বাহে মোর সগোই সব আছিলো ছিল, এলা মোর কিছুই নাই

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ বাহে মোর সগোই (সব) আছিলো (ছিল), এলা মোর কিছুই নাই। ধল্ল্যায় (ধরলায়) সউগ (সব) ঘর-বাড়ী ও জমিজমা গিলি খাইচে (খেয়েছে)। গত বছরের বন্যায় ঘর-বাড়ী সব চুরমার করে নদীত নিয়া গেছে। উপায় না পায়া এক বছর ধরিয়া মুই (আমরা) রাস্তায় পরিয়া আছোং বাহে ! কান্নাজড়িত কন্ঠে রংপুরের গ্রাম্য ভাষায় কথাগুলো বললেন ধরলা ভাঙ্গনের সর্বশান্ত হওয়া কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়নের চর-বড়ভিটা গ্রামের মৃত নবিউল্লার স্ত্রী মরিচমতি বেওয়া (৮২)।

তার দুই ছেলের মধ্যে বড় ছেলে মনসুর আলী (৫৪),ছোট ছেলে আব্দুল হানিফ (৪০)। মা মরিচমতি বড় ছেলের কাছেই থাকেন। বড় ছেলে মনসুর আলীসহ গত এক বছর ধরে রাস্তায় বসবাস করছেন। মনসুর আলী দিন মজুরের কাজ করে স্ত্রী, তিন মেয়ে ও বৃদ্ধ মাকে নিয়ে খেয়ে না খেয়ে অতিকষ্টে বেঁচে জীবিকা নির্বাহ করছেন।

বৃদ্ধা মা মরিচমতি কান্নাজড়িত কন্ঠে জানান, দশ বছর আগেই অসুস্থ হয়ে স্বামী মারা যান। স্বামীর যে টুকু সহায় সম্বল ছিল তা সবেই ধরলায় খেয়ে ফেলেছে। স্বামী মারা যাওয়ার দশ বছর হলেও এখন পর্যন্ত একটা ভাতা কার্ড করে দেননি ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ও মেম্বার। দুই ঈদে দুইটা দশ কেজি চাউলের রিলিফ পাই মাত্র। আগে ছোট ছেলের মাঝেই ছিলাম। ছোট ছেলে বিয়ের পর আলাদা হয়। এখন বড় ছেলের মাঝে আছি। বড় ছেলে অনেক কষ্ট করে দিন মজুরের কাজ করে যা পায় তাই দিয়ে কোন রকমেই সংসার চলে আমাদের। যেদিন কাজ-কাম থাকে না সেদিন মানুষের বাড়ীতে ধার দেনা করেই চলতে হয় এবং অনেক সময় পরিবারের সবাইকে নিয়ে উপবাসও থাকতে হয়।

শুধু মরিচমতির করুন কাহিনী নয়। এমন করুন পরিনতির স্বীকার ওই গ্রামের ইউসুফ আলী, কায়েম আলী, শহিদুল ইসলাম, মজি মিয়া, হাবিবুর রহমান, আলতাফ হোসেন, জহুরুল হক, মোজ্জাম্মেল হক, মালেক মিয়া, আব্দুল হামিদ, মালেক সোলজার, আলম মিয়া, একাবর আলী, খোতেজা বেওয়া, এরশাদ, এন্তাজসহ প্রায় ৩০ টি পরিবার। এই ৩০ টি পরিবার গত বছরের শরণকালের শ্রেষ্ঠ বন্যায় বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। তাই জীবন-জীবিকার তাগিদে পরিবার গুলো ভিটেমাটি ও ঘর-বাড়ী হারিয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে ফুলবাড়ী টু বাংটুর ঘাট যাওয়া সরকারি সড়কের মধ্যেই আশ্রয় নিয়েছে। বর্তমানে তারা সবাই চর-বড়ভিটা গ্রামের সরকারি সড়কের পাশে ছোট ছোট ঘর-ও ঢেউটিনের চালা তৈরী করে কোন রকমেই বসবাস করছেন।

এ ব্যাপারে বড়ভিটা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খয়বর আলী জানান,গত বছরের বন্যায় বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হওয়ায় একবছর ধরে ৩০ টি পরিবার সড়কের মধ্যেই পরিবার পরিজন নিয়ে অতি কষ্টে বসবাস করছেন। পরিষদের পক্ষ থেকে প্রত্যেকের খোঁজ খবর নেয়া হচ্ছে। যাদের নুন্যতম দুই-তিন শতক জমি আছে তাদেরকে সরকারের চলতি প্রকল্প “জমি আছে বাড়ী নাই” –এর অধীন ১১ হাত টিন সেড ঘর নির্মান করে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে এবং বয়স্ক ও বিধবাদের মাঝে বয়স্ক ভাতা ও বিধবা ভাতার দেয়ার ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

Print Friendly, PDF & Email

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর