ভালবাসা মায়াবী চোখে রাক্ষসীর

সেই তোমার মায়াবী চোখ, যেখানে কাজলে আঁকা ভ্রমর কালোরঙ। হাসিলে জোঁসনা ঝরে, মেঘেরা পায় লজ্জা। সবুজের রুপ যেন হার মানে তোমাকে দেখে। কে গো তুমি? কে দিয়েছে তোমাকে এত রুপ।তুমিতো নও ঝিনুকের আবরণে ঢাকা মুক্তা। ভুলাইলে মন তোমার হাসিতে এক পলকের চাহনিতে। কেড়ে নিয়ে গেলে আমার অতীত বর্তমান আর ভবিষ্যৎ। তুমি তো নও রাস্তায় উত পেতে থাকা ছিনতাইকারী। তুমি তো নও সাগরের বুকে জলদস্যু। কেন ডুবাইলে মাঝ সাগরে আমার ভালবাসার পাল ছেড়া নৌকা। কণ্ঠশিল্পী আসিফ গেয়েছিল সেই গান”ওপ্রিয়া তুমি কোথায়”কিন্তু সে যুগেই তুমি নজর কেড়েছিলে কত যুবকের। তারা গেয়েছিল” ও মুক্তা ও মুক্তা তুমি কোথায়” একটি নির্দিষ্ট গন্ডির ভিতরে।কি যাদু এঁটেছিলে তোমার মায়াবী চোখে শত যুবকের মত আমিও হারিয়ে গিয়েছিলাম রাক্ষসী ভালবাসার গহীন বনে।ভুলিনাই আজও তোমাকে কারণ তুমি রাক্ষসী হলেও ভালবেসেছিলাম তোমাকে।তুমি কি পেড়েছ রাক্ষসী স্বত্বাকে বিসর্জন দিতে?ছিলে নুন্নেহার হয়েছ মুক্তা ডেকেছি তোমায় স্বর্ণালী,,,,,কোথায় কেমন আছ তুমি????????
একজন গার্মেন্টস শ্রমিক মুক্তা অপরূপ রুপের অধিকারী ছিল, তার চোখের দিকে একবার তাকালে যে কেউ প্রেমে পরে যেত।
মুক্তা আর অপু একি সেকশনে কাজ করে। মুক্তা অপুর হেলপার হিসেবে একি টেবিলে কাজ। অপু উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ে বাড়িতে রাগ করে ঢাকায় এসে গার্মেন্টসে চাকুরী নেয়। কিন্তু অপু একটু গম্ভীর প্রকৃতির। কথা কম বলে, মুক্তা অনেক সময় অনেক কিছু জানতে চায়


অপুর কাছ থেকে।মুক্তার রুপে অনেকে পাগল সে কথা অপু জানতো। কিন্তু কোন সময় এসব বিষয়ে জানার আগ্রহ দেখায় নি অপু।এভাবে প্রায় দুমাস কেটে যায় আজও জানা হয়নি মুক্তার পরিবারে কে কে আছে?এখন অপু সেই পরিবেশের সাথে নিজেকে তৈরি করে নিয়েছে কথাও বলে অকপটে অনেক বন্ধু সেখানে।একদিন অপু জিজ্ঞেস  করলো মুক্তাকে-
-তোমার পরিবারে কে কে আছে?তোমার বাবা কি করেন?
একথা বলতেই মুক্তার দুচোখ গড়িয়ে পানি পড়তে লাগলো।
-আরে আরে তুমি কাঁদচ্ছ কেন?
চোখের পানি মুছতে মুছতে বলল তার পরিবারের হাল চিত্র। পাঁচ বছর আগে বাবা সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে। তারা দু’বোন ছোট বোন স্কুলে পড়ে, আর মা বাসায় বাসায় কাপড় ফেরি করে। এই কাহিনী শুনে অপু নিজেও মর্মাহত হলো। সান্তনা দিলো মুক্তাকে। এখন কাজ ছাড়াও অনেক কথা শেয়ার করে নিজেদের মধ্য, এভাবে একদিন ভালো লাগার প্রথম প্রহর শুরু হয় অপুর মনের পৃথিবীতে। মনের কথাগুলো আদান প্রদান হতে থাকে দু’জনের মাঝে। এখন অপু মোটামুটি ভাবে অনেক স্বপ দেখে মুক্তাকে নিয়ে। একদিন হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে অপু বিষণ জ্বর ঠাণ্ডা দু’দিন ডিউটিতে যায়নি, অন্যান্য বন্ধুদের সাথে মুক্তাও এসেছিল অপু কে দেখতে। মুক্তাকে দেখে মুগ্ধ হয়েছিল সেদিন অপু। পরদিন পুরোপুরিভাবে সুস্থ না হয়ে চাকুরী টিকাতে বাধ্য হয়ে কাজে যায়। দুপুরের খাবারের পর যখন ঔষধ খাচ্ছিল অপু ঠিক তখন দেখতে পেলো বোতলের ছিপি খুলে গড়গড় করে খাচ্ছে। মুক্তা কাছে গিয়ে ঔষধের বোতলটা কেড়ে নিলো।- এভাবে ঔষধ খেতে কে বলেছে?
-কেউ বলেনি আমি খাচ্ছি তাতে তোমার কি?
-আরে বোকা তুমি এখনো বুঝতে পারলেনা, আমি তোমায় কতটা ভালবাসি।
কথাগুলো পাশের সহকর্মীরা শুনছিল। আর এই কথাটির অপেক্ষায় ছিল এতদিন অপু।

এখন তারা স্বপ্ন দেখে আগামী দিনের সুখ সংসারের। তারা যখন সুখ স্বপ্ন এ বিভোর ঠিক তখনি মুখ খুললেন সেখানে এক সহকর্মী মজিদা। একদিন বড়বোন দাবী দিয়ে মুক্তার অতীত জীবনের রাক্ষসী ভালবাসার বর্ণনা শুনাইলেন অপুকে। অপু তো হতবাক!কারণ মুক্তা ঢাকা আসার আগে তার রুপের ফাঁদে ফেলেছিলেন এলাকার চেয়ারম্যানের ছেলেকে সেখানে তার বিয়েও হয় একটি ছেলে সন্তান আছে কিন্তু সেখানে ঘর করা অবস্থায় গ্রামের অন্যান্য ছেলেদের আকৃষ্ট করে তার রুপে এক সময় সংসারে ভাঙন ধরে। সে সময় নুন্নেহার নামে চিনতো তাকে এলাকার মানুষ।কিন্তু ঢাকায় এসে প্রথমে মুক্তা ও পরে স্বর্ণালী নাম ধারণ করেন। পরে ঢাকা এসে স্থানীয় এক ছেলের সাথে বিয়ে হয়, সেখানেও একটি ছেলে সন্তান  হয়, কিন্তু পাল্টাতে পারেনি চারিত্রিক দিক প্রায় ঝগড়া হয় স্বামী স্ত্রীর মাঝে এক স ময় বাধ্য হয়ে মুক্তাকে তালাক দেয় তার স্বামী। কিন্তু ক্ষান্ত হয়নি মুক্তা আজ ও জেলের ঘানি টানছে সেই স্থানীয় ছেলেটি।
নিজের মনকে বুঝালো বারবার অপু, মন তুই ভুল করছিস।তাই রাক্ষসী নগরী থেকে নিজেকে বাঁচাতে ভয়ে পালিয়ে এসেছিল সেদিন অপু,,,,কিন্তু আজও মনের ভিতর দাগ কাটে মুক্তার মায়াবী চোখের চাহনি।

Print Friendly, PDF & Email

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর