মাদক থেকে যুব সমাজকে রক্ষায় কঠোর আইন

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ সীমান্ত এলাকা দিয়ে প্রায় দিনই দেশের ভেতরে ঢুকছে ইয়াবা ট্যাবলেট। ভয়ঙ্কর নেশাজাতীয় এই ট্যাবলেট ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে রাজধানী ঢাকা ও দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে। ইয়াবার বিষাক্ত ছোবলে নীল হচ্ছে যুব সমাজ।

ইয়াবার কবল থেকে যুব সমাজকে রক্ষা করতে কঠোর আইন করা হচ্ছে। ইয়াবাকে ‘ক’ শ্রেণির মাদক হিসেবে চিহ্নিত করে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান সংযোজন করে আইনের খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। আলাদা শাস্তির বিধানের ধারাও নতুন করে সংযোজন করা হচ্ছে। শিগগিরই এ আইন চূড়ান্ত করা হবে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ১৯৯০ সালের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ৭৫ শতাংশ পরিবর্তন করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন-২০১৮ নামে করা হয়েছে। আইনে নতুন সাতটি ধারা ও ২৮টি সংজ্ঞা সংযোজিত করা হয়েছে। তাৎক্ষণিক শাস্তি নিশ্চিত করতে কিছু ধারা ভ্রাম্যমাণ আদালতের আওতায় আনা হয়েছে। ইয়াবাসহ নতুন অনেক মাদকদ্রব্যের বিষয় আইনের আওতায় আনা হয়েছে। আইনে বিভিন্ন স্থানে গড়ে ওঠা সিসা বার বন্ধের কথা বলা হয়েছে।

মাদক হিসেবে ইয়াবাকে ‘ক’ শ্রেণির মাদক হিসেবে চিহ্নিত করে প্রস্তাবিত সংশোধিত আইনে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে নতুন আইন প্রণয়নের কাজ প্রায় চূড়ান্ত করা হয়েছে।

দেশে বর্তমানে কার্যকর থাকা মাদক নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী হেরোইন, প্যাথেড্রিন, মরফিন কোকেন এবং আরও কিছু মাদক ব্যবহার ও সংরক্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড৷ তবে এটা নির্ভর করে মাদকের পরিমাণ ও ব্যবহারের ওপর।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. জামাল উদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘প্রচলিত মাদক প্রতিরোধ আইনের সমস্যা হলো কোনো ব্যক্তির কাছে মাদকদ্রব্য সরাসরি পাওয়া না গেলে তাকে শাস্তির আওতায় আনা যায় না। ফলে বড় বড় মাদক ব্যবসায়ীকে ধরা বা আইনের আওতায় আনা সম্ভব হয় না। তাই আইন পরিবর্তন করা হচ্ছে। নতুন আইনের খসড়া চূড়ান্ত হয়েছে৷ বাকিটা সংসদের হাতে৷ আর নতুন আইনে ইয়াবা ব্যবহার ও সংরক্ষণের অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রাখা হচ্ছে।

এছাড়া মাদক ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রণয়নের লক্ষ্যে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন-২০১৮ প্রণয়ন করা হচ্ছে। এতে পৃষ্ঠপোষক, গডফাদারসহ মাদক সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন, প্রস্তাবিত নতুন আইনে এই বিষয়গুলোকে আলাদা করে, শাস্তির বিধানও আলাদা রাখা হয়েছে৷ আর পারিপার্শ্বিক অবস্থাকেও বিবেচনায় নেওয়ার আইন হচ্ছে। ফলে ব্যবসায়ী, পাচারকারী ও নিয়ন্ত্রকদের আইনের আওতায় আনা যাবে৷

তিনি আরো বলেন, ‘আইন সংশোধন করাই যথেষ্ট নয়৷ অধিদফতরের জন্য আলাদা পুলিশ ইউনিট গঠন করা প্রয়োজন। কারণ, আমরা অভিযান চালাই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায়৷ এমন অনেক হয়েছে যে, তারাই মাদক ব্যবসায়ীদের অভিযানের খবর দিয়ে দিয়েছে।’

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরা সেবা বিভাগের সচিব ফরিদ উদ্দিন আহম্মদ চৌধুরী বলেন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনকে সংশোধন করে যুগোপযোগী করা হচ্ছে। এই আইনে মাদক নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে বলে আশা করা যায়।’

তিনি বলেন, ‘ধর্মীয় অনুশাসন, আচার-আচরণ, পারিবারিক বন্ধন মাদকের গ্রাস থেকে মাদকাসক্তকে ফিরিয়ে আনতে পারে। মাদক প্রবেশরোধে কক্সবাজারকে বিশেষ অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করার প্রক্রিয়া চলছে।’

এব্যাপারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘ইয়াবা ব্যবহার ও পাচারের সঙ্গে জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান সংযোজন করে নতুন আইন প্রণয়ন হচ্ছে। ইয়াবাকে ‘ক’ শ্রেণির মাদকদ্রব্যে অর্ন্তভুক্ত করে সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান সংযোজন করা হচ্ছে। ইয়াবা মাদকদ্রব্যের মধ্যে শীর্ষে। এটি এত ছোট যা সহজে বহনযোগ্য এবং এটি হাত বদল হলেই মুনাফা বাড়ে। এ দুই কারণে ইয়াবা শহর ছেড়ে গ্রাম পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। ইয়াবার বিস্তার রোধে মিয়ানমার-বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী নাফ নদে স্থায়ীভাবে মাছ ধরা নিষিদ্ধ করার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার।’

মন্ত্রী বলেন, দেশকে মাদকমুক্ত করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জিরো টলারেন্স নীতি সামনে রেখে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সংস্থাগুলো কাজ করে যাচ্ছে। ইয়াবার ভয়াবহতা রোধে সব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাজ করছে। মাদকামুক্ত, সুস্থ ও সুন্দর পরিবেশ গড়ে তুলতে বর্তমান সরকার বদ্ধপরিকর।

Print Friendly, PDF & Email

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর