লাউয়ের বাম্পার ফলন

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ সুনামগঞ্জে এবার পানি (পাতি) লাউয়ের বাম্পার ফলন হয়েছে, এমন দাবি লাউ চাষীদের। গত ১ সপ্তাহ ধরে শহর ও শহরতলীর হাট-বাজারে অল্প পরিমাণে শীতকালীন লাউ আসতে শুরু করেছে। দুই দিন হয় বাজারে আসছে বেশি পরিমাণে দেশীয় লাউ। এখন খুচরা বাজারে প্রতিটি বড় লাউ ৬০ টাকা, মধ্যম ৪০ টাকা ও ছোট আকারের লাউ ২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। পাইকারী প্রতি শ’ বড় লাউ ৩ হাজার টাকা, মধ্যম ২ হাজার টাকা, ছোট লাউ ১৫শ’ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

অকাল বৃষ্টিপাত হওয়ায় শীতকালীন লাউ চাষের কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। পুনরায় চাষাবাদ করা লাউ বড় হয়ে বাজারে আসতে একটু সময় লাগছে। তবে এ সপ্তাহে ব্যাপক পরিমাণে দেশীয় লাউ বাজারে আসবে বলে জানান চাষীরা।
চাষীরা জানান, এবার অকাল বৃষ্টিতে প্রথম ধাপে রোপিত লাউ গাছের চারা নষ্ট হলেও পরবর্তীতে রোপিত চারায় যে লাউ উৎপাদন হয়েছে তা গত বছরের চেয়ে অনেকটা বেশি। এ জন্য এবার লাউয়ের দাম কমতে পারে। তবে লাউ চাষে বেশি লাভ। এক কেয়ার জমিতে খরচ হয় প্রায় ১৫ হাজার টাকা। লাউ বিক্রি হয় কমপক্ষে ৪৫ হাজার টাকার।

সুনামগঞ্জে এবার যেসব জাতের পাতি লাউ হয়েছে, সেগুলো হচ্ছে- ডায়না, মার্টিনা, মধুমতি, হাইব্রীড, বাউলা, হীরামন, গ্রীণ ডায়মন, আজমিরি জাতের লাউ। এসব জাতের লাউয়ের মধ্যে ভাল উৎপাদন হয় ডায়না, মার্টিন ও মধুমতি। এই তিন প্রকারের লাউয়ের ক্রেতাও বেশি। খেতেও এসব লাউ অন্য লাউয়ের চেয়ে সুস্বাদু।

সদর উপজেলার সুরমা ও জাহাঙ্গীরনগর ইউনিয়নের সৈয়দপুর, মুসলিমপুর, রাজানগর, আমপারা, গোদীগাঁও, নারায়নতলা, কাইয়ারগাঁও, চৌমুহনী, মঙ্গলকাটা, কৃষ্ণনগর, সাহেবনগর, ঝরঝরিয়া, শনিরখাড়া, ইসলামপুর, বেরীগাঁও, নৈগাং, রংপুর, বনগাঁও ইত্যাদি এলাকায় লাউ চাষের উৎপাদন হয়েছে বেশি।

রাজানগরের চাষী শাহ আলম বলেন,‘এবার আমি এক কেয়ার জমিতে লাউ চাষ করেছি। লাউয়ের উৎপাদন ভাল হয়েছে। এখন বাজারে লাউ বিক্রি করে ভাল দামও পাচ্ছি।’

শনিরখাড়া এলাকার চাষী মনির হোসেন ও কাওসার আলম বলেন,‘যদি অকাল বৃষ্টি না হতো, তাহলে বাজারে শীতকালীন লাউ আগে থেকে বিক্রি হতো। এখন লাউ ক্ষেতে বড় হচ্ছে, দুই একদিনের মধ্যে বাজারে আসা শুরু হবে।’

একই এলাকার চাষী আশর্^াদ আলী বলেন,‘আমি এবার ১ কেয়ার জমিতে লাউ চাষ করেছি। আমার খরচ হয়েছে সাড়ে ১২ হাজার টাকা। বাজারে ভাল দাম হলে বিক্রি হবে ৫০ হাজার টাকা। এবার লাউয়ের উৎপাদন হয়েছে ভাল।’

এদিকে, বিশ^ম্ভরপুর উপজেলার পলাশ, সলুকাবাদ, ধনপুর ও দক্ষিণ বাদাঘাট ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে লাউয়ের উৎপাদন ভাল হয়েছে বলে চাষীরা জানিয়েছেন।

বাঘবেড় গ্রামের চাষী আক্তার হোসেন বলেন,‘এবার লাউ চাষ ভাল হয়েছে। এখন যে লাউ বাজারে আসছে ওই লাউয়ের ভাল দাম পাওয়া যাচ্ছে।’

রতারগাঁও গ্রামের চাষী আল-আমিন বলেন,‘আমাদের এলাকায় এবার লাউ চাষ গতবারের চেয়ে ভাল হয়েছে। আশাকরি দামও ভাল পাবো।’

সুনামগঞ্জ শহরের কীটনাশক ব্যবসায়ী রমজান আলী বলেন,‘আমার দোকানে বিভিন্ন জাতের লাউয়ের বীজ আছে। ভাল উৎপাদন হয় ডায়না, মার্টিন ও মধুমতি জাতের লাউ। এই তিন প্রকারের লাউয়ের বীজ চাষীরা পছন্দ করেন। এই বীজে নাকি ভাল ফলন হয়।’

সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সালাহ উদ্দিন টিপু বলেন,‘সদর উপজেলায় প্রতি বছর ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে সবজি চাষ হয়। এরমধ্যে লাউ অন্যতম। এবার জাহাঙ্গীরনগর, সুরমা ইউনিয়নসহ অন্যান্য ইউনিয়নেও লাউ চাষ ভাল হয়েছে। এবার চাষীরা উচ্চমূল্যে লাউ বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন।

Print Friendly, PDF & Email

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর