সহায়ক সরকারের দাবি থেকে সরছে বিএনপি

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ সহায়ক সরকারের দাবি থেকে সরে গিয়ে রাজনৈতিক সমঝোতাকে প্রাধান্য দিচ্ছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি। এ কারণে সহায়ক সরকারের রূপরেখার চেয়ে কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করতে সক্রিয় রয়েছেন দলটির শীর্ষ নেতারা। তবে দলটির নেতারা তাদের অবস্থান পরিবর্তনের কথা মানতে নারাজ।

আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালনার জন্য গত বছরের শেষদিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবির পরিবর্তে ‘সহায়ক সরকার’-এর দাবি তোলে বিএনপি। তবে সহায়ক সরকারের বিস্তারিত রূপরেখা প্রকাশ না করলেও এ নিয়ে দলটির নেতারা বেশ সোচ্চার ছিলেন। সহায়ক সরকারের রূপরেখা তৈরিতে সংশ্লিষ্টরা বিষয়টিকে আগের মতো আর গুরুত্বও দিচ্ছেন না বিষয়টিতে।

জানা যায়, বিএনপির স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্য, দল সংশ্লিষ্ট একাধিক বুদ্ধিজীবী, দেশ-বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক এবং নির্বাচন বিষয়ে আন্তর্জাতিকভাবে অভিজ্ঞ এমন কয়েকজন এই রূপরেখা তৈরিতে কাজ করেন।

২০১৬ সালের ১৮ নভেম্বর নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে সংবাদ সম্মেলনের সময় সহায়ক সরকারের দাবি তোলেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। রমজান মাসে বেশ জোরেশোরে বলা হচ্ছিল, সহায়ক সরকারের দাবির খসড়া চূড়ান্ত। দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামের বৈঠকে খসড়াগুলো পর্যালোচনা শেষে চূড়ান্ত করে ঈদ-উল ফিতরের পর তা তুলে ধরা হবে। কিন্তু ঈদের পর খালেদা জিয়া লন্ডন সফরে যাওয়ায় সহায়ক সরকারের দাবির কার্যক্রম স্তিমিত হয়ে পড়ে। সহায়ক সরকার দাবি তোলার নয় মাস পার হলেও এর রূপরেখা এখনও অন্ধকারে। কবে নাগাদ এটি আলোর মুখ দেখবে, সে বিষয়েও সুনির্দিষ্ট করে কেউ বলতে পারছেন না।

সহায়ক সরকারের রূপরেখার অগ্রগতি প্রসঙ্গে রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘বেগম জিয়া দেশের বাইরে আছেন। তিনি ফিরে বলতে পারবেন।’

এদিকে, সহায়ক সরকারের রূপরেখা বাস্তবায়নের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে কর্মসূচি প্রণয়ন ও আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরুর আগে দলকে সংগঠিত করার যে উদ্যোগ ছিল, তার অগ্রগতিও উল্লেখযোগ্য নয়। বিশেষ করে বিভিন্ন সময় দল ছেড়ে যাওয়া নেতাদের মধ্যে যাদের ইতিবাচক ভাবমূর্তি রয়েছে এবং নানা কারণে যারা অনেকদিন ধরে দল থেকে দূরে সরে আছেন, তাদের দলে ফেরানোর ও সক্রিয় করার যে কার্যক্রম নেওয়া হয়েছিল, তাতেও ভাটা পড়েছে।

এছাড়া বিএনপি প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী এবং দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য অলি আহমদকে দলে ফিরিয়ে নিতে যে আলোচনা ছিল তাও চুপসে গেছে। বরং উল্টো দলছুট নেতাদের নিয়ে বিএনপির বিকল্প রাজনৈতিক জোট গ্রহণের প্রয়াস চলছে।

বিএনপির সংস্কারপন্থী হিসেবে পরিচিত সরদার সাখাওয়াত হোসেন বকুল বলেন, ‘আমি এলাকায় কাজ করছি। তবে সাংগঠনিকভাবে এখন তৎপরতা নেই।’

সূত্র জানায়, লন্ডন সফররত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সেখানে ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপির কয়েকজন নেতা ছাড়াও ব্রিটেনের পররাষ্ট্রদপ্তরের পদস্থ কর্মকর্তা, সরকার ও বিরোধীদলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। আগামী সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিএনপি প্রধানের এ বৈঠক বাংলাদেশের রাজনীতিতে বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। দেশের রাজনীতিতে সহায়ক সরকার ইস্যু তুলে দিয়ে বিদেশ গিয়ে  রাজনৈতিক সমঝোতাকে প্রাধান্য দিচ্ছেন খালেদা জিয়া।

বিএনপির অংশগ্রহণ ছাড়া যেন এবার দেশে কোনো নির্বাচন না হয়, মামলা-হামলায় জর্জরিত বিএনপি নেতারা যেন নির্বাচন থেকে বঞ্চিত না হন, সে কারণে আন্তর্জাতিক মহল দিয়ে সরকারের প্রতি চাপ সৃষ্টি করে রাজনৈতিক সমঝোতা চায় বিএনপি। এই সমঝোতা না হলে একাদশ নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। আর খালেদা জিয়ার লন্ডন সফর সফল হলে দেশে ফিরে ঈদের পর সহায়ক সরকার ইস্যুতে একটা রূপরেখা দেবেন। সেটাকে সামনে রেখে বিএনপি নির্বাচনের জন্য জোর প্রস্তুতি নেবে।

সহায়ক সরকারের রূপরেখার অগ্রগতি প্রসঙ্গে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘এটাতো নেত্রী বিদেশ যাওয়ার আগে প্রাথমিকভাবে আলোচনা করেছিলেন। ওটা ওই অবস্থায় রয়েছে। নেত্রী দেশে ফিরলে এটি চূড়ান্ত করা হবে।’

কবে নাগাদ এই রূপরেখা পেশ করা হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ দিন তারিখ দিয়ে বলা যাবে না। নেত্রী বিদেশ থেকে ফিরলে চূড়ান্ত করা হবে। উপযুক্ত সময়ে তা পেশ করা হবে।

Print Friendly, PDF & Email

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর