টাইব্রেকারে বিদায়ঘণ্টা বাজল ব্রাজিলের, হারাল ৪-২ গোলে ক্রোয়েশিয়া

বিশ্বকাপের শেষ আটে ব্রাজিল ক্রোয়েশিয়াকে হারানোর পথেই ছিল। তবে অ্যান্টি ক্লাইম্যাক্স হয়ে এলো ক্রোয়েশিয়ার সমতাসূচক গোল। এরপর টাইব্রেকারে ব্রাজিলকে রুখেই দিল ক্রোয়াটরা। হারাল ৪-২ গোলে। তাতে নেইমারদের বিশ্বকাপ যাত্রা রুখে শেষ চারে চলে গেছে ক্রোয়াটরা।

পারলোনা ব্রাজিল। ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে নির্ধারিত ৯০ মিনিটে গোলশূ্ন্য থাকার পর খেলা গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। অতিরিক্ত সময়ে নেইমারের গোলে এগিয়ে যাওয়ার ঠিক দশ মিনিট ব্যবধানে পেটকোভিচের গোলে সমতায় ফেরে ক্রোয়েশিয়া। অতিরিক্ত সময়ে খেলা ১-১ ড্র হওয়ায় টাইব্রেকার হয়। পেনাল্টিশুটাউটে ব্রাজিলকে ৪-২ গোলের ব্যবধানে হারিয়ে সেমিফাইনালে উঠে যায় ক্রোয়েশিয়া।

বেশি সময় লিড ধরে রাখতে পারেনি ব্রাজিল। নেইমারের গোলে এগিয়ে যাওয়ার মাত্র ১০ মিনিট ব্যবধানে গোল করে ক্রোয়েশিয়াকে (১-১০) সমতায় ফেরান পটকোভিচ। খেলার ১১৬ত মিনিটে গোল করেন তিনি।

এর আগে অতিরিক্ত সময়ের ১৬তম মিনিটে গোল করে ব্রাজিলকে (১-০) এগিয়ে নেন নেইমার।

জিতলে সেমিফাইনাল নিশ্চিত। হারলে বিদায়। এমন কঠিন সমীকরণের কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচে পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিলের মুখোমুখি গত আসরের রানার্সআপ ক্রোয়েশিয়া।

শুক্রবার কাতারের এডুকেশন সিটি স্টেডিয়ামে প্রতিপক্ষ ক্রোয়েশিয়ার কৌশলে এবং নিজেদের ব্যর্থতায় ব্রাজিল। ৯০ মিনিটের খেলা গোলশূন্য ড্র। খেলা গড়াল অতিরিক্ত ৩০ মিনিটে। অতিরিক্ত সময়ে গোল না হলে পেনাল্টিশুটাউট হবে।

দ্বিতীয় রাউন্ডে দক্ষিণ কোরিয়াকে উড়িয়ে ব্রাজিল শেষ আটে উঠেছে। রাশিয়া বিশ্বকাপের রানার্স আপ ক্রোয়েশিয়ার সঙ্গে এই ক্রোয়েশিয়ার অনেক পার্থক্য থাকলেও লুকা মদ্রিচের নেতৃত্বে দলটি এখনও প্রতিরোধে সক্ষম সেটিই প্রথম ৪৫ মিনিটে প্রমাণ হয়েছে।

ব্রাজিল প্রথমার্ধে খুব একটা ছন্দময় ফুটবল খেলতে পারেনি। বাম প্রান্ত দিয়ে খানিকটা আক্রমণের চেষ্টা ছিল। ভিনিসিয়াস ও নেইমারের বোঝাপড়ায় ক্রোয়েশিয়ার রক্ষণ দুই একবার ভেদ করলেও চূড়ান্ত সফলতা আসেনি।

প্রথমোর্ধে দুই দলই খেলেছে সমান সমান। বল দখলের লড়াইয়ে ক্রোয়েশিয়া কোনো অংশেই কম ছিল না ব্রাজিলের চেয়ে। ব্রাজিল পাস দিয়েছে ২৭৯টি। ক্রোয়েশিয়া দিয়েছে ২৬৭টি। গোলমুখে ব্রাজিল শট নিয়েছে ৫টি। ক্রোয়েশিয়া নিয়েছে ৩টি।

১৩তম মিনিটেই গোলের দারুণ সুযোগ পেয়েছিলো ক্রোয়েশিয়া। দুর্দান্ত কাউন্টার অ্যাটাক থেকে বল পেয়ে যায় ক্রোয়েশিয়া। ডান পাশ থেকে জুরানোভিচ বল এগিয়ে দিলে ছোট বক্সের ভেতর দিয়ে বল যাওয়ার সময় তাতে পা লাগানোর চেষ্টা করেন প্যালাসিচ এবং পেরিসিচ। কিন্তু কেউ বলে পা লাগাতে পারেননি। গোলও হয়নি। বেঁচে যায় ব্রাজিল।

২০ মিনিটে বল নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করেন ভিনিসিয়ুস। নেইমারের সঙ্গে ওয়ান টু ওয়ান করে বল নিয়ে শট করেন ক্রোয়েশিয়ার জালে। কিন্তু ডিফেন্ডারের পায়ে লেগে যায়। ফিরতি বলে আবারও নেইমার তিন-চারজনকে কাটিয়ে শট নেন। যদিও ছিল দুর্বল শট। গোলরক্ষকের কাছে বল।

২২ মিনিটে ক্যাসেমিরোর দুর্দান্ত শট, কর্নারের বিনিময়ে রক্ষা। ৩০ মিনিটে ব্রাজিলের বক্সের সামনে থেকে দুর পাল্লার শট নেন জুরানোভিচ। কিন্তু বলটি চলে যায় ব্রাজিলের পোস্টের অনেক ওপর দিয়ে।

৪০ মিনিটে বক্সের বাম পাশে রিচার্লিসনকে ফাউল করা হলে ফ্রি-কিক দেয়া হয়। কিক নেন নেইমার। অসাধারণ এক কিক নেন নেইমার। কিন্তু বল ধরে ফেলেন ক্রোয়েশিয়ার গোলরক্ষক।

৪৭তম মিনিটে ডান পাশ থেকে রাফিনহা ক্রস করেছিলেন। কিন্তু নেইমার এবং ভিনিসিয়ুস জুনিয়র দুর্দান্ত সুযোগ পেয়েও পারেনি বলটি ক্রোয়েশিয়ার জালে জড়াতে। ফিরতি বলে আবারও ভিনিসিয়ুস থেকে নেইমার বল পেয়েছিলেন। কিন্তু রিচার্লিসন অফসাইড হয়ে যান।

৫৫তম মিনিটে বাম পাশে দানিলো বল এগিয়ে দেন নেইমারকে। কয়েকজনকে কাটিয়ে অসাধারণ এক শট নেন তিনি। কিন্তু গোলরক্ষক বলটি ধরে ফেলেন।

৫৬ মিনিটে মিডফিল্ড থেকে ডান পাশে পাস দেন অ্যান্টোনি। বক্সের শেষ প্রান্ত থেকে ক্রস করেন রিচার্লিসন। কিন্তু ডিফেন্ডাররা রক্ষা করায় গোল থেকে বেঁচে যায় ক্রোয়েশিয়া।

৬৬ তম মিনিটে রদ্রিগোর পাস থেকে পাকুয়েতা অসাধারণ এক শট নিয়েছিলেন। কিন্তু গোলরক্ষক অসাধারণ দক্ষতায় বলটি ফিরিয়ে দেন। ফিরতি বলেও গোলের চেষ্টা করেছিলো ব্রাজিল। কিন্তু ডিফেন্সে গিয়ে বল ফিরে আসে।

৭৬তম মিনিটে দারুণ একটি সুযোগ পেয়েছিলেন নেইমার। কিন্তু গোলরক্ষকের দৃঢ়তায় এবারও বেঁচে যায় ক্রোয়েশিয়া।

৮০ তম মিনিটে রদ্রিগোর পাস থেকে বল পেয়ে লুকাস পাকুয়েতা বাম পায়ের দারুণ এক কিক নিয়েছিলেন। কিন্তু আবারও গোলরক্ষক বাঁচিয়ে দিলেন ক্রোয়েশিয়াকে।

৮২তম মিনিটে রদ্রিাগোর কাছ থেকে বল পেয়ে রিচার্লিসন হেড করেন। কিন্তু বল চলে যায় পোস্টের ওপর দিয়ে। ৮৬তম মিনিটেও দারুণ এক সুযোগ নষ্ট হয় ব্রাজিলের। কর্নারের বিনিময়ে রক্ষা করে ক্রোয়েশিয়ান ডিফেন্ডার।

১০২ মিনিটে দারুণ সুযোগ পেয়েছিলো ক্রোয়েশিয়া। কিন্তু ব্রোজোভিচের শটটি পোস্টের ওপর দিয়ে চলে যায়।

১০৫ মিনিটে নেইমারের গোল মাঝ মাঠ থেকে বল নিয়ে ওয়ান-টু করে এগিয়ে যান। শেষ টাচটা দেন লুকাস পাকুয়েতা। সর্বশেষ গোলরক্ষ লিভাকোভিককে কাটিয়ে ক্রোয়েশিয়ার জালে বল জড়িয়ে দেন নেইমার।

Print Friendly, PDF & Email

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর