ব্যাংক খাতে নানামুখী জালিয়াতি তদারকি ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ ব্যাংক খাতে অভিনব কৌশলে নতুন নতুন জালিয়াতির ঘটনা উঠে এসেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক পর্যালোচনা প্রতিবেদনে।

এতে দেখা যায়, ব্যাংকের টাকা লোপাটে জালিয়াত চক্র যেসব কৌশল অবলম্বন করছে তার মধ্যে রয়েছে-কোনো আদেশ ছাড়াই ব্যাংকের হিসাব থেকে অন্য গ্রাহকের হিসাবে টাকা স্থানান্তর, চেক ছাড়াই গ্রাহকের হিসাব থেকে টাকা উত্তোলন, অস্তিত্বহীন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ অনুমোদন, পর্ষদের অনুমোদন ছাড়াই ঋণছাড়, ভুয়া নাম-ঠিকানা ব্যবহার করে ঋণ বিতরণ, টাকা জমা ছাড়াই বৈদেশিক মুদ্রায় ফরেন ড্রাফট ইস্যু, সেবা না দিয়েই ফি আদায় ইত্যাদি।

এমনকি কোনো কাগজপত্র ছাড়াই ভল্ট থেকে নগদ টাকা তুলে নেয়ারও নজির আছে। দেখা যাচ্ছে, ব্যাংকের টাকা হাতিয়ে নেয়ার জন্য নানা ধরনের কৌশল প্রয়োগ করছে জালিয়াত চক্র। আরও উদ্বেগজনক হলো, এ প্রক্রিয়ায় ব্যাংক কর্মকর্তারাও জড়িত থাকেন। অনেক সময় উপরের নির্দেশে নিচের স্তরের কর্মকর্তারা জালিয়াতির ঘটনা ঘটাতে সহায়তা করেন।

ব্যাংকের টাকা মানে আমানতকারী তথা জনগণের টাকা। এ টাকার সুরক্ষা দেয়ার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্তৃপক্ষের। অথচ কিছু ব্যাংক কর্মকর্তার যোগসাজশে জালিয়াত চক্র হাতিয়ে নিচ্ছে সেই টাকা।

ইতঃপূর্বেও দেশের ব্যাংকিং খাতে নানা ধরনের জালিয়াতি ও প্রতারণার ঘটনা উদ্ঘাটিত হয়েছে। দেখা গেছে, এসব ঘটনার সঙ্গে বাণিজ্যিক ব্যাংকের কতিপয় পরিচালকসহ দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা জড়িত। এটা কোনোভাবেই চলতে দেয়া যায় না। এ খাতে সরকারের বিশেষভাবে নজর দেয়া প্রয়োজন।

এ লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর তদারকি ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। দুর্ভাগ্যজনক, ব্যাংকিং খাতে সুশাসন ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠার বিষয়টি আজও নিশ্চিত করা যায়নি।

ফলে মিথ্যা তথ্য ও জালিয়াতির মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নেয়ার প্রবণতা অব্যাহত আছে। অধিকাংশ বেসরকারি ব্যাংকের মালিক ও পরিচালক রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থাকেন। ফলে তাদের ওপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ ও কর্তৃত্ব অনেকটাই শিথিল। এ সুযোগে নিয়মনীতি উপেক্ষা করে তারা নানা ধরনের আর্থিক কেলেঙ্কারির জন্ম দিচ্ছেন।

তাই আমরা মনে করি, ব্যাংকিং খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি দুর্নীতিবাজদের রাষ্ট্রীয় ও সামাজিকভাবে বর্জনের পদক্ষেপ নেয়া দরকার। সুশাসন ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করা না গেলে বাণিজ্যিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর মানুষ আস্থা হারাবে, যার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির ওপর।

Print Friendly, PDF & Email

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর