকায় এখন টিসিবির ট্রাকে আগের মতো ভিড় দেখা যায় না।

ভিন্ন চিত্র ই-কমার্সে

বাজারে পেঁয়াজের দাম কমতে থাকলেও চড়া দামে তা বিক্রি করছে বিভিন্ন সুপার শপ ও ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান। একাধিক প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা দেশি পেঁয়াজ কেউ ৮০, কেউ আবার ৯০ টাকায় বিক্রি করছেন। সুপারশপগুলোর ওয়াবসাইটেও বাড়তি দামে পেঁয়াজ বিক্রির তথ্য দেয়া আছে। বুধবার সন্ধ্যায় মিনা বাজার, চাল-ডাল, বাজার নাও নামের তিনটি অনলাইন বাজারের ওয়াবসাইটে এমন চিত্র দেখা গেছে।

মিনা বাজারের অনলাইন প্লাটফর্ম ‘মিনা ক্লিক’ অনলাইনে ৯০ টাকায় বিক্রি করছে বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা সাকিব। তবে এলাকাভিত্তিক দাম কম বেশি হতে পারে বলে জানান তিনি।

অন্যদিকে ‘চাল-ডাল ডটকমে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮৫ টাকায়। আমদানি করা প্রতিকেজি পেঁয়াজ বিক্রি করছে ৪৯ টাকায়।

‘বাজার নাও’ নামের অপর একটি ওয়েবসাইটে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকায়। আর আমদানি করা পেঁয়াজ ৯০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

শ্যামবাজারেও বেহাল পেঁয়াজ

ঢাকার বড় পাইকারি বাজার শ্যামবাজারেও পেঁয়াজের পরিমাণ চাহিদার চেয়ে জোগান বেশি হওয়ায় আগের থেকে কম দামে বিক্রি হচ্ছে। তবে চট্টগ্রামের মতো পরিমাণে কম হলেও এখানেও ব্যবসায়ীরা পচা পেঁয়াজ পাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন।

‘আল মক্কা বাণিজ্যালয়ের’ স্বত্বাধিকারী মো. ইউনুস হাওলাদার ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমদানি ভালো হওয়ায় প্রচুর পেঁয়াজ আসছে। তাই দামও কম। মঙ্গলবার দেশি ভালো মানের পেঁয়াজ পাইকারি ৪৮ থেকে ৫০ টাকা বিক্রি হয়েছে। বুধবার ৪০ থেকে ৪৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে।’

পচা পেঁয়াজ পাচ্ছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘পরিমাণে খুব বেশি না হলেও পচা পেঁয়াজও আসছে। কারণ পণ্য খালাস করতে বেশি সময় লাগছে। জাহাজের এসির ভেতর থেকে বাইরে পেঁয়াজ রাখার পর তাপমাত্রার সমস্যার কারণেও পচে যাচ্ছে। এ কারণে ব্যবসায়ীরা লোকসানের মুখে পড়ছেন।’

একই বাজারের মেসার্স ইমাম টেড্রার্সের পরিচালক ইদ্রিস আলী (মধু) ঢাকাটাইমসকে বলেন, বুধবার দেশি পেঁয়াজ সর্বোচ্চ ৪৫ টাকা, চায়না ২০ থেকে ২৫, মিশরের পেঁয়াজ ৩০ থেকে ৩২ এবং মিয়ানমারের পেঁয়াজ ৩০ থেকে সর্বোচ্চ ৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

এই ব্যবসায়ী বলেন, নতুন পেঁয়াজ না আসা পর্যন্ত বাজার দর এমনই থাকতে পারে। তবে পেঁয়াজ পচে যাওয়ায় ব্যবসায়ীরা ক্ষতির মুখে পড়ছেন।

Print Friendly, PDF & Email

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর