মাকে পতিতাপল্লী থেকে উদ্ধার করতে চায় মেয়ে

উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে প্রতিষ্ঠালাভের পর গর্ভধারিণী মাকে পতিতাপল্লীর অন্ধকার জগৎ থেকে উদ্ধার করতে চায় প্রীতি (ছদ্মনাম)। চায় সামাজিক পরিবেশে মর্যাদার সঙ্গে ছোট দুই ভাই-বোনকে নিয়ে বসবাস করতে। আলাপচারিতায় ভবিষ্যৎ স্বপ্ন সম্পর্কে বলতে গিয়ে এবারের এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ এ ছাত্রী এ কথাগুলো বলে। খবর যুগান্তর’র।
প্রীতি রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা ফকীর আবদুল জব্বার গার্লস স্কুল থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে মানবিক বিভাগ থেকে উত্তীর্ণ হয়। প্রীতির জন্ম গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়ায় দেশের সর্ববৃহৎ পতিতাপল্লীতে। তাকে মানুষের মতো মানুষ করতে মা ছোট থেকেই স্থানীয় কেকেএস সেভহোমে পাঠিয়ে দেন। সেখানে থেকেই লেখাপড়া করে এ পর্যন্ত আসা।
সেভহোমে সাক্ষাৎকালে প্রীতি এ প্রতিনিধিকে জানায়, সে স্থানীয় কামরুল ইসলাম ডিগ্রি কলেজে ভর্তি হতে চায়। উচ্চ মাধ্যমিক পাসের পর পার্টটাইম কোনো চাকরির পাশাপাশি উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করা তার স্বপ্ন রয়েছে। প্রায় ১৭ বছর বয়সী প্রীতি অনিশ্চয়তার বিষয়ে জানায়, ১৮ বছর বয়স পূর্ণ হলে তাকে আর সেভহোমে রাখবে না। তখন কোথায় থেকে কিভাবে লেখাপড়া করবে তা সে জানে না।
প্রীতি আরও জানায়, সামর্থ্য থাকলে মাকে এখনই পল্লী থেকে বের করে আনতাম। এ গ্লানি তার ভালো লাগে না। কিন্তু তার সে সামর্থ্য নেই। তাছাড়া তার মা আড়াই থেকে ৩ লাখ টাকার ধারদেনায় জর্জরিত। নিজেই ঠিকমতো খেতে-পরতে পারছে না। সেখানে তার একটি ছোট ভাই রয়েছে। আরেকটি ছোট বোন এখানকার সেভহোমেই তার সঙ্গে রয়েছে। সেভহোমের প্রকল্প কর্মকর্তা আমজাদ হোসেন জানান, সেভহোমে বর্তমানে ১৮ জন মেয়েশিশু রয়েছে। গত কয়েক বছরে এ হোম থেকে ১১৮ জন মেয়ে সমাজের মূল স্রোতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বর্তমানে ২০-২২ জন মেয়ে দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে উচ্চশিক্ষায় অধ্যয়নরত রয়েছে। কিন্তু কয়েক বছর ধরে প্রচণ্ড চাপ সত্ত্বেও নতুন কোনো মেয়েকে তারা ভর্তি নিতে পারছে না। ফলে প্রীতির মতো শত শত শিশু অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ছে।
কেকেএসের নির্বাহী পরিচালক ফকীর আবদুল জব্বার জানান, সেভ দ্য চিলড্রেনের সহায়তায় তারা এ হোমে পতিতাপল্লীর মেয়েদের নিরাপদ পরিবেশে রেখে স্বাভাবিক বিকাশ ও লেখাপড়ায় সহযোগিতা করে থাকেন। কিন্তু কয়েক বছর ধরে সেভ দ্য চিলড্রেন এ প্রক্রিয়ায় মেয়েদের রাখায় নিরুৎসাহিত করায় তারা নতুন করে কোনো মেয়েকে রাখতে পারছেন না। ফলে প্রীতির মতো মেয়েদের বাধ্য হয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে ছেড়ে দিতে হচ্ছে। ওদের সামাজিক নিরাপত্তা ও ভবিষ্যৎ স্বপ্নপূরণে সরকার ও সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসা দরকার।

Print Friendly, PDF & Email

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর