তিনশ’ আসনে ডামি প্রার্থী দেবে আওয়ামী লীগ

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতার নির্বাচন এড়াতে ডামি প্রার্থী দেবে আওয়ামী লীগ। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দল মনোনীত প্রার্থীদের এ নির্দেশনা দেওয়া হবে।

সংগঠনের কয়েকজন নীতিনির্ধারক নেতা সাংবাদিককে জানিয়েছেন, গত শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম কার্যনির্বাহী সংসদ, উপদেষ্টা পরিষদ ও সংসদীয় দলের যৌথ সভায় আগামী নির্বাচনে ডামি প্রার্থী দেওয়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছেন।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ১২৭ জনসহ ১৫৩ জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছিলেন। এ নিয়ে পরে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা আলোচনা ও সমালোচনা হয়েছে। আওয়ামী লীগ এই কারণে এবার আগেভাগেই বেশ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। কোনো কারণে বিএনপি গত নির্বাচনের মতো আগামী নির্বাচনও বয়কট করলে সরকারি দল প্রতিটি আসনে একাধিক প্রার্থী নিশ্চিত করবে। অর্থাৎ প্রয়োজনে ডামি প্রার্থীর ব্যবস্থা করা হবে।

শুক্রবারের যৌথ সভায় অংশ নেওয়া বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা এবং দলের এমপি সাংবাদিকের সঙ্গে আলাপকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদৃব্দতি দিয়ে বলেছেন, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার বিষয়ে সাংবিধানিক কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। আইনগত সমস্যাও নেই। তারপরেও এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়েছে। এমনকি আওয়ামী লীগের ভেতরেও এ বিষয়ে নেতিবাচক অবস্থান রয়েছে। যৌথ সভায় এসব প্রসঙ্গে বিস্তারিত কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আওয়ামী লীগের এমপিদের উদ্দেশে দেওয়া বক্তব্যে ডামি প্রার্থী প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার বিষয় নিয়ে গত নির্বাচনে তাগিদ দেওয়া হয়েছিল।

কিন্তু তারপরেও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি আরও বলেছেন, পোলিং এজেন্ট-সংক্রান্ত সহায়তার জন্য নির্বাচনী কৌশলের অংশ হিসেবে প্রতিটি আসনে ডামি প্রার্থী দিতে হবে। এ বিষয়টি দল মনোনীত প্রার্থীরা নিশ্চিত করবেন।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক নেতারা মনে করছেন, বিএনপি আগামী নির্বাচনে অংশ নেবে। তবে নির্বাচনের আগ মুহূর্তে কোনো অজুহাত দেখিয়ে নির্বাচন থেকে তাদের সরে দাঁড়ানোর আশঙ্কাও রয়েছে। ওই অবস্থায় ডামি প্রার্থী না থাকলে অনেক আসনেই গত নির্বাচনের মতো বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। এ কারণেই আগাম প্রস্তুতির অংশ হিসেবে দলের মূল প্রার্থীর পাশাপাশি ডামি প্রার্থী রাখার ব্যবস্থা করা হবে।

তবে কোনোভাবেই আগামী নির্বাচনে বিদ্রোহ করা যাবে না। অর্থাৎ দল মনোনীত প্রার্থীকে চ্যালেঞ্জ করে দলের কোনো পর্যায়ের নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারবেন না। এ ক্ষেত্রে কেউ দলের এই নির্দেশ অমান্য করলে তাকে আজীবন আওয়ামী লীগ থেকে বহিস্কার করার কথা জানিয়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এমপিদের আমলনামা দেখেছেন প্রধানমন্ত্রী
কমপক্ষে পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীদের জনপ্রিয়তা যাচাই-বাছাই করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ জন্য তিনশ’ আসনের জরিপ রিপোর্ট ইতিমধ্যে তৈরি করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ওই রিপোর্টগুলো পর্যায়ক্রমে দেখছেন। তিনি এ ব্যাপারে যৌথ সভায় বলেছেন, প্রতিদিন ১০টি আসনের রিপোর্ট তিনি পড়ছেন। ইতিমধ্যে ৯০টি আসনের রিপোর্ট তার পড়া হয়েছে। ওই জরিপ রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করেই আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেওয়া হবে বলে একাধিকবার জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

৩৩ সদস্যের কোর কমিটি
যৌথ সভায় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কোর কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কমিটির চেয়ারম্যান। প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচটি ইমাম কো-চেয়ারম্যান এবং দলের সাধারণ সম্পাদক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালন করবেন। সদস্যরা হচ্ছেন সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, কাজী জাফর উল্লাহ, মোহাম্মদ নাসিম, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, ড. আবদুর রাজ্জাক, ড. মসিউর রহমান, শেখ হেলাল উদ্দিন, সজীব ওয়াজেদ জয়, রশিদুল আলম, লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান, এইচএন আশিকুর রহমান, মাহবুবউল আলম হানিফ, ডা. দীপু মনি, নুর-ই-আলম চৌধুরী লিটন, অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, ড. হাছান মাহমুদ, শেখ সালাহ উদ্দিন জুয়েল, ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, আক্তারুজ্জামান, দীপঙ্কর তালুকদার, অ্যাডভোকেট এবিএম রিয়াজুল কবির কাওছার এবং ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ূয়া।

চীন যাচ্ছেন ১৬ নেতা
আওয়ামী লীগের ১৬ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল আজ রোববার সাত দিনের সফরে চীন যাচ্ছে। চীনা কমিউনিস্ট পার্টির আমন্ত্রণে এই সফরকালে আওয়ামী লীগের নেতারা চীনের মন্ত্রী ও চীনা কমিউনিস্ট পার্টির পদস্থ নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন। আগামী ৪ নভেম্বর তারা দেশে ফিরে আসবেন।

আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খানের নেতৃত্বাধীন এই প্রতিনিধি দলের সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, আন্তর্জাতিক সম্পাদক ড. শাম্মী আহমেদ, কৃষি ও সমবায় সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, বন ও পরিবেশ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক প্রকৌশলী আবদুস সবুর, শিক্ষা ও মানবসম্পদ সম্পাদক শামসুন নাহার চাঁপা, উপ-দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, কার্যনির্বাহী সদস্য অ্যাডভোকেট এ বি এম রিয়াজুল কবীর কাওছার, পারভীন জামান কল্পনা, আনোয়ার হোসেন, অধ্যক্ষ মেরিনা জাহান, উপাধ্যক্ষ রেমন্ড আরেং ও তরুণ কান্তি দাস।

Print Friendly, PDF & Email

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর