পতিত পুকুরে শোল মাছ চাষে জাকিরের সাফল্য

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ পতিত একটি পুকুরে শোল মাছ চাষ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন সাতক্ষীরার জাকির হোসেন। সোমবার (১ মার্চ) জাকির হোসেন তার পুরাতন সাতক্ষীরার পুকুর থেকে বিক্রির জন্য প্রায় এক টন শোল মাছ ধরেন।

এ সময় সেখানে উপস্থিত থেকে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল ও জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মসিউর রহমান তা প্রত্যক্ষ করেন।

শোল মাছ চাষের জন্য প্রথমে মাত্র পাঁচ শতক জমির একটি পতিত ও অব্যবহৃত পুকুর বন্দোবস্ত নিয়েছিলেন জাকির। সেখান থেকে একে একে এখন পাঁচটি পুকুরে চাষ করছেন দেশি জাতের শোল মাছ। এ বছর এসব পুকুরে মাছ উৎপাদন হয়েছে এক টন। যার বাজার মূল্য প্রতি কেজি ৫০০ টাকা হিসাবে পাঁচ লাখ টাকা।

জাকির জানান, ১৯৯৯ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে এমএ শেষ করেন তিনি। এরপর চাকরির পেছনে না ছুটে তিনি আত্মকর্মসংস্থানের পথ খুঁজে নেন। বৃষ্টির পানিতে তার এলাকা ডুবে যাওয়ায় জাকির একদিন খুঁজে পান এক জোড়া দেশি শোল মাছ। এই জোড়া থেকেই তিনি শোল মাছ চাষে উদ্যোগী হয়ে ওঠেন। এখন তিনি পাঁচটি পুকুরে শোল মাছের চাষ করছেন। পুরাতন সাতক্ষীরার এই পতিত জমির পুকুরটিতে তিনি বার্ষিক মাত্র দেড় হাজার টাকা চুক্তিতে চাষ করেন শোল মাছ। মাত্র এক বছরের মাথায় এই শোল প্রতিটি ৮০০ গ্রাম থেকে এক কেজি পর্যন্ত হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

জাকির বলেন, পুকুরে কোনো ধরনের রাসায়নিক পদার্থ এমনকি কীটনাশকও প্রয়োগ করা হয় না। সম্পূর্ণ জৈব সারের ওপর ভিত্তি করে তিনি এই মাছ উৎপাদন করেছেন। কোনো রাসায়নিক খাদ্য, বিশেষ করে পোলট্রি ফিড ব্যবহার করেননি তিনি। মাছের খাদ্য হিসেবে ছোট জাতের মাছ ব্যবহার করে এই শোল বড় করে তুলেছেন জাকির হোসেন।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের মাটি পানি ও প্রকৃতি মাছ চাষের জন্য বিশেষভাবে উপযোগী। পুরনো পতিত জলাশয় দেশি জাতের মাছ চাষের উপযুক্ত জায়গা উল্লেখ করে তিনি বলেন, চাকরি না পেয়ে হতাশ না হয়ে দেশের যুব সমাজ এ ধরনের উদ্যোগে এগিয়ে আসতে পারে। এর ফলে আমাদের হারিয়ে যাওয়া নানা জাতের দেশি মাছ পুনরায় বাঙালির পাতে উঠবে। বিদেশি প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে হাইব্রিড জাতের মাছ উৎপাদনের প্রয়োজন পড়বে না।

জাকিরের এই আত্মকর্মসংস্থানমূলক উদ্যোগের প্রশংসা করে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল বলেন, তিনি আশাব্যঞ্জক কাজ করে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন। আত্মকর্মসংস্থানের পথ দেখিয়েছেন। শিক্ষা শেষে অথবা শিক্ষাকালীন চাকরির পেছনে না ছুটে জাকিরের দেখানো পথ বেয়ে এগোনোর জন্য দেশের যুব সমাজকে পরামর্শ দেন তিনি।

জেলা মৎস্য অফিসার মো. মসিউর রহমান বলেন, জাকির হোসেনের শোল মাছ চাষে মৎস্য বিভাগ সহযোগিতা করেছে। তার শোল মাছ উৎপাদন আরও সম্প্রসারিত করতে সহায়তা দেওয়া হবে। তিনি বলেন, তার দেখাদেখি অন্যদেরও এগিয়ে আসা দরকার।

Print Friendly, PDF & Email

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর