বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ ফসলি জমির বুক চিরে ছুটছে ট্রাক্টরের পর ট্রাক্টর। লক্ষ্য ফসলি জমি থেকে কাটা মাটি ইট ভাটায় নিয়ে আসা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জেলায় ১৮৯টি ইটভাটা রয়েছে। এর মধ্যে ৮১টি ইটভাটা পরিবেশ আইন মেনে চললেও বাকি ভাটাগুলোর ছাড়পত্র নেই। আবার কোনটি ইট পোড়ানো আইন অনুযায়ী নিষিদ্ধ এলাকায় পড়েছে। জেলা সদর, সরাইল, আশুগঞ্জ, নাসিরনগর, বিজয়নগরসহ নয়টি উপজেলাতেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এসব ভাটাগুলো। ভাটা মালিকরা নানা কৌশলে কৃষকদের কাছ থেকে প্রতি কানি উপরিভাগের এক ফুট মাটি ৩০-৩৫ হাজার টাকায় কিনে নিচ্ছে।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, চারদিকে সবুজ ফসলের সমাহার। মাঝখান দিয়ে আকাশের দিকে উড়ে যাচ্ছে কালো ধোঁয়া। আর সে ধোঁয়ায় বিষিয়ে উঠছে গোটা পরিবেশ। ফসলি জমির মাঝখান দিয়ে সড়ক বানিয়ে ট্রাক্টর চলাচলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিছু কিছু কৃষকদের অসচতেনতার কারণে ফসলি জমিগুলো এখন হুমকির মুখে। কেননা তারা ভাটামালিকদের বিভিন্ন প্ররোচনায় আকৃষ্ট হয়ে সোনালী ফসল ফলানো জমিগুলো থেকে মাটি বিক্রি করে থাকে। ভাটাগুলোর চারপাশ ঘুরে দেখা যায় এ এক অন্যরকম কর্মব্যস্ততা। নির্বিচারে চলছে ফসলি জমির উপর অত্যাচার। এমনকি ভাটাগুলো নিজেদের সুবিধার জন্য সরকারি খালও ভরাট করে ফেলছে। এ যেন স্বেচ্ছাচারিতার রাজত্ব।
কথা হয় কৃষক আবু তাহের সঙ্গে। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, জমিগুলোর মারাত্নক ক্ষতি হচ্ছে। বিশেষ করে জমির ফসলে লাল ছিটার সমস্যা হচ্ছে। এ ছাড়া ইট ভাটা থেকে নির্গত ধোঁয়ায় ফসল ছাড়াও বিভিন্ন ফলদ বৃক্ষের ক্ষতি হচ্ছে।
অপর কৃষক হারুন উর রশিদ বাংলানিউজকে বলেন, কৃষকদের বাঁধা উপেক্ষা করে ইটভাটার মালিকরা জমির উপর দিয়ে অবাধে মাটি নিচ্ছে। এতে করে ধুলা বালিতে আশপাশের শত শত একর ফসলি জমি ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে এক সময় খাদ্য সংকট দেখা দিতে পারে।
ইটভাটার পাশে অবস্থিত স্থানীয় বাসিন্দা সোহেল মিয়া বলেন, এক সময় আমাদের বাড়ির গাছ গাছালিতে বিভিন্ন ফলে ভরপুর থাকলেও ইটভাটার বিরূপ প্রভাবে এখন এসব ফলের উৎপাদন অনেকটাই কমে গেছে। তিনি আরও অভিযোগ করে বলেন, ভাটা মালিকরা সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করেই এসব অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের ভয়ে সাধারণ মানুষ প্রতিবাদ করতে সাহস পায় না।
জেলা কৃষি সম্প্রারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক রবিউল আলম মজুমদার বাংলানিউজকে বলেন, জমির টপ সয়েল কেটে ফেলার কারণে জমি অনুবর্র হয়ে পড়ে। পাশাপাশি ভাটা থেকে নিঃসৃত কার্বনের কারণে ফসল ও আশপাশে থাকা গাছপালারও ক্ষতি হয়। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে এ ক্ষতি কিছুটা কমিয়ে আনা যেতে পারে।
জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. নরুল আমিন বলেন, যেসব ইটভাটা নিষিদ্ধ এলাকায় রয়েছে সে ভাটাগুলো ভেঙে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। ইট খেয়ে তো পেটের ক্ষুধা নিবারণ করা যাবে না। খাবার উৎপাদনের জন্য কৃষি ভূমি দরকার। সেজন্য তা সংরক্ষণ করতে হবে। আর কৃষি সংরক্ষণ করতে পরিবেশ অধিদপ্তর কাজ করে যাচ্ছে। ২০২০ সালে পরিবেশ আইনে ৮৬টি ইটভাটাকে প্রায় এক কোটি ২০ লাখ টাকা এবং কৃষি জমির উপরিভাগের মাটি কেটে ফেলার দায়ে গত এক মাসে ২১টি ইটভাটায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা ৭৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা আদায় করা হয়েছে।