বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত মাহমুদ উস সামাদের মৃত্যুতে শূন্য ঘোষিত সিলেট ৩ আসনে আওয়ামী লীগের একঝাঁক প্রার্থীর পাশাপাশি অংশ নিচ্ছে জাতীয় পার্টি (জাপা)। নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নেওয়ায় নিজেদের হারানো দুর্গ ফিরে পেতে চেষ্টায় জাতীয় পার্টি।
সদ্য জাতীয় পার্টিতে যোগদান করে কেন্দ্রীয় সদস্য পদ পাওয়া শিল্পপতি নজরুল ইসলাম বাবুল পার্টির মনোনয়ন পেতে সক্রিয় হন প্রচার-প্রচারণায়।
অন্যদিকে জাপার প্রার্থী হিসেবে পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য আতিকুর রহমান আতিক ব্যানার-পোস্টারে প্রচারণায় দেখা গেলেও মাঠে সক্রিয় থাকতে দেখা যায়নি। তবে কেন্দ্রের সঙ্গে তার নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে জানান পার্টির নেতাকর্মীরা। যে কারণে মনোনয়ন যুদ্ধে পার্টির টিকিট বাগিয়ে নিয়েছেন তিনি। মনোনয়ন যুদ্ধে তিনি শিল্পপতির নজরুল ইসলাম বাবুলকে পেছনে ফেলে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হয়েছেন।
জাপার চেয়ারম্যানের দপ্তর থেকে বুধবার (৯ জুন) এ তথ্য নিশ্চিত হওয়ার পরও মনোনয়ন লাভকারী আতিকুর রহমান আতিক নিজেও জাপার মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তিনি ছাড়াও ১৪ জুলাই অনুষ্ঠেয় উপ-নির্বাচনে ঢাকা-১৪ আসনে জাতীয় পার্টি মনোনয়ন পেয়েছেন মোস্তাকুর রহমান মোস্তাক এবং কুমিল্লা-৫ আসনে মো. জসিম উদ্দিন।
পার্টির একাধিক সূত্র জানায়, বুধবার সকালে ঢাকায় পার্টি অফিসের সমানে প্রার্থিতা নিয়ে মনোনয়ন প্রত্যাশী নজরুল ইসলাম বাবুল ও আতিক সমর্থকদের মধ্যে মারামারিও হয়েছে। তবে, সব জল্পনা কল্পনা উড়িয়ে শিল্পপতি প্রার্থীর টাকার বিপরীতে অভিজ্ঞজনকে মূল্যায়ন করে তার হাতেই লাঙ্গল তুলে দিলেন পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরসহ মনোনয়ন বোর্ড। বিরোধীদলে হয়ে এবার তিনি নৌকার প্রার্থীকে ধরাশায়ী করতে পারেন কিনা, তা দেখার অপেক্ষায় নেতাকর্মী ও জাতীয় পার্টিপ্রেমীরা।
জানা গেছে, সিলেট-৩ আসনে সংসদ সদস্য থেকে সেই ১৯৯১ সাল থেকে প্রার্থী হয়ে আসছেন আতিকুর রহমান আতিক। ১৯৯১ সালে তিনি নৌকা প্রতীকে প্রার্থী হয়ে বিজয়ী হতে পারেননি। সেসময় লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে বিজয়ী হয়েছিলেন জাতীয় পার্টির আব্দুল মুকিত খান। কিন্তু সেসময় নৌকা নিয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে বিজয় না পাওয়ায় দল বদল করে জাতীয় পার্টিতে যোগদেন আতিক। বিগত নির্বাচনে এ আসনে লাঙ্গল নিয়ে প্রতিদ্বন্ধতা করলেও মানুষ তাকে কাছে টেনে নেয়নি। বিগত তিন মেয়াদ মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী বিজয়ে আশাহত হয়ে অনেকটা ক্ষোভেই এ আসন ছেড়ে হবিগঞ্জ থেকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী থেকে সচেষ্ট ছিলেন। কিন্তু মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর মৃত্যুতে ফের তিনি পুরনো দুর্গ উদ্ধারে সচেষ্ট হন। ততদিনে পার্টির ভেতর নতুন প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে আসেন শিল্পপতি নজরুল ইসলাম বাবুল। স্থানীয়রা বলাবলি করছিলেন, মনোনয়ন যুদ্ধে এবার বাবুলের টাকার কাছে ধরাশায়ী থেকে পারেন আতিক। অবশেষে বাবুলকে টপকে আতিকই ধরলেন লাঙ্গলের খুঁটি। তারপরও কর্মীসমর্থকদের সংশয় লাঙ্গলের খুঁটি আতিকের হাতে থাকছেতো?
তথ্যমতে, এ আসনে পার্টির একক আধিপত্য না থাকলেও নব্বইয়ের আগে (১৯৮৮) লাঙ্গল ও নব্বই পরবর্তী ছয়টি নির্বাচনে দুই বার লাঙ্গল, তিন বার নৌকা ও দুই বার ধানের শীষ জয়লাভ করে।
১৯৮৮ সালে, ১৯৯১ সালে পঞ্চম ও ১৯৯৬ (জুন) সালে সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির (লাঙ্গল) প্রার্থী আব্দুল মুকিত খান দুই বার জয়লাভ করেন। ১৯৯৬ (ফেব্রুয়ারি) ও ২০০১ সালে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির (ধানের শীষ) প্রার্থী শফি আহমদ চৌধুরী এ আসনে জয়লাভ করেন। ২০০৮ সালের নবম, ২০১৪ সালের দশম ও ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের (নৌকা) প্রার্থী মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী হ্যাট্রিক জয়লাভ করেন।
ঢাকা, বুধবার (৯ জুন) জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের বনানী কার্যালয় মিলনায়তনে পার্টি চেয়ারম্যান ও বিরোধী দলীয় উপনেতা জনবন্ধু গোলাম মোহাম্মদ কাদের এমপির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মনোনয়ন বোর্ডের সভায় পার্টির আগ্রহী প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার শেষে মনোনীত প্রার্থীদের তালিকায় সিলেট-৩ আসনে আতিকুর রহমান আতিকের নাম ঘোষণা করা হয়।
জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান ও বিরোধী দলীয় উপনেতা জনবন্ধু গোলাম মোহাম্মদ কাদের এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মনোনয়ন বোর্ডের সভায় উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু, কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি, অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম এমপি, প্রেসিডিয়াম সদস্য গোলাম কিবরিয়া টিপু এমপি, অ্যাডভোকেট শেখ মুহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম, অতিরিক্ত মহাসচিব (সিলেট বিভাগ) এটিইউ তাজ রহমান, অতিরিক্ত মহাসচিব (চট্টগ্রাম বিভাগ) অ্যাডভোকেট মো. রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, অতিরিক্ত মহাসচিব (ঢাকা বিভাগ) লিয়াকত হোসেন খোকা এমপি।
উল্লেখ্য, করোনা আক্রান্ত হয়ে সিলেট-৩ আসনের সাংসদ মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী কয়েস মারা যান। এরপর গত ১১ মার্চে জাতীয় সংসদের ২৩১ সিলেট-৩ আসনটি শূন্য ঘোষণা করে ইসি। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১২৩ এর দফা (৪) অনুযায়ী উক্ত শূন্য আসনে ৮ জুনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা ছিল। কিন্তু করোনা ভাইরাস সংক্রমণজনিত দুর্বিপাকের কারণে এই দফায় মেয়াদান্তে ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন সম্ভব হয়নি। এ অবস্থায় শূন্য আসনটিতে ৮ জুন পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য তফসিল ঘোষণা করে ইসি। তফসিল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন ১৫ জুন। মনোনয়নপত্র বাছাই ১৭ জুন এবং মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন ২৩ জুন। ২৪ জুন হবে প্রতীক বরাদ্দ এবং আগামী ১৪ জুলাই ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।