কিশোরগঞ্জের নাম করণের ইতিহাস

ইতিহাস জাতির দর্পন বা আয়নাস্বরূপ। ইতিহাসের মাধ্যমেই জাতি তার প্রকৃত রূপ ও প্রকৃতি দেখতে পায়। ইতিহাসের আলোকেই মানুষ তার বর্তমান ও ভবিষ্যত চলার পথ অনুসন্ধান করে। কিশোরগঞ্জ জেলার ইতিহাস সুদীর্ঘ এবং তার ঐতিহ্য ব্যাপকভাবে প্রসারিত। প্রশাসনিক পরিসরে কিশোরগঞ্জ জেলা দেশের অন্যতম বৃহত্তম জেলা হিসেবে পরিচিত,সর্বজনস্বীকৃত । গ্রাম বাংলার শাশ্বত রূপ বৈচিত্র ও সোনালী ঐতিহ্যের ধারায় কিশোরগঞ্জের রয়েছে একটি সমৃদ্ধ ইতিহাস । ১৭৮৭ সালের ০১ মে ভারতীয় উপমহাদেশের এক সময়কার বৃহত্তম জেলা ময়মনসিংহ প্রতিষ্ঠিত হয়। আজকের কিশোরগঞ্জ জেলা তখনকার ময়মনসিংহের অন্তর্গত ছিল। ঐতিহাসিক তথা প্রমাণ বিশ্লেষন করে যদিও দেখা যায় বাজিতপুর, নিকলী, হোসেনপুর ও জঙ্গলবাড়ীর প্রাচীন আমেজ অনেক বেশী তথাপিও ঐতিহ্যবাহী জেলা হিসেবে কিশোরগঞ্জ আজ সর্বমহলে স্বীকৃত কেননা প্রাচীন ইতিহাস সমৃদ্ধ উপরোল্লিখিত অঞ্চলগুলো বর্তমান কিশোরগঞ্জের’ই অন্তর্গত । বিচ্ছিন্নভাবে প্রাপ্ত ইতিহাসের উপাদান বিশ্লেষন করে জানা যায় মহাকাব্যের যুগে এ অঞ্চল কামরূপ রাজ্যের অন্তর্গত ছিল। তারপরে গুপ্ত, বর্মন, পাল ও সেন বংশ রাজত্ব করে এ অঞ্চলে। তবে কোন বংশই এ অঞ্চল পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। তৎকালে এ অঞ্চলে  ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র স্বাধীন রাজ্যের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। কিশোরগঞ্জের জঙ্গলবাড়ী ছিল স্বাধীন ক্ষুদ্র রাজ্যের পীঠস্থান। মধ্যযুগে আলাউদ্দিন হোসেন শাহের আমলে (১৪৯৩-১৫১৯) খ্রীঃ বৃহত্তর ময়মনসিংহে মুসলিম শাসন বিস্তৃত হয়। কোচ অধ্যুষিত সমগ্র কিশোরগঞ্জ অঞ্চল মুসলিম শাসনের অধীনে আসে সম্রাট আকবরের সময়।
১৮৬০ খ্রিষ্টাব্দে কিশোরগঞ্জ মহকুমার জন্ম হয়। মহকুমার প্রথম প্রশাসক ছিলেন মিঃ বকসেল। বর্তমান কিশোরগঞ্জ তৎকালীন জোয়ার হোসেনপুর পরগনার অন্তর্গত ছিল। অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষ প্রান্তেও কিশোরগঞ্জ এলাকাটি ‘‘কাটখালী’’ নামে সমধিক পরিচিত ছিল। বিজ্ঞজনের ধারণা ও জনশ্রুতি থেকে অনুমান করা হয় যে এ জেলার জমিদার ব্রজকিশোর মতান্তরে নন্দকিশোর প্রামানিকের ‘কিশোর’ এবং তার প্রতিষ্ঠিত হাট বা গঞ্জের ‘গঞ্জ’ যোগ করে কিশোরগঞ্জে’র নামকরণ করা হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর