বুড়িগঙ্গায় প্রাণের ছোঁয়া: ধরা পড়ছে পুঁটি কৈ টেংরাসহ নানা মাছ

বাঙালি কণ্ঠ ডেস্কঃ  মৃতপ্রায় বুড়িগঙ্গা নদীতে এখন পলি মিশ্রিত পানির প্রবহমান স্রোত। দক্ষিণের মৌসুমি বাতাসে পানির ঢেউ খেলা করছে। নেই দুর্গন্ধ ও কালো পানি। বুড়িগঙ্গায় এখন আবার মাছ পাওয়া যাচ্ছে। উজান বছিলা ব্রিজ থেকে ভাটি নারায়ণগঞ্জের পাগলা, সবখানে মাছ মিলছে। গত কয়েক দিনে বুড়িগঙ্গায় মাছ ধরার উত্সব লেগেছে। বড়শি, খেয়াজাল, চাঁই, বেড়জাল, ভেসাল দিয়ে মাছ ধরছে মানুষ। ধরা পড়ছে পুঁটি, বাইম, গুতম, কৈ, শিং, টেংরা, খলিশাসহ নানা মাছ। বুড়িগঙ্গা নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতেও শুরু করেছে কয়েকজন। এর একজন কামরাঙ্গীরচরের হয়রত আলী। তিনি জানান, গত চার-পাঁচ দিন ধরে ভেসাল জাল দিয়ে নদীতে মাছ ধরছেন। জালে পুঁটি, বাইম, টেংরা, খলিশাসহ নানা মলা মাছ পাওয়া যাচ্ছে। প্রতিদিন নিজের পরিবারের মাছের চাহিদা মিটিয়ে ৬শ’-৭শ’ টাকার মাছ বিক্রি করেন তিনি। আশপাশের পরিবারগুলো সেই মাছ একটু বেশি দামে কিনে নেয়। গতকাল বিকেল ৪টার মধ্যে ৬৫০ টাকার মাছ বিক্রি করেছেন তিনি। কথা হয় হযরত আলীর কাছ থেকে মাছ কিনতে আসা নাজমা বেগমের সঙ্গে। তিনি জানান, বাজারের তুলনায় বেশি দাম দিয়ে এখান থেকে মাছ কিনছি। মাছগুলো জীবিত। আর স্বাদও বেশ ভালো। বুড়িগঙ্গার উত্তর পারের খোলামড়ায় মাছ ধরার উত্সব লেগেই থাকছে। গত কয়েক দিনে বড়শি, খেয়াজাল ও বেড় জাল দিয়ে অনেক মানুষকে মাছ ধরতে দেখা গেছে। সেখানে জালে ধরা পড়ছে পুঁটি, বাইম, গুতম, কৈ ও শিং মাছ। ভারি বর্ষণে উজানের নদীগুলো থেকে কয়েক দিনের পানিতে ভরে গেছে বুড়িগঙ্গা। শীতের শিল্পবর্জ্য ও কালো পানি সরিয়ে অনেকটা স্বচ্ছ পানিতে দূর হয়েছে দুর্গন্ধ। দুর্গন্ধ দূর হওয়ায় বুড়িগঙ্গা পারের জনপদে ফিরে এসেছে অনেকটা স্বস্তি। বুড়িগঙ্গার মাঝি, মত্স্যজীবী, খেয়াপারের যাত্রী, লঞ্চের খালাসি এবং নদীপারের একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে ও সরেজমিন ঘুরে এমন চিত্র উঠে এসেছে। নদীতে শীতকালে জলজ প্রাণের স্বাভাবিক পরিবেশের জন্য দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ কম থাকায় তখন বুড়িগঙ্গায় কোনো মাছ বা জলজ প্রাণ থাকতে পারে না-এমন তথ্য পরিবেশ অধিদফতরের পরীক্ষার ফলে দেখা গেছে। বর্ষাকালে নতুন পানি এলে আবার মাছ ফিরে আসে। তবে স্বাভাবিক নদীগুলোর তুলনায় কম। নদী সুরক্ষা ও অধিকার নিয়ে কর্মরত সংগঠন রিভারাইন পিপুলের মহাসচিব শেখ রোকন জানান, শুধু এবার নয়, প্রতি বর্ষাকালেই বুড়িগঙ্গায় আমরা মাছ দেখি। কারণ বাড়তি পানি ও প্রবাহের কারণে তখন রাসায়নিক দূষণের ঘনত্ব কমে যায়। এর অর্থ হচ্ছে, দূষণের মাত্রা সামান্য কমাতে পারলেও সারাবছরই মাছ পাওয়া যাবে নদীটিতে। তিনি জানান, বুড়িগঙ্গা দূষিত থাকার কারণে বৃহত্তর ঢাকার পশ্চিম ও পূর্বাংশের মধ্যে মাছের রুট বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। ফলে কেবল বুড়িগঙ্গায় নয়, নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে মানিকগঞ্জ, গাজীপুরের বিলাঞ্চলে মাছের উত্পাদন ও প্রজনন। তবে বুড়িগঙ্গা সারাবছর বর্ষাকালের মতো জীবন্ত ও দূষণমুক্ত রাখতে একাধিক সংগঠন ও নাগরিক উদ্যোগ কাজ করে আসছে। তারা বুড়িগঙ্গা দখল-দূষণ থেকে নদী রক্ষার দাবি জানিয়ে আসছে। পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মো. আবদুস সোবহান বলেন, শিল্পবর্জ্য ও গৃহবর্জ্যের দূষণে বুড়িগঙ্গা মৃতপ্রায়। বর্ষার পানিতে নদী আবার বেঁচে ওঠে। এই বেঁচে ওঠা নদীটিই আমার চাই। এর জন্য নদী দখল ও দূষণ দূর করতে হবে। বর্ষায় নদী প্রাণ ফিরে পেয়েছে। সারাবছর নদীর এ অবস্থাই আমরা দেখতে চাই।

Print Friendly, PDF & Email

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর