সূর্যমুখী ও সরিষা চাষে আগ্রহ বাড়ছে সিলেটের দক্ষিণ সুরমায়

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলার কৃষকদের মাঝে দিন দিন আগ্রহ বাড়ছে তেল ফসল চাষে। এ নৈপথ্যে রয়েছে স্থানীয় কৃষি বিভাগের সরব ভূমিকাও। মুলত আমদানী নির্ভর ভোজ্য তেলের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যেই নিজস্ব উৎপাদনে মনোযোগী প্রতিযোগীতায় এ ইতিবাচক পদক্ষেপ। এরই ধারাবাহিকতায় এবার দক্ষিণ সুরমায় উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে সরিষা ও সূর্যমুখীর চাষ। এসব তেল ফসল চাষ করে খুশি স্থানীয় কৃষকরাও। গতানুগতিক চাষের বিপরীতে তেল ফসল চাষে এক নতুন বৈচিত্রতা হয়ে উঠছে লক্ষনীয়।
এ এলাকার কৃষকেরা ধান চাষে চিরায়িতভাবেই আগ্রহী। আউশ ও আমন মওসুমে অনেক জমিতে ধান চাষ হয়ে থাকলেও বোরো মওসুমে বিস্তৃর্ণ জমি থেকে যায় অনাবাদি। ধান চাষে তুলনামূলক সেচের প্রয়োজনীয়তা বেশী হওয়ায় আউশ-আমন মওসুমে পানির প্রাকৃতিক যোগান থাকে বলে কৃষকরা সহজে এ দুই মওসুমে ধান চাষ করতে পারেন। বোরো মওসুমে হাওড়ে যেসব এলাকায় সেচের ব্যবস্থা আছে সেখানে ধান চাষ হয়ে থাকলেও উল্লেখযোগ্য পরিমাণ জায়গা পতিত থাকে কৃত্রিম সেচের অভাবে। ধানের তুলনায় সেচ নির্ভরতা কম এমন ফসল আবাদে যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে এ অঞ্চলের কৃষিতে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, প্রণোদনা ও পুনর্বাসন কর্মসূচির আওতায় ১৫২৫ জন ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকের মাঝে বিনামূল্যে বিভিন্ন ফসলের বীজ ও সার বিতরণ করা হয়। বোরো বীজ সহায়তা হিসেবে ২১৪২ জন কৃষককে ২ কেজি করে হাইব্রীড বোরো বীজ সহায়তাও দেওয়া হয়। এর মধ্যে স্বল্প সেচে আবাদ করা যায় এমন ফসল বিতরণ করা হয় ১৩১৫ জন কৃষকের মাঝে। এসব ফসল গুলো হচ্ছে- সূর্যমুখী, সরিষা, গম, ভূট্টা, চিনাবাদাম, মসুর, খেসারী, টমেটো, মরিচ ও গ্রীষ্মকালীন মুগ।
উপজেলায় রাজস্ব অর্থায়নে ৬০ টি সূর্যমুখী, ৩০ টি সরিষা, ১০ টি গম ও ১০ টি ভূট্টা প্রদর্শণী পাইলট প্রকল্প হিসেবে স্থাপন করা হয়। এসব প্রদর্শণী দেখে আগ্রহ বাড়ছে এ এলাকার কৃষকের।
তেল ফসলের আবাদ বাড়াতে উপজেলার ৮ ইউনিয়নে ৮ জন অগ্রসরমান কৃষককে বীজ উৎপাদনকারী উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে আরও ৮ টি সরিষা প্রদর্শণী দেওয়া হয়। পরবর্তী মওসুমে যাতে আগ্রহী কৃষকেরা সহজে উচ্চফলনশীল জাতগুলো পায় সে উদ্দেশ্যে তাদেরকে বীজ উৎপাদনের পাশাপাশি সংরক্ষণ ও বিক্রির জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণও সরবরাহ করা হয়। এছাড়া উদ্বুদ্ধকরণের মাধ্যমেও দক্ষিণ সুরমায় অনেক কৃষক চাষ করেছেন সরিষা ও সূর্যমুখী।
উপজেলার লালাবাজার ইউনিয়নের বিবিদইল গ্রামের উদ্যোক্তা কৃষক ডিএইচ খান বলেন, এবছর বারি সরিষা-১৪ এর প্রদর্শণী করেছি। কৃষি বিভাগের পরামর্শ মতে সব কিছু করেছি তাই অনেক ভালো ফলন হয়েছে। আমি পরবর্তী মওসুমে বীজ হিসেবে বিক্রি করার জন্য এ সরিষা সংরক্ষণ করবো। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে বীজ বিক্রি করতে প্রয়োজনীয় কিছু যন্ত্রপাতিও পেয়েছি। এখানে আশপাশের অনেক কৃষকেরা পরবর্তী মওসুমে সরিষা আবাদের আগ্রহ দেখাচ্ছে আমি তাদেরকে বীজ দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছি। আগামিতে বীজ উৎপাদনের লক্ষ্যে আমারও আরও বড় পরিসরে চাষাবাদ করার ইচ্ছে আছে।
স্থানীয় জালালপুর ইউয়িনের শেখ পাড়া গ্রামের কৃষক হেলাল মিয়া এবার প্রদর্শণী করেছেন সূর্যমুখীর। তিনি বলেন, এবারই প্রথম সূর্যমুখী চাষ করেছি আমি। আমি আশা করি ফলন অনেক ভালো হবে। আগামিতেও সূর্যমূখী চাষাবাদ করবো। রোগবালাই কম এবং উৎপাদন খরচ খুবই কম। তাই আমার আশপাশের অনেক কৃষকও সূর্যমুখী চাষে আগ্রহ পোষন করেছে।
উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ শামীমা আক্তার বলেন, এ অঞ্চলে আবহাওয়া সরিষা ও সূর্যমুখী আবাদের জন্য খুবই উপযোগী। এসব ফসল চাষ করে যেমন পতিত জমি চাষের আওতায় আনা সম্ভব তেমনিভাবে ভোজ্য তেলের আমদানি নির্ভরতাও দিনে দিনে কমানো সম্ভব। সেই সাথে এসব তেল খুবই স্বাস্থসম্মত। উচ্চ ফলনশীল, সেচ কম লাগা, সময় কম লাগা, উৎপাদন খরচ কম এবং লাভ বেশি হওয়ায় সরিষা ও সূর্যমুখী চাষের প্রতি আগ্রহ দেখাচ্ছেন স্থানীয় কৃষকরাও ।

Print Friendly, PDF & Email

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর