ফিরে গিয়ে বাপ-দাদার কবরের পাশে ঘুমাতে চান ফজল

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের তমবাজার এলাকা থেকে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু সীমান্তের বাইশফাঁড়ি দিয়ে বাংলাদেশে ঢোকেন ফজল আহমদ (৭০)। দুই ছেলে আবদু ছালাম ও ফজল আহমদ বাঁশের ভারে তুলে কাঁধে করে এখানে নিয়ে আসেন। সঙ্গে ফজল আহমদের স্ত্রীসহ আরো ছয়-সাতজন সদস্য। সীমান্ত পেরিয়ে তারা বুধবার সন্ধ্যায় সরাসরি চলে আসে উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে। ১২ দিন দুর্গম পাহাড়ি পথ পাড়ি দিয়ে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু সীমান্তের ওয়াহ্লাদং পাহাড় (সীমান্তের একমাত্র উঁচু পাহাড়) পেরিয়ে এবং আমজুখাইয়া আমতলীর বিওপি (বর্ডার আউট পোস্ট) হয়ে বাংলাদেশে ঢুকেছে তারা।

ফজল আহমদ বাঙালী কণ্ঠর প্রতিবেদকদের সহাস্যে বলেন, ‘আঁই আবার আস্যিদে। এডে আঁরার আর জাইগা ন অইব। ইতারা আঁরারে আবারও দোড়াই দিইয়্যে। ’ অর্থাৎ ‘আমি আবারও এসেছি। সেখানে (মিয়ানমার) আমাদের আর জায়গা হবে না। তারা (মিয়ানমার সেনাবাহিনী) আমাদের আবারও তাড়িয়ে দিয়েছে।

চলনশক্তিহীন বৃদ্ধ ফজল আহমদ বাঙালী কণ্ঠকে জানান, ১৯৭৮ সালে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর ‘ড্রাগন’ অপারেশনের শিকার হয়ে তিনি প্রথমবার বাংলাদেশে এসেছিলেন। ছিলেন প্রায় দুই বছর। বৃদ্ধ ফজল আহমদ ছলছল চোখে বলেন, ‘এর আগেও কয়েকবার মিয়ানমার সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের ওপর দমন-নিপীড়ন চালিয়েছিল। কিন্তু সেই সময় এভাবে বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়া বা রোহিঙ্গাদের পৈশাচিক কায়দায় হত্যা, নারীদের ধর্ষণ বা শিশুদের হত্যা করেনি। কিন্তু এবারের দমন-নিপীড়ন স্মরণকালের ভয়াবহতাকেও হার মানিয়েছে। এবারের নির্যাতনের সঙ্গে রাখাইন সন্ত্রাসী (তাদের ভাষায় মগ), মিলিটারি (সেনাবাহিনী), বিজিপিসহ সবাই একাট্টা হয়ে রোহিঙ্গাদের নিধন করছে। ’ এবার ফেরার পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি। ফজল আহমদ বলেন, ‘বাপ-দাদার ভিটে, কবরস্থান ফেলে পালিয়ে আসতে মন চাইছিল না। ’

দেশ হারানো এই মানুষটি বলছিলেন, ‘বিশ্বের বড় বড় ক্ষমতাবানরা যদি রোহিঙ্গা নিধনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতো, তাহলে মিয়ানমার কোনো দিনই আমাদের এমন পরিণতি করতে পারত না। আবার কি আমি ফেরত যেতে পারব সেখানে, যেখানে আমার বাপ-দাদারা কবরে শুয়ে আছে। আমারও ইচ্ছা রয়েছে, মারা যাওয়ার পর বাপ-দাদার কবরের পাশে সমাহিত হতে। কিন্তু আমার সেই আশা কি আদৌ পূর্ণ হবে।

Print Friendly, PDF & Email

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর