মাছের দেশে মাছ নেই, জেলের পেটে ভাত নেই

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ হাওরের দেশ হিসেবে খ্যাত কিশোরগঞ্জের বিস্তীর্ণ হাওরগুলোতে এ বছর পর্যাপ্ত ডিম না ফোটায় মাছের সংকট দেখা দিয়েছে। এতে মৎস্যজীবীদের কপালে দুঃশ্চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। জেলেদের জালে আগের মতো আর চোখ ধাঁধানো মাছের দেখা মেলে না।

হাওরের জেলে জয়নাল আবেদীন ও জমশেদ মিয়া বলেন, তাঁরা পৈতৃক সূত্রে মাছ ধরা ও বিক্রির সঙ্গে সম্পৃক্ত। এক যুগ আগেও তাঁরা যেসব মাছ হাওর থেকে ধরতেন, এখন সেসবের বেশির ভাগই বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এতে করে তারা প্রয়োজনীয় মৎস্য আহরণ করতে না পারায় বাধ্য হচ্ছে মানবেতর জীবনযাপনে।

জেলা মৎস্য অধিদপ্তরের সূত্র অনুযায়ী, এক যুগ আগে হাওরে ১০৭ প্রজাতির মাছ পাওয়া গেলেও এখন বিলুপ্তির পথে রয়েছে অন্তত ৪৬ প্রজাতির মাছ।

স্থানীয় মৎস্য বিশেষজ্ঞরা জানান, কিশোরগঞ্জের হাওরগুলো হচ্ছে মিঠা পানির মৎস্য ভাণ্ডার। জেলার এই বিস্তীর্ণ হাওরগুলোতে বছরের ৭/৮ মাস পানি থাকে। বৈশাখ মাসের শুরুর দিকে বৃষ্টিপাতে কিশোরগঞ্জের হাওরগুলোতে নতুন পানি আসতে শুরু করে। নতুন পানি আসার সঙ্গে সঙ্গে সাথে ১৫ বৈশাখ থেকে ৩০ বৈশাখের মধ্যে রুই, কাতলা, বোয়াল,সিং, মাগুর, কৈ, গইন্যা, আইড়, সরপুটি, কাল বাউশ, চিংড়ি, শোল, গজারসহ প্রায় ৫০ প্রজাতির দেশীয় মা মাছ হাওরে প্রচুর ডিম ছাড়ে। সেই ডিম থেকে কয়েক দিনের মধ্যেই রেণু পোনা ফুটতে শুরু করে। কিন্তু এ বছর মাছের ডিম না ফোটায় আষাঢ় মাস শেষ হতে চললেও এই ভরা বর্ষাতেও মাছের পোণা কিংবা তেমন কোনো ছোট মাছ চোখে পড়ছে না স্থানীয় জেলেদের।

একদিকে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঋতু পরিবর্তন ঘটছে, অন্যদিকে হাওরাঞ্চলের ফসল রক্ষায় অপরিকল্পিত বেড়িবাঁধ নির্মাণ, নদ-নদী, খাল-বিল জলাশয়গুলো দিন দিন ভরাটের ফলে মাছের প্রজনন শূন্যতার দিকে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন মৎস্য বিশেষজ্ঞরা।

স্থানীয় মৎস্য বিভাগের অভিমত, মুক্তজলাশয় অর্থাৎ নদী-নালার মৎস্য সম্পদ কমে এলেও বৃদ্ধি পাচ্ছে বদ্ধ জলাশয়ে মাছের আবাদ। জিহ্বার স্বাদ কমে এলেও পুষ্টির কোনো ঘাটতে হবে না এখানকার অধিবাসীদের।

Print Friendly, PDF & Email

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর