প্রতিভাময়ী ফারজানার স্বপ্ন বড় হওয়ার

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ একবিংশ শতাব্দীতে নারীর অগ্রযাত্রা বিভিন্ন ক্ষেত্রে আশার আলো ছড়ালেও পুরুষ তান্ত্রিক সমাজে ব্যবসা ক্ষেত্রে নারীদের সফলতার চিত্র সচরাচর চোখে পড়েনা। শুধু চাকরির ক্ষেত্রে নয় সুযোগ পেলে পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও যে সর্বক্ষেত্রে অবদান রাখতে পারে তার প্রমাণ করেছে গ্রামের মেয়ে ফারজানা (২২)।

গত ২৯ জুলাই রোববার সকালে কিশোরগঞ্জ জেলার কুলিয়ারচর উপজেলার বড়খারচর গ্রামে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ফারজানা ফ্যাশন গার্মেন্টসে ১৫-২০ জন নারী শ্রমিক কাপড় সেলাইয়ের কাজ করছে। সেলাই কাজের মান পরিদর্শন করছেন ফারজানা আক্তার। এ সুযোগে কথা হয় ফারজানা আক্তারের সাথে। তিনি বলেন ৬ ভাই ৪ বোনের মধ্যে সে ৪র্থ। ৭ম শ্রেণীতে লেখা পড়ার ফাঁকে সরকারি ও বেসরকারি ভাবে শিল্প উদ্যোক্তা, সেলাই, ব্লক বাটি ও এম্ব্র্রয়টারী কাজের প্রশিক্ষণ নেন তিনি। ২০১৫ সালে স্থানীয় আলিফ বিজ্ঞান কারিগরি স্কুল এন্ড কলেজ থেকে এস.এস সি পাশ করে। বর্তমানে এইচ এস সিতে অধ্যয়ণরত। ২০১৭ সালে তার পিতা আব্দুর রাশিদ পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে পরলোক গমন করেন। বৃদ্ধ মা আর ভাই বোনের সংসারে একটু সহযোগীতার হাত বাড়াতে তার মাথায় ঢুকে সমাজের অন্যসব মানুষের কর্মের ব্যতিক্রম কিছু একটা করতে।

কারন জানতে চাইলে তিনি বলেন, শিক্ষিত হলেই যে সরকারি চাকরি মিলবে তা কিন্তু ঠিক নয়। এদেশে শিক্ষার হার বাড়লেও চাকরির সুযোগ বাড়েনি। বর্তমান বাজারে সরকারি চাকরি হলো সোনার হরিণ। চাকরির ক্ষেত্রে শিক্ষার কোন মূল্যায়ন নেই,আছে টাকার । তাই পিতা হারা সাধারণ ঘরের মেয়ে হয়ে মোটা অঙ্কের টাকা খরচ করে চাকরি নেওয়া অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে এ জন্য লেখাপড়ার পাশাপাশি চাকরির আশা না করে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর চেষ্ঠায় প্রায় তিন বছর পূর্বে নিজগ্রামে সর্বপ্রথম ফারজানা সেলাই ট্রেনিং সেন্টার নামে একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র খুলে স্থানীয় নারীদের প্রথমে বিনামূল্যে পরে স্বল্প মূল্যে সেলাই কাজ শেখান তিনি। নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে ৬ মাস পূর্বে নিজ বাড়ীতে ফারজানা ফ্যাশন গার্মেন্টস নামকরণ করে একটি মিনি গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠা করে ১৫টি সেলাই মেশিন স্থাপনের মাধ্যমে তার প্রশিক্ষনার্র্র্থী কর্মীদের নিয়ে গার্মেন্টেসের কাজ শুরু করেন।

নিজের কর্মদক্ষতা, সততা ও পরিশ্রমে দিনদিন গার্মেন্টসটি প্রসারিত হতে থাকে। পরিবেশ কিছুটা অনুকুলে থাকায় এ প্রতিষ্ঠানে কাজ করে সম্মানজনক পারিশ্রমিক পেয়ে জীবিকা নির্বাহ করছে প্রায় ৪০ জন নারী কর্মী। পাশাপাশি কাজের সহযোগীতার জন্য বেশ কয়েকজন পুরুষ কর্মীও নিয়োগ দেওয়া হয়েছে এ প্রতিষ্ঠানে।

নারী শ্রমিক মোমেনা আক্তার(২৫),জীবন বেগম(১৮), তানজিনা(২২), জেসমিন(২৩), জুমা (১৮), শিল্পী (২৬), জান্নাত (২৫) ও রুজিনা (১৯) বলেন,তারা এ প্রতিষ্ঠানে কাজ করে মাসে প্রায় ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা আয় করছেন। এ মিনি গার্মেন্টেসের তৈরী পোশাক হাতের কাজের নকশা করা থ্রীপিস, নিত্য নতুন ডিজাইনের বোখরা, সুতার কাজ করা শাড়ী, লং ড্রেস, শেরওয়ানী, লেহেঙ্গা প্লাজু শিশুদের বাহারি ডিজাইনের কাপড়, নকশীকাথা ও সুতার তৈরী লেডিস ব্যাগ সহ ক্রেতাদের চাহিদা মতো বিভিন্ন ডিজাইনের জেন্টস-লেডিস পোষাক ও কুটির শিল্পের জিনিসপত্র তৈরী করে কুলিয়ারচর উপজেলা সহ পাশ্ববর্র্তী উপজেলা ও শহরে প্রচারের সুবিধার্থে স্বল্পলাভে বাজারজাত করে আসছে।

এ সফলতায় উদ্বুদ্ধ হয়ে নিজেদের সাবলম্বী করতে নতুন নতুন নারীরা ফারজানা সেলাই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে কাজ শিখতে এগিয়ে আসছে। গার্মেন্টস ও কুটির শিল্পের কাজ পরিচালনার পাশাপাশি স্বল্প মূল্যে স্থানীয় নারীদের সেলাই ও কুটির শিল্পের কাজ শিখিয়ে তাদের সাবলম্বী করার চেষ্ঠা চালিয়ে যাচ্ছে ফারজানা। অপর দিকে গরীব নারীদের এখনও বিনামূল্যে কাজ শেখাতে পিছিয়ে নেই তিনি। তার লক্ষ্য প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে প্রশিক্ষিত নারী কর্মীদের কর্ম সংস্থানের সুযোগ করে দিয়ে অনেক বড় একটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরী তৈরী করে কর্মহীনদের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি নিজে প্রতিষ্ঠিত হয়ে দেশের জন্য কিছু একটা করার।

তিনি বলেন, আমরা নারী, নারীরাও পারে, আমরা পিছিয়ে থাকতে চাইনা। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে পুরুষের পাশাপাশি আমরা ও আয় করে সংসারের হাল ধরতে চাই। প্রতিষ্ঠান পরিচালনার ক্ষেত্রে সমস্যার দিক তুলে ধরে তিনি বলেন,এ কাজে উন্নতি করতে হলে অর্থের প্রায়োজন যা তার কাছে নেই। সরকারি ভাবে ব্যাংক থেকে স্বল্প সুদে ব্যবাসায়ী ঋন পাওয়া গেলে তিনি শতশত কর্মহীন মানুষের কর্মের ব্যবস্থা করে দিতে পারতেন বলে জানান। তার লক্ষ্যে পৌঁছতে তিনি সকলের সর্বাত্মক সহযোগীতা কামনা করেন।

Print Friendly, PDF & Email

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর