কুরআন পড়ার পর মানুষের জন্য যে কাজ অসম্ভব

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ আল্লাহ তাআলা মানুষকে তার দাসত্ব ও আনুগত্যে উদ্বুদ্ধ রাখার জন্যই কিতাব, হিকমত ও নবি-রাসুল পাঠিয়েছেন। মানুষকে কুরআনের জ্ঞান এ জন্য দান করেননি যে, তারা নিজেদের রব বা প্রভু বলে দাবি করবে কিংবা নবি-ফেরেশতাদের পালনকর্তা সাব্যস্ত করবে। কুরআনের জ্ঞান অর্জনের পর কোনো মানুষের জন্য এটি সম্ভবও নয়।

ইয়াহুদি-খ্রিস্টানদের এমন কিছু ভ্রান্ত দাবির প্রেক্ষিতে মহান আল্লাহ কুরআনুল কারিমে আয়াত নাজিল করে পয়গাম্বরদের নিষ্পাপ হওয়ার বিষয়টি যেমন সুস্পষ্ট করেছেন তেমনি প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নবুয়তের সত্যতাও তুলে ধরেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন-
مَا كَانَ لِبَشَرٍ أَن يُؤْتِيَهُ اللّهُ الْكِتَابَ وَالْحُكْمَ وَالنُّبُوَّةَ ثُمَّ يَقُولَ لِلنَّاسِ كُونُواْ عِبَادًا لِّي مِن دُونِ اللّهِ وَلَـكِن كُونُواْ رَبَّانِيِّينَ بِمَا كُنتُمْ تُعَلِّمُونَ الْكِتَابَ وَبِمَا كُنتُمْ تَدْرُسُونَ – وَلاَ يَأْمُرَكُمْ أَن تَتَّخِذُواْ الْمَلاَئِكَةَ وَالنِّبِيِّيْنَ أَرْبَابًا أَيَأْمُرُكُم بِالْكُفْرِ بَعْدَ إِذْ أَنتُم مُّسْلِمُونَ
‘কোন মানুষকে আল্লাহ কিতাব, হেকমত ও নবুওয়ত দান করার পর সে বলবে যে, ‘তোমরা আল্লাহকে পরিহার করে আমার বান্দা হয়ে যাও’-এটা সম্ভব নয়। বরং তারা বলবে, ‘তোমরা আল্লাহওয়ালা হয়ে যাও, যেমন- তোমরা কিতাব শিখাতে এবং যেমন তোমরা নিজেরা ও পড়তে।’
তাছাড়া তোমাদেরকে একথা বলাও সম্ভব নয় যে, তোমরা ফেরেশতা ও নবীগণকে নিজেদের পালনকর্তা সাব্যস্ত করে নাও। তোমাদের মুসলমান হবার পর তারা কি তোমাদেরকে কুফরি শেখাবে?’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ৭৯-৮০)

আয়াতের সার সংক্ষেপ

নাজরানের প্রতিনিধি দলের উপস্থিতিতে কোনো কোনো ইয়াহুদি-খ্রিস্টান বলেছিল- ‘হে মুহাম্মাদ! (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আপনি কি চান যে, আমরা আপনার তেমনি উপাসনা করি; যেমন করে খ্রিস্টানরা ঈসা ইবনে মারইয়ামের উপাসনা করে?

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছিলেন, ‘(মা আজাল্লাহ) এটা কিভাবে সম্ভব যে, আমরা আল্লাহকে ছেড়ে অন্যের ইবাদত করি অথবা অপরকে এর প্রতি আহ্বান জানাই? আল্লাহ তাআলা আমাকে এ উদ্দেশ্যে পাঠাননি। এ কথোপকথনের পরই আলোচ্য আয়াত অবতীর্ণ হয়।

মানুষকে আল্লাহর দাসত্ব ও আনুগত্যে উদ্বুদ্ধ করার উদ্দেশ্যেই তিনি মানবজাতিকে কিতাব, হিকমাত ও পয়গাম্বরের মহান দায়িত্ব দিয়েছেন। তাই মানুষকে আল্লাহর ইবাদত থেকে সরিয়ে স্বয়ং নিজের বা অন্য কোনো সৃষ্ট জীবের দাসে পরিণত করার চেষ্টা পয়গাম্বরদের পক্ষে কিছুতেই সম্ভব নয়।

এ আয়াত নাজিলের আগে খ্রিস্টানরা এ কথা বলতো যে, ঈসা ইবনে মারইয়ামের উপাস্য হওয়ার বিষয়টি স্বয়ং ঈসা আলাইহিস সালাম তাদের শিক্ষা দিয়েছেন। কুরআনের এ আয়াত নাজিল হওয়ার পর তাদের এ দাবি অসার প্রমাণিত হয়।

আবার কোনো কোনো মুসলমানও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এ আরজ করেছিল যে, ‘আমরা আপনাকে সালামের পরিবর্তে আপনাকে সেজদা করলে ক্ষতি কি? এ আয়াতে তাদের ভ্রান্তির বিষয়টিও ফুটে ওঠে।

তাছাড়া এ আয়াতে আহলে কিতাব তথা ইয়াহুদি-খ্রিস্টানদের সেসব ভ্রান্তির প্রতিও আঙ্গুলি নির্দেশ হয়েছে; যারা তাদের পাদ্রী ও সন্ন্যাসীদের আল্লাহর স্তরে পৌঁছিয়ে দিয়েছিল (নাউজুবিল্লাহ)।’ (তাফসিরে মারেফুল কুরআন; ফাওয়ায়েদে ওসমানি)

মুমিন মুসলমানের জন্য করণীয় ও সতর্কতা
ইমাম রাজি রাহমাতুল্লাহি আলাইহি এখানে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি রহস্য উদঘাটন করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘ইলম, তালিম-তাআল্লুম অর্থাৎ শিক্ষা-সাধনা; শিক্ষার্থী ও শিক্ষকতার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকার মর্ম ও তাৎপর্যই আল্লাহওয়ালা হওয়া।

আর যে শিক্ষার্থী ও শিক্ষক জ্ঞান সাধনার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার পরও আল্লাহওয়ালা হওয়ার বৈশিষ্ট্য অর্জনে সক্ষম হয় না; সে বৃথাই সময় নষ্ট করে। যে ইলম মানুষকে আল্লাহওয়ালা হিসেবে তৈরি করে না; তা থেকে মহান আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়া খুবই জরুরি। কেননা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ ধরনের আমলহীন ইলম থেকে মহান আল্লাহর কাছে এভাবে নিরাপদ আশ্রয় চেয়েছেন-
نَعُوْذُ بِاللهِ مِنْ عِلْمٍ لَا يَنْفَعُ وَ مِنْ قَلْبٍ لَا تَخْشَعُ
উচ্চারণ : ‘নাউজুবিল্লাহি মিন ইলমিন লা ইয়ানফাউ ওয়া মিন ক্বালবিন লা তাখশাউ।’
অর্থ : আল্লাহর কাছ থেকে এমন ইলম থেকে আশ্রয় চাই যা উপকারি নয়। আর এমন অন্তর থেকে আশ্রয় চাই; যাতে আল্লাহর ভয় নেই।’ (তাফসিরে কাবির)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে ইয়াহুদিসের সব ঈমানবিধ্বংসী ষড়যন্ত্র থেকে হেফাজত করুন। কুরআনের জ্ঞান ও হেদায়েত দ্বারা নিজেদের ঈমান ও কলবকে আলোকিত করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

Print Friendly, PDF & Email

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর