নির্বাচন নিয়ে মতবিনিময়

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এখনো এক বছরের বেশি সময় বাকি। গত নির্বাচনে বিএনপিসহ অনেক দল নির্বাচনে অংশ না নিয়ে প্রতিরোধের ঘোষণা দেওয়ায় দীর্ঘ সময় ধরে সংঘাত-সংঘর্ষ হয়েছে। বহু মানুষের প্রাণ গেছে। স্বাভাবিকভাবেই নির্বাচনের সময় যত ঘনিয়ে আসছে, সাধারণ মানুষের মধ্যে উদ্বেগ-শঙ্কা বাড়ছে। এসব বিষয় বিবেচনা করে বর্তমান নির্বাচন কমিশন (ইসি) নির্বাচনের দেড় বছর আগেই রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে। এরপর কমিশন সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে করণীয় ঠিক করতে ধারাবাহিকভাবে রাজনৈতিক দল, নির্বাচনসংক্রান্ত বিশেষজ্ঞ, পর্যবেক্ষক, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব, নারী সংগঠনের প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে আলোচনা করছে। এরই ধারাবাহিকতায় গত বুধ ও বৃহস্পতিবার প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিদের সঙ্গে মতবিনিময় অনুষ্ঠিত হয়। এসব আলোচনা থেকে যেসব পরামর্শ উঠে আসছে তার ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক করার সর্বাত্মক চেষ্টা চালাবে। আমরাও চাই, সব দলের অংশগ্রহণে আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও অবাধ হোক।

প্রকাশিত খবরাখবর থেকে যত দূর জানা যায়, কমিশনের ধারাবাহিক আলোচনায় নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ করার ব্যাপারে অনেক গুরুত্বপূর্ণ মতামত উঠে এসেছে। পাশাপাশি কিছু বিষয়ে পরস্পরবিরোধী মতামতও পাওয়া গেছে।

এর মধ্যে একটি হচ্ছে, নির্বাচনে সেনা মোতায়েন প্রসঙ্গ। কেউ কেউ নির্বাচনের যথেষ্ট আগে থেকেই সারা দেশে পূর্ণ সেনা মোতায়েন চেয়েছেন। কেউ কেউ সেনা মোতায়েন না করার পরামর্শ দিয়েছেন। আবার কেউ কেউ মধ্যপন্থা হিসেবে নির্বাচনের দু-এক দিন আগে থেকে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে কিংবা সীমিত পরিসরে সেনা মোতায়েনের পরামর্শ দিয়েছেন। কেউ কেউ বলেছেন, নির্বাচনের আগে পরিস্থিতি কেমন হয় তা বিবেচনা করেই এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এত আগে বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক করা অর্থহীন। এ ক্ষেত্রে কমিশন সেনাবাহিনীরও মতামত জেনে নিতে পারে। কোন পরিস্থিতিতে কী কাজের ক্ষেত্রে সেনাবাহিনী কী ধরনের ভূমিকা রাখতে স্বচ্ছন্দ বোধ করবে এবং তার প্রক্রিয়া কী হবে—সেটা তারাই ভালো বলতে পারবে। রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনায় আরেকটি বিষয়ে তীব্র মতবিরোধ রয়েছে। সেটা হলো নির্বাচনকালীন সরকার। বিএনপিসহ কিছু দল তত্ত্বাবধায়ক বা সহায়ক সরকার দাবি করেছে। আবার ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও তাদের পক্ষের কিছু দল অনির্বাচিত কোনো সরকার প্রতিষ্ঠার ঘোর বিরোধী। তাদের মতে, বর্তমান সরকারই তখন সহায়ক সরকারের ভূমিকা পালন করবে এবং নির্বাচন কমিশন স্বাধীনভাবে নির্বাচন পরিচালনা করবে। বিতর্ক বা মতবিরোধ থাকবেই, তবে তা যেন নির্বাচন বর্জনের পথে না যায় সে ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।

নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করার জন্য নির্বাচন কমিশনকেই মূল দায়িত্ব পালন করতে হবে। আমাদের কমিশনের চেয়ে কম ক্ষমতা নিয়েও ভারতসহ অনেক দেশে নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারছে। আমরা আশা করি, বর্তমান নির্বাচন কমিশন তাদের ক্ষমতার পরিপূর্ণ সদ্ব্যবহার করে জাতিকে একটি সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দিতে সক্ষম হবে।

Print Friendly, PDF & Email

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর