বৃষ্টির কারণে ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কা

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ সম্প্রতি নওগাঁর ১১ উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে গেছে বন্যা। সেই ঘা এখনো শুকায়নি। ঘুরে দাঁড়াতে ক্ষতিগ্রস্ত জমিতে নতুন করে আমনের আবাদ করেন কৃষক। কিন্তু সে আশায় গুড়েবালি। শুক্রবার দুপুর থেকে শুরু হওয়া ঝড় ও বৃষ্টি শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত হয়। এতে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। যার ফলে এখন ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন কৃষকরা।

জেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, গেল বন্যায় রোপা আমন, আউশ ধান এবং সবজি আবাদের মোট ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৫২ হাজার ৬০৯ হেক্টর জমি। জেলায় ১ লাখ ৬১ হেক্টর জমিতে আমন ধানের আবাদ করা হয়। সাম্প্রতিক বৃষ্টিপাত ও ঝড়ে প্রায় ২০ হাজার হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে।

অনেক জমিতে ধান গাছ থেকে সম্পূর্ণ ধান বেরিয়ে গেছে। ধানের কোথাও দুধ এসেছে। আবার কোথাও ধান পুষ্ট (শক্ত) হতে শুরু করায় মাথা ভারি হয়ে হেলে পড়েছে। মাসখানেক পরই নতুন ধান ঘরে ওঠানোর পালা। কিন্তু গেল দু`দিনের বৃষ্টির সঙ্গে ঝড়ো হওয়ায় ধানের গাছগুলো শুয়ে পড়েছে। জমিতে পানি জমে যাওয়ায় ভাসছে ধানগাছ। ধানের এ অবস্থা দেখে হতাশ কৃষকরা।

পত্মীতলা উপজেলার পাটিচরা গ্রামের কৃষক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বৃষ্টি ও ঝড় যেন মরার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দেখা দিয়েছে। অক্টোবরের বন্যায় ফসল তলিয়ে যাওয়ায় উচ্চ দামে ধানবীজ সংগ্রহ করে জমিতে রোপন করা হয়। এখন গাছ থেকে ধান বেরোনোর পরই ঝড়-বৃষ্টিতে সেগুলো মাটিতে শুয়ে পড়েছে।

নওগাঁ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মনোজিত কুমার মল্লিক বলেন, আশা করা হচ্ছে আবহাওয়া ভালো হলে ধানের কোনো ক্ষতি হবে না। জমি থেকে পানি বের করে দেয়ার জন্য কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। যদি কোনো ভাবে জমি থেকে পানি সরিয়ে ফেলা সম্ভব হয় তাহলে অনেকটাই রক্ষা পাবে। আর যেটা একেবারেই পানির নিচে তলিয়ে গেছে সেটা পচে নষ্ট হয়ে যাবে।

তিনি আরো বলেন, বৃষ্টিতে ক্ষতি এবং উপকার দুটোই হয়েছে। আগাম শাক সবজির জন্য বৃষ্টি খুবই উপকার বয়ে এনেছে। আবার বৃষ্টির কারণে ধানের ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া কিছুদিন আগে যে বাদামি ঘাস ফড়িংয়ের (কারেন পোকার) উপক্রম হয়েছিল তা একেবারেই থাকবে না। এতে করে কৃষকদের বাড়তি কীটনাশক প্রয়োগ করার প্রয়োজন হবে না।

এদিকে ঝিনাইদহে এবার আমান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯৭ হাজার ১শ পঞ্চাশ হেক্টর। সেই লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে কৃষকেরা আমন আবাদ করেছেন ৯৯ হাজার ৩শ ৫৫ হেক্টর। আবহাওয়া অনুকূল ও রোগ-বালাই কম থাকায় বাম্পার ফলনের আশা করছিলেন কৃষকরা। কিন্তু হঠাৎ ৩ দিনের বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়ায় মাঠের পর মাঠ প্রায় ধানগাছ লুটিয়ে পড়েছে মাটিতে। তবে কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন ১৭ হাজার হেক্টর জমি আক্রান্ত হয়েছে, এতে ফলনের তেমন কোনো ক্ষতি হবে না।

শৈলকূপার কাঁচেরকোল গ্রামের চাষী মৃনাল কুমার জানান, প্রান্তিক ও বর্গাচাষিদের মাথায় হাত উঠেছে উঠতি আমনের এমন বিপর্যয় দেখে। কোনো কোনো কৃষকের সম্পূর্ণ খেতই লুটিয়ে পড়েছে। বাম্পার পলনের আশা হঠাৎ করেই হতাশায় পরিণত হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, বিভিন্ন ফসল চাষে কৃষকরা বার-বার ক্ষতিগ্রস্ত হলেও এবার আমন আবাদে বাম্পার ফলনের আশা করছিলেন তারা। তবে উঠতি আমন ধান যখন ঘরে আসার পথে তখনই দেখা দিয়েছে প্রাকৃতিক বিপর্যয়। নিম্ন চাপের ফলে কয়েকদিনের টানা বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়ায় জেলার ৬টি উপজেলার বেশিরভাগ আমনের খেত পড়ে গেছে মাটিতে, কোথাও বা ভাসছে পানিতে। ফলে বিঘা প্রতি ২০/২৫ মণ ধানের আশা করলেও তা নেমে অর্ধেকে চলে আসবে বলে জানান কৃষকরা।

Print Friendly, PDF & Email

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর