কুষ্টিয়ায় ট্রিপল মার্ডার: এএসআই সৌমেনের আদালতে স্বীকারোক্তি

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ কুষ্টিয়া শহরের কাস্টমস মোড়ে প্রকাশ্যে মা, তার শিশু ছেলেসহ তিনজনকে হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন কুষ্টিয়া মডেল থানায় করা হত্যা মামলার একমাত্র আসামি পুলিশের এএসআই সৌমেন রায়।

সোমবার (১৪ জুন) দুপুর সোয়া ১টার দিকে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মডেল থানার পরিদর্শক নিশিকান্ত সরকার সৌমেনকে কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক রেজাউল করীমের কাছে জবানবন্দি রেকর্ড করতে সোপর্দ করেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করে আদালত পুলিশের পরিদর্শক সঞ্জয় রায় বলেন, ‘বিজ্ঞ বিচারকের খাস কামরায় দীর্ঘ আড়াই ঘণ্টা ধরে সৌমেন ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন।’

কুষ্টিয়া শহরের কাস্টমস মোড়ে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রোববার (১৩ জুন) সকাল ১১টার দিকে আসমা খাতুন, তার ছেলে রবিন ও স্থানীয় বিকাশের কর্মী শাকিল খান কাস্টমস মোড়ে মার্কেটের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। এমন সময় পুলিশের এএসআই সৌমেন রায় এসে পিস্তল দিয়ে প্রথমে আসমাকে গুলি করেন। এরপর গুলি করেন শাকিলকে। এটা দেখে শিশু রবিন পালানোর চেষ্টা করলে তাকেও গুলি করেন। স্থানীয়রা এগিয়ে এসে হাতেনাতে পিস্তলসহ সৌমেনকে ধরে পুলিশে দেয়।

পরে স্থানীয়রা গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তাদের উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। সৌমেনের কথিত স্ত্রী আসমা। আর আসমার প্রথম স্বামীর ছেলে শিশু রবিন।

আদালত পুলিশের পরিদর্শক সঞ্জয় রায় বলেন, ‘স্বীকারোক্তির মধ্যে প্রধানত ছিল- আসমা ও সৌমেনের মধ্যে সম্পর্কের টানা পোড়েন থেকে সৃষ্ট ক্ষোভে সৌমেন এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন।’ জবানবন্দি রেকর্ড শেষে আসামিকে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত।

এর আগে নিহত আসমার মা কুমারখালী উপজেলার নাথুরিয়া গ্রামের আমির আলীর স্ত্রী হাসিনা খাতুন বাদী হয়ে মেয়ে ও নাতিকে হত্যার অভিযোগে কুষ্টিয়া মডেল থানায় হত্যা মামলা করেন।

নিহত আসমা এএসআই সৌমেনের বিধিসম্মত বৈবাহিক স্ত্রী কিনা সেই বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে বলে জানান মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নিশিকান্ত সরকার। তিনি বলেন, ‘আসমার পরিবার ও সৌমেনের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, সৌমেন রায় আসমা খাতুনের তৃতীয় স্বামী। আসমার সঙ্গে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত শিশু রবিন আসমার প্রথম স্বামীর সন্তান।’

নিশিকান্ত সরকার বলেন, ‘সৌমেন রায়ের বাড়িতে রয়েছে বিবাহিত স্ত্রী ও বাচ্চা। এই সব ঘটনাগুলোর মধ্যে কার সঙ্গে কী ধরণের সম্পর্ক এবং টানাপোড়েনই বা কীভাবে সৃষ্টি হয়েছে, যার কারণে এই হত্যাকাণ্ড; এর সবকিছুই বিবেচনায় নিয়ে আমরা তদন্ত শুরু করেছি।’

কুষ্টিয়া অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, কুষ্টিয়া ও খুলনা পুলিশের ঊধ্র্বতন কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। অন ডিউটিতে থাকা একজন পুলিশ কর্মকর্তা দাপ্তরিক অনুমোদন ছাড়া সরকারি অস্ত্র নিয়ে খুলনার ফুলতলা উপজেলা থেকে কুষ্টিয়াতে এসে কীভাবে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে; সেই বিষয়ে কার কতটুকু দায় বা কর্তব্যকাজে অবহেলা ছিল, এর সবকিছু খুটিনাটি বিশ্লেষণসহ তদন্ত করবে এই কমিটি।

আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে কমিটিকে তদন্ত শেষ করে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে বলে জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার।

Print Friendly, PDF & Email

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর