আওয়ামী লীগ-বিএনপি’র একাধিক প্রার্থী

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ পুঠিয়া ও দুর্গাপুর উপজেলা নিয়ে রাজশাহী-৫ সংসদীয় আসন। আসনটিতে একচেটিয়া দাপট ধরে রেখেছিলেন বিএনপির সাবেক কেন্দ্রীয় বিশেষ সম্পাদক ও সাবেক জেলা সভাপতি অ্যাডভোকেট নাদিম মোস্তফা। তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত এই নেতা বর্তমানে দলীয় গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে ছিটকে পড়ায় একাধিক প্রার্থী মাঠে নেমেছেন আসনটি দখলে নিতে। বর্তমানে তিনি বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য। অন্যদিকে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য কাজী আবদুল ওয়াদুদ দারাও। এরই মাঝে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা জোরেশোরে এলাকায় জনসংযোগ, উঠান বৈঠকসহ দলীয় কর্মসূচি নিয়ে ভোটারদের দোরগোড়ায় যাচ্ছেন। রাস্তাঘাটে, পথে-প্রান্তরে, হাটে-ঘাটে আর মাঠে শুভেচ্ছা ব্যানার-ফেস্টুন আর পোস্টার টাঙ্গিয়ে সম্ভাব্য প্রার্থীরা নিজেদের তুলে ধরছেন। এছাড়া দলীয় মনোনয়ন যুদ্ধে জয়ী হতে দলের ওপর মহলে চালিয়ে যাচ্ছেন লবিয়িং।

রাজশাহী-৫ আসনের সংসদ সদস্য পুঠিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজী আবদুল ওয়াদুদ দারা। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে আসনটি বিভিন্ন দলের দখলে এসেছে। ১৯৯১ সালে আসনটিতে আওয়ামী লীগের এমপি ছিল। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের এমপি তাজুল ইসলাম ফারুককে পরাজিত করে দখলে নেন বিএনপি নেতা নাদিম মোস্তফা। ২০০১ সালের নির্বাচনেও সে অবস্থান বজায় থাকে। তিনি টানা ১০ বছর ক্ষমতায় ছিলেন। ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে নির্বাচনে তার পরিবর্তে বিএনপির মনোনয়ন পান পুঠিয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক নজরুল ইসলাম মণ্ডল। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী কাজী আবদুল ওয়াদুদ দারার কাছে বিএনপি প্রার্থী পরাজিত হন।

২০১৪ সালের নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আবারো সংসদ সদস্য হন ওয়াদুদ দারা। তবে দুই মেয়াদে সংসদ সদস্য থেকে সুবিধাজনক অবস্থানের বিপরীতে নেতাকর্মীদের সঙ্গে বৈরী সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। তাই আসন্ন সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে দলের কোন্দল আরো প্রকট আকার ধারণ করেছে। যে কারণে একাদশ সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নের জন্য মাঠে নেমেছেন আধা ডজন নেতা। মনোনয়ন প্রত্যাশীদের অনেকেই বর্তমান সংসদ সদস্য আবদুল ওয়াদুদ দারার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে এলাকায় ভোটারদের নিকট প্রচার করছেন। সর্বশেষ গত ২৫শে মার্চ কালরাত্রে জুতা পায়ে মোমবাতি প্রজ্জ্বালন করে সংসদ সদস্য কাজী আবদুল ওয়াদুদ দারা সমালোচনার মুখে পড়েন। এ ঘটনায় শুধু এলাকার মাঝে নয়, সারা দেশে প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।

মনোনয়ন প্রত্যাশীদের অভিযোগের বিপরীতে সংসদ সদস্য দারা সমর্থকদের দাবি, এমপি দারার উন্নয়নমূলক নানা কর্মকাণ্ড এবং তৃণমূলে ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতার কারণে ঈর্ষান্বিত হয়ে তার বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। এলাকায় সাধারণ মানুষ এখনো তাকে চাই। তার কোনো বিকল্প তৈরি হয়নি। সংসদ সদস্য সময় পেলেই এলাকায় ছুটে আসেন। উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড ছাড়াও সামাজিক, সাংস্কৃতিক কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ সবার নজর কেড়েছে।
আসনটিতে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দৌড়ে বর্তমান সংসদ সদস্য আবদুল ওয়াদুদ দারা, সাবেক সংসদ সদস্য তাজুল ইসলাম মোহাম্মদ ফারুক, রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগ সহসভাপতি আবদুল মজিদ, রাজশাহী মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও দলের জেলা শাখা স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক ডা. মুনসুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আহসানুল হক মাসুদ ও জেলা যুবলীগের সহসভাপতি ওবায়দুর রহমানের নাম শোনা যাচ্ছে।

জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আবদুুল মজিদ দাবি করেন, সংসদ সদস্য দারার সঙ্গে কোনো নেতাকর্মী নেই। পুঠিয়া ও দুর্গাপুরের মানুষ এখন পরিবর্তন চায়। সেই পরিবর্তনের জন্য মাঠে থেকে নেতাকর্মীদের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছি। সাবেক এমপি তাজুল ইসলাম মোহাম্মদ ফারুক বলেন, দল যাকে মনোনয়ন দেবে তার হয়েই আমরা কাজ করব। তবে এমপি দারার কারণে পুঠিয়া-দুর্গাপুরে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আজ দ্বিধাবিভক্ত। এর অবসান হওয়া দরকার। অধ্যাপক ডা. মনসুর রহমান বলেন, আমি গতবারও প্রার্থী ছিলাম। দীর্ঘদিন ধরেই পুঠিয়া-দুর্গাপুরের মানুষের সঙ্গে আছি। আমি একজন পরীক্ষিত রাজনীতিবিদ। কাজেই আগামী নির্বাচনে দল আমাকে মূল্যায়ন করবে বলে আমি বিশ্বাস করি। এ ব্যাপারে বর্তমান সংসদ সদস্য আবদুুল ওয়াদুদ দারার ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বরে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

বিএনপির দলীয় সূত্রে জানা গেছে, নাদিম মোস্তফা যাতে মনোনয়ন না পান সেজন্য বেশ কয়েক জন স্থানীয় নেতা মাঠে নেমেছেন। তাদের দাবি, ১০ বছর থেকে বিএনপি নেতা নাদিম মোস্তফা এলাকাছাড়া। তার কর্মী-সমর্থকরদের একটা বড় অংশ নতুন মনোনয়ন প্রত্যাশী ও জেলা নেতাদের হয়ে কাজ করছেন। এই দৌড়ে রয়েছেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মণ্ডল, পুঠিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন জুম্মা, দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রনেতা আবু বকর সিদ্দিক, দুর্গাপুরের দেলুয়াবাড়ি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম সাকলাইন এবং দুর্গাপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র সাইদুর রহমান মন্টু। তবে প্রার্থীদের মধ্যে এখনো নাদিম মোস্তফারই অবস্থান শক্ত রয়েছে।

এসব বিষয় এ্যাডভোকেট নাদিম মোস্তফা বাঙালী কণ্ঠকে জানান, নেতাকর্মীরা তার সঙ্গেই আছেন। দলকে শক্তিশালী করতে ৪ মাসে ৫২ হাজার সদস্য সংগ্রহ করেছি। আর দু’বারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য হিসেবে এলাকায় যে উন্নয়নমূলক কাজ করেছি, তা আওয়ামী লীগ ১০০ বছরেও করতে পারবে না। এলাকার মানুষের ভালোবাসা আছে। এজন্য এলাকায় প্রবেশের ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ এমপি দারা বার বার প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে। ২০১০ সাল থেকে অদ্যাবধি ২৭ বার জনসংযোগ ঠেকাতে ১৪৪ ধারা জারি করেছে। পুলিশ, যুবলীগ দিয়ে রুখতে চেয়েছে। এছাড়া বানেশ্বর বাজারে বিএনপির মিছিলে পুলিশ গুলি চালিয়ে হত্যা মামলায় তাকেসহ বিএনপির বিভিন্ন স্তরের ১৫৬ জন নেতাকর্মীর নাম দিয়েছে। সেই মামলায় প্রতিনিয়ত হাজিরা দিতে হচ্ছে।

নিজ দলের ভেতর বা জেলা কমিটির পক্ষ থেকে কোনো প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়নি। তবে বিএনপি চেয়ারপারসনের মামলা নিয়ে ব্যস্ততার সুযোগ নিয়ে জেলা কমিটির কিছু স্বার্থান্বেষী ব্যক্তি খালেদা জিয়ার নির্দেশ উপেক্ষা করে নিজ স্বার্থে টাকার বিনিময়ে কমিটি করেছে। সে কমিটিতে আমার কোনো ধরনের সুপারিশ নেয়া হয়নি। চেয়ারপারসন কারাগার থেকে বাইরে আসলে বিষয়টি সমাধান করা হবে। এনিয়ে নেতাকর্মীদের মাঝে ক্ষোভ থাকলেও তা প্রশমনের চেষ্টা করছি। বিএনপি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী গোলাম সাকলায়েন বলেন, আমার প্রতি সাধারণ মানুষের অগাধ আস্থা রয়েছে। আশা করি, দল থেকে আমাকে মনোনয়ন দিলে আসনটি পুনরুদ্ধার করতে পারব। পুঠিয়া ও দুর্গাপুরের বিএনপি নেতাকর্মীদের সংগঠিত করাই এখন আমার মূল চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ নিয়ে এরই মধ্যে অনেকটা এগিয়ে গেছি।

আরেক মনোনয়ন প্রত্যাশী আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ছোটবেলা থেকেই আমি বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নকালে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতা ছিলাম। বিভিন্ন সময় আমাকে বিরোধীদের জুলুম-নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। শুধু সাধারণ জনগণের সেবা করাই আমার কাজ। এজন্য আসনটিতে দল থেকে আমাকে মনোনয়ন দিলে আশা করি, বিজয় ছিনিয়ে আনতে পারব।

সূত্রঃ মানবজমিন

Print Friendly, PDF & Email

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর