৮৪ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ বিপর্যয়ে তুরস্ক

সিরিয়া-তুরস্ক সীমান্তে আঘাত হানা ভূমিকম্পটি কয়েক দশকের মধ্যে তুরস্কের সবচেয়ে ভয়াবহ বিপর্যয় বলে উল্লেখ করেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান। তিনি বলেছেন “৮৪ বছরের মধ্যে দেশের সবচেয়ে ভয়াবহ বিপর্যয় এই ভূমিকম্প।“

এই ভূমিকম্পে এরইমধ্যে দুই হাজার ছাড়িয়েছে মৃতের সংখ্যা। তীব্র ঠাণ্ডা তুষারপাতের মধ্যে চিরুনি অভিযানের মত করে উদ্ধার অভিযান চালানো হচ্ছে।যে কারণে মৃতের সংখ্যা লাফিয়ে বাড়ছে।

জীবিতরা জানিয়েছেন, কম্পন বন্ধ হতে দুই মিনিট সময় লেগেছে।

কাহরামানমারাসের বাসিন্দা মেলিসা সালমান বলেছেন, ভূমিকম্প অঞ্চলে বসবাস করার কারণে ভূমিকম্পের সাথে তিনি পরিচিত ছিলেন এবং অভ্যস্ত ছিলেন। তবে সোমবারের কম্পনকে তিনি একেবারেই আলাদা বলে উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, “প্রথমবার আমরা এরকম কিছু অনুভব করেছি। আমরা ভাবছিলাম সবকিছু ধ্বংস হয়ে শেষ হয়ে গেলো।”

নিহতদের অনেকেই যুদ্ধবিধ্বস্ত উত্তর সিরিয়ার, যেখানে লাখ লাখ শরণার্থী সিরিয়া-তুরস্ক সীমান্তের দুই পাশের শিবিরে বসবাস করতেন।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ছবি ও ভিডিওতে দেখা গেছে হাজার হাজার বিল্ডিং ধসে পড়েছে। বেশ কয়েকটি ভিডিওতে দেখা গেছে ধসে পড়ার মুহূর্তটিও যখন সবাই আশ্রয়ের জন্য ছোটাছুটি করছে।

অনেক ছবিতে দেখা গেছে চার-পাঁচ তলা উঁচু অনেক দালান এখন সমতল, রাস্তাঘাট ধ্বংস হয়ে গেছে এবং যতদূর চোখ যায় ধ্বংসস্তূপের বিশাল পাহাড়।

এই ভূমিকম্পে তুরস্কের জ্বালানি অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভিডিওতে দেখা গেছে দক্ষিণ তুরস্কে বড় ধরনের আগুন দেখা জ্বলছে। সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীরা দাবি করেছেন যে তারা গ্যাস পাইপলাইনের ক্ষতির কারণে ঘটেছে।

এরইমধ্যে তুর্কি রেড ক্রিসেন্ট সবাইকে রক্তদান করার জন্য আহ্বান জানিয়েছে এবং সংস্থার সভাপতি, কেরেম কিনিক টুইটারে বলেছেন যে ক্ষতিগ্রস্থ অঞ্চলে অতিরিক্ত রক্ত এবং চিকিৎসা পণ্য পাঠানো হচ্ছে।

আন্তর্জাতিক মহলে সাহায্য চেয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগান। এরইমধ্যে ৪৫ টি দেশ থেকে সাহায্যের আশ্বাস পওয়া গেছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

তুরস্কের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুলেমন সোয়লু বলেছেন, প্রাথমিক ভূমিকম্পে ১০টি শহর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যার মধ্যে রয়েছে হাতায়, ওসমানিয়ে, আদিয়ামান, মালটিয়া, সানলিউরফা, আদানা, দিয়ারবাকির এবং কিলিস।

সিরিয়ার দুর্যোগ এলাকার একজন উদ্ধারকর্মী ধ্বংসযজ্ঞের বর্ণনা দেওয়ার সময় কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ার বিভিন্ন শহর ও গ্রামের অনেক ভবন ধসে পড়েছে। এখনও, অনেক পরিবার ধ্বংসস্তূপের নিচে রয়েছে। আমরা তাদের বাঁচানোর চেষ্টা করছি কিন্তু এটা আমাদের জন্য খুবই কঠিন কাজ।আমাদের সাহায্য দরকার।“

প্রথম ভূমিকম্পের কয়েক ঘন্টা পরে, সিরিয়ার আজাজে ধ্বংসস্তূপ থেকে একটি শিশুকে টেনে আনা হয়েছিল রক্তাক্ত কিন্তু জীবিত অবস্থায়।

ভূমিকম্পটি এতোটাই শক্তিশালী ছিল যে সাইপ্রাস, লেবানন এবং ইসরায়েলের মতো দূর থেকেও অনুভূত হয়েছে।

ভূমিকম্পের পরে দুটি আফটারশক অনুভূত হয়েছে। যদিও তুরস্কের দুর্যোগ ও জরুরি ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের একজন কর্মকর্তা বলেছেন যে এটি “আফটারশক নয়” বরং এটি আলাদা আরেকটি ভূমিকম্প।“

১৯৩৯ সালে পূর্ব তুরস্কে যেই ভূমিকম্পটি আঘাত হেনেছিল তাতে ৩৩ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। এরপর ১৯৯৯ সালে অপর আরেকটি ভূমিকম্পে ১৭ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিল।

সূত্র: বিবিসি

Print Friendly, PDF & Email

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর