যে ডাল ধরি, সেই ডাল ভাইঙ্গা পড়ে

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ আসমানীরে দেখতে যদি তোমরা সবাই চাও, রহিমুদ্দির ছোট্ট বাড়ি রসুলপুরে যাও।’ পল্লীকবি জসীমউদ্দীন কবিতায় তিনি যে আসমানীকে তুলে ধরেছিলেন, তিনি আজ বেঁচে নেই। তবে মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার দক্ষিণ জামসা গ্রামের বৃদ্ধা কৈকি রানী মণ্ডল (৭০) যেন তারই প্রতিচ্ছবি। ঘরের চাল খুলে গেছে। সেই চাল দিয়ে পানি পড়ে।

বাঁশের বেড়া ও দরজা- জানালা ভাঙা। চৌকি না থাকায় নিচে ঘুমায়। কুড়ানো পলিথিন ও চটের বস্তা দিয়ে ঘেরা স্যাঁতসেঁতে ঘর। শীতের সময় বাতাশ বয়। ঘরের বাইরে মাটির চুলা। কবির আসমানী তার পরিবারের সঙ্গে থাকলেও কৈকি রানীর একাই বসবাস। নেই তার স্বামী-সন্তান। সিংগাইর উপজেলার সাহরাইল গ্রামের ফুলচান মণ্ডলের মেয়ে কৈকি রানী। ছোট বেলাতেই বাবা ফুলচান মণ্ডল মারা যান। তখন তার বয়স আট বছর। এরপর মা মারা যান। মামার বাড়ি থেকে তাকে বিয়ে দেওয়া হয় হরিরামপুর উপজেলার বরিচড়া গ্রামের বনমালী মণ্ডলের সঙ্গে। কিন্তু ‘অভাগা যেদিকে যায়, সাগর শুকিয়ে যায়।’ তাই হয়েছে তার ক্ষেত্রে।

বিয়ের মাত্র দুই বছর বয়সেই স্বামী সাপের দংশনে মারা যান। হয়ে পড়েন অসহায়। ফের মামার বাড়িতেই ঠাঁই নিতে হয়। এরপর মামাও মারা যান। কৈকি রানীর ভাষায় ‘যে ডাল ধরি, সেই ডাল ভাইঙ্গা পড়ে ।’ এবার তিনি যাবেন কোথায়। যাওয়ার জায়গা নেই। যে ভিটিতে বসবাস করেন সেটা নাকি তার মামাতো ভাই গোসাই দাস মণ্ডলের। তিনিই তার জমিতে তাকে আশ্রয় দিয়েছেন বলে দাবি করেন তিনি। তবে কৈকি রানীর দাবি এটা তার নিজের জমি। বয়স ৭০ হলেও ভোটার আইডি কার্ডে ভুল করে ৫৯ লেখায় বয়স্ক ভাতা থেকেও বঞ্চিত কম বয়সের কারণে। তবে বিধবা ভাতা পান ছয় মাস পরপর। বয়সের ভারে দিনমজুরের কাজেও যেতে পারে না। আত্মীয়স্বজন ও পাড়াপড়শির কাছে চেয়ে-চিন্তে খেতে হয়। কিন্তু থাকার ঘর নেই। বৃষ্টি হলে ঘরে পানি জমে। তখন রাত জেগে বসে থাকতে হয়।

Print Friendly, PDF & Email

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর