তৃণমূলের কোন্দল মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে আওয়ামী লীগ

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব-কোন্দলে নাকাল তৃণমূল আওয়ামী লীগ। গ্রপিং, পালটাপালটি কমিটি ঘোষণা ও বহিষ্কার, মুখোমুখি সংঘর্ষ এবং হামলা-মামলা লেগেই আছে। আর এই দ্বন্দ্বে মূল নেতৃত্বে রয়েছে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও জেলা-উপজেলা পর্যায়ের শীর্ষ নেতারা। তাদের বিরোধ মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে কেন্দ্র। বারবার নির্দেশনার পরেও বিভেদের রাজনীতির কারণে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে এসব ঘটনা।

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্য মতে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত আওয়ামী লীগে ৪০টি অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে আটজন নিহত ও ৬২১জন আহত হয়েছে। এই অবস্থা অব্যাহত থাকলে দলকে চড়া মাশুল দিতে হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের সর্বশেষ মনোনয়ন বোর্ডের সভায় জেলা ও মহানগরে অভ্যন্তরীণ কোন্দল চরম আকার ধারণ করায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি আট বিভাগের সাংগঠনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের দ্রুত এই কোন্দল নিরসনের নির্দেশ দিয়েছেন।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান যুগান্তরকে বলেন, করোনার কারণে সাংগঠনিক কাজ এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে যে বাধার সৃষ্টি হয়েছে। তা নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। করোনা পরিস্থিতি একটু ভালো হলেই টিমগুলো আবার তৃণমূল সফর শুরু করবে। এছাড়া আট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা বিরোধপূর্ণ জেলা-উপজেলার নেতাদের সঙ্গে কথা বলে বিরোধ দূর করবেন।

স্থানীয় আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বসুরহাট। বেশ কয়েক মাস ধরে সেখানে পালটাপালটি হামলা-মামলা চলছেই। কেন্দ্রীয় নেতাদের হস্তক্ষেপেও তা বন্ধ করা সম্ভব হয়নি। এই ঘটনাও আহত ও নিহত হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলা আওয়ামী লীগের তিন বছরে চারটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র নীতিমালা অনুযায়ী ৩ বছরের মধ্যে একই উপজেলায় কীভাবে ৪টি কমিটি করা নিয়ে ক্ষুব্ধ কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন এমপি। তিনি বলেন, সম্মেলন ছাড়া ও গঠনতন্ত্র না মেনে এইভাবে ৩ বছরের একই উপজেলায় ৪টি কমিটি অনুমোদন দেওয়া আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ও নিয়মবহির্ভূত।

অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের জেরে সম্প্রতি গাইবান্ধার সাদুল্যাপুরে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অধ্যক্ষ জাকারিয়া খন্দকারকে অব্যাহতি দিয়েছেন সাধারণ সম্পাদক সাহারিয়ার খান বিপ্লব। দলীয় দ্বন্দ্বের কারণে সংঘাত এড়াতে সাদুল্যাপুর শহরে ১৪৪ ধারা জারি করতে হয়েছে প্রশাসনকে। সাদুল্যাপুরে বা বুড়িচংয়েই নয়, সারা দেশে বিভিন্ন স্থানে এমন ঘটনা প্রায়ই ঘটছে। আওয়ামী লীগের দলীয় কোন্দল মূলত নেতায় নেতায় ব্যক্তিগত স্বার্থে। গঠনতন্ত্রে বিধান না থাকলেও এক পক্ষ বহিষ্কার করছে অন্য পক্ষকে। কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অমান্য করে নিজেদের লোকদের দিয়ে ঘোষণা করা হচ্ছে কমিটি। যার জেরে বাড়ছে দ্বন্দ্ব, ঘটছে সংঘর্ষ।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সদস্য সংগ্রহ কার্যক্রম মঙ্গলবার উদ্বোধন অনুষ্ঠানেও তৃণমূলের (ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিট) খারাপ অবস্থার কথা উঠে আসে। দায়িত্বশীল নেতারাই এ নিয়ে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেন। সভায় ঢাকা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম বলেন, সারা দেশের মধ্যে সাংগঠনিকভাবে সবচেয়ে দুর্বল ঢাকা। পদ বাণিজ্য এখন সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসা। আওয়ামী লীগ টানা ১২ বছর ক্ষমতায় একেক জন ব্যবসা করে, শিল্প করে ব্যাংক ডিফেল্ডার হয়ে ধ্বংস হয়ে গেছে। আর কেউ কেউ আওয়ামী লীগের দেয়া শেখ হাসিনার দেওয়া চেয়ারে বসে পদ বাণিজ্য করে কোটি কোটি টাকা আয় করেছে।

এদিকে পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ এবং সংগঠনকে শক্তিশালী করতে অভ্যন্তরীণ বিরোধ মেটাতে মাঠে নেমেছেন দলের কেন্দ্রীয় ও দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। জেলা-উপজেলা ও মহানগরে বিবদমান নেতাদের ঢাকায় ডেকে এনে সমস্যা সমাধানে কঠোর বার্তা দিচ্ছেন। তারা বলছে, চলমান পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে কেন্দ্রের আরও কঠোর হতে হবে। ইতোমধ্যে কক্সবাজার, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, পাবনাসহ আর বেশ কিছু জেলা ও উপজেলা নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেছেন। এসব বৈঠকে অভ্যন্তরীণ কোন্দল মেটানোর নির্দেশনা দিয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। তৃণমূল নেতারাও ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার অঙ্গীকার করেছেন।

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন যুগান্তরকে বলেন, স্থানীয় পর্যায়ে কিছু কিছু জায়গায় আমাদের সমস্যা আছে। সেগুলো নিরসনে আমরা কাজ করছি। চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমদ যুগান্তরকে বলেন, সব জায়গায় নয়, কিছু কিছু জায়গায় এমপিদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের দূরত্ব আছে, সেগুলো ঘুচিয়ে কিভাবে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করা যায় সে বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর