বিএনপির কমিটি নিয়ে ক্ষুব্ধ তারেক রহমান

কমিটি নিয়ে ক্ষুব্ধ বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানও। বিএনপির ঢাউস কমিটিতে তেমন গুরুত্ব পায়নি তারেক রহমানের মতামত। এ নিয়ে মা বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে টেলিফোনে কথাও বলেছেন তিনি। রবিবার তারেক রহমানের একটি প্রতিনিধি দল গুলশান কার্যালয়ে গিয়ে এক প্রভাবশালী কর্মকর্তার সঙ্গে এ নিয়ে বাকবিতণ্ডায় জড়ান। সূত্র জানায়, তারেক রহমানের পরামর্শের ক্ষেত্রে বিএনপি চেয়ারপারসনকে ভুল বুঝিয়েছেন মহল বিশেষ। এদিকে কমিটি নিয়ে ঢাকাসহ সারা দেশেই ক্ষোভ-বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে।

 

গতকাল নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সাবেক যুবদল নেতা এস এম জিলানীর নেতৃত্বে অর্ধশত নেতা-কর্মী তিনতলায় দফতর শাখায় গিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান। দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা অ্যাডভোকেট রুহুল কবীর রিজভীর সমালোচনাও করেন। এ সময় দফতরে রিজভী ছিলেন না। এদিকে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পদ পাওয়া বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম আকবর খন্দকারও পদত্যাগের চিন্তা করছেন। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমানও ওই পদে না থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জাানা গেছে। খবর বাংলাদেশ প্রতিদিন’র।

 

ম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা জানান, এভাবে রাজনীতি করা যাবে না। হয় দল থেকে সরে যাব, নতুবা পুরোপুরি নিষ্ক্রিয় হব। গোলাম আকবর খন্দকার বলেন, দীর্ঘ রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের পর সাংগঠনিক গুরুত্বপূর্ণ পদ না পাওয়ায় নেতা-কর্মীসহ পরিবার-পরিজনের প্রশ্নের মুখে পড়েছি। তাই ওই পদে না থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। যে কোনো দিন পদত্যাগ করতে পারেন।

 

জানা যায়, বিএনপি চেয়ারপারসনকে নানাভাবে বুঝিয়ে পুরো কমিটিই করেছেন প্রভাবশালী এক কর্মকর্তা। তার সঙ্গে ছিলেন একজন প্রভাবশালী নেতাও। তবে একজন স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক দুজন যুগ্ম মহাসচিব এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে কিছুটা সম্পৃক্ত ছিলেন। তবে তারা নিজেদের তালিকার নামগুলো কমিটির বিভিন্নস্তরে যুক্ত করেন। এ ছাড়া বিএনপির সিনিয়র কোনো নেতাই কমিটি নিয়ে ছিলেন পুরো অন্ধকারে। মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কাছে কমিটি দেওয়া হয় ঘোষণার দিন সকালে। এ নিয়েও নেতা-কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ-বিক্ষোভ চলছে।

 

জানা যায়, তারেক রহমানের পাঠানো তালিকায় সাবেক ছাত্রনেতাদের মধ্যে যাদের কমিটিতে ঠাঁই দেওয়া হয়েছে, তাদের প্রায় সবাইকেই কমিটিতে সদস্য পদে রাখা হয়। দফতর বিভাগসহ বেশ কয়েকটি সম্পাদকীয় পদে তারেক রহমানের কিছু পরামর্শ ছিল। বিশেষ করে যুগ্ম মহাসচিব পদমর্যাদায় শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানীকে দফতরের দায়িত্ব দিতে তারেক রহমানের সুপারিশ ছিল। কিন্তু তাকে ওই পদে রাখাই হয়নি, বরং কম গুরুত্বপূর্ণ পদে তাকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে বেগম জিয়া কমিটির কলেবর আরও কিছু বাড়াতে পারেন। দফতর শাখায় কিছু পরিবর্তন আসতে পারে বলেও জানা গেছে।

 

কমিটিতে নাম বিভ্রাট নিয়েও বিড়ম্বনা চলছে। নতুন কমিটিতে সহ স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক পদে ডা. রফিকুল ইসলামকে রাখা হয়েছে। আগের কমিটির সুনামগঞ্জের নির্বাহী কমিটির সদস্য ডা. রফিকুল ইসলাম ওই পদের দাবিদার। কিন্তু রাজধানীর শাজাহানপুরে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসঘনিষ্ঠ ঢাকা মেডিকেলের সাবেক ছাত্র ডা. রফিকুল ইসলামও একই পদের দাবিদার। বিষয়টি এখন বিএনপি চেয়ারপারসন পর্যন্ত গড়িয়েছে। তবে সুনামগঞ্জের ডা. রফিকুল ইসলাম জানান, তিনি আগের কমিটিতে নির্বাহী কমিটির সদস্য ছিলেন। স্বাভাবিকভাবেই তারই পদোন্নতি পাওয়ার কথা।  পদপ্রত্যাশী শ্রমিক দলের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের নির্বাচিত সভাপতি আমির জানান, ‘কমিটিতে এমন অনেক সদস্যই আছেন, যারা বিগত আন্দোলন-সংগ্রামে কোনো ভূমিকা নেই। তারাই এখন গুরুত্বপূর্ণ পদে। এমনকি শ্রমিক দলের ৬ জনকে যে পদ দেওয়া হয়েছে, তাদের কেউ যুক্তরাষ্ট্রে দীর্ঘদিন জীবনযাপন করেছেন, কেউ কেন্দ্রীয় কমিটিতে ছিলেন না, কেউ নৌমন্ত্রী শাজাহান খানের ঘনিষ্ঠ, কেউ রোগে-শোকে বিছানায় সময় কাটাচ্ছেন। দীর্ঘ রাজনৈতিক ক্যারিয়ার থাকার পরও আমরা কোনো পদ পাইনি।’

 

জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া লক্ষ করা গেছে। তাদের অভিযোগ, ছাত্রদলের সাবেক ও বর্তমান মিলিয়ে অর্ধশত নেতা বিএনপির নির্বাহী কমিটিতে ঠাঁই পায়। একইভাবে যুবদল থেকেও অন্তত ২৫ জন নির্বাহী কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছে। সে ক্ষেত্রে যুবদল থেকে মাত্র ৬ জন ঠাঁই পেয়েছেন। যার মধ্যে চারজনই এক প্রভাবশালী নেতার ঘনিষ্ঠতার খাতিরে জায়গা পেয়েছেন।
Print Friendly, PDF & Email

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর