ব্লাড রোজ’ নামে নারী জঙ্গী বাহিনী, সঙ্গে আছে পাকিস্তানী নারীও

‘ব্লাড রোজ’ নামে ফেসবুকে এক গ্রুপের সদস্য জেএমবির নারী জঙ্গীরা। নারী জঙ্গীদের নেপথ্যে ইন্ধন দিচ্ছে জামায়াত-শিবির। একে অপরকে তারা সম্বোধন করেন ‘দ্বীনি বোন’। দ্বীনি বোনের তালিকায় আছেন পাকিস্তানী নারী জঙ্গীও। আইএসের দাবিক ম্যাগাজিন, অডিও-ভিডিও বার্তা, আইএস সংক্রান্ত নানা তথ্য নিজেদের মধ্যে আদান-প্রদান করত তারা। আইএসের কর্মকাণ্ডে উদ্বুদ্ধ করতে তারা ব্লাড রোজ নামের নিজ ফোরামে থাকা নারীদের ‘ছবক’ দিত। পুরুষ জঙ্গীদের মতোই নারী জঙ্গীরাও ব্যবহার করছে ‘কোডনেম’। খবর জনকন্ঠ’র।

 

র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হওয়া চার নারী জঙ্গীর একজন মানারাত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আকলিমা রহমান মনির দেয়া জবানবন্দীতে এ ধরনের তথ্য পাওয়া গেছে। র‌্যাবের তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ খবর জানা গেছে।

 

র‌্যাব সূত্র জানায়, গত আগস্ট মাসে রাজধানী ঢাকা ও আশপাশ এলাকায় অভিযান চালিয়ে নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) চার নারী সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। র‌্যাব-৪-এর একটি দল ১৪ আগস্ট মধ্যরাত থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করে। এদের তিনজন বেসরকারী মানারাত বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী এবং একজন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের (ঢামেক) ইন্টার্ন চিকিৎসক। মানারাত বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের ছাত্রীরা হলেন- আকলিমা রহমান, ইশরাত জাহান মৌ ও খাদিজা পারভীন মেঘনা। এছাড়া গ্রেফতার ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শিক্ষানবিস চিকিৎসকের নাম ইসতিশনা আক্তার ঐশী। এর আগে জুলাই মাসে সিরাজগঞ্জ ও টাঙ্গাইল থেকে জেএমবির সাত নারী সদস্যকে গ্রেফতার করেছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল অস্ত্র, বিস্ফোরক তৈরির সরঞ্জাম এবং উগ্র মতবাদের বই। টাঙ্গাইলে গ্রেফতার তিনজন জেএমবির আত্মঘাতী দলের সদস্য বলেও সে সময় পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল। গত ২১ জুলাই জেএমবির ‘দক্ষিণাঞ্চলীয় আমির’ মোঃ মাহমুদুল হাসান ওরফে হাসানকে (২৭) টঙ্গী থেকে গ্রেফতার করার পরই নারী জঙ্গীদের ব্যাপারে তথ্য পাওয়া যায়।

 

র‌্যাবের তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মানারাত বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রেফতার শিক্ষার্থী জেএমবির নারী জঙ্গী আকলিমা রহমান মনি। ইসলামী ছাত্রী সংস্থার মানারাত বিশ্ববিদ্যালয় শাখায় দু’বছর সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করে সে। বিভিন্ন সময় সে আলোচিত-সমালোচিত আহলে হাদিস নেতা আসাদুল্লাহ আল গালিবের বাসাতেও যেত। এছাড়া মানারাতের আরও দুই শিক্ষার্থীর জঙ্গীবাদে জড়িত থাকার তথ্যও দিয়েছে আকলিমা। গাজীপুরের সাইনবোর্ড এলাকার হাজীর পুকুরে মিলিত হতো নারী জঙ্গীরা। মিরপুর এলাকা থেকে আকলিমাসহ চার নারী জঙ্গীকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে আকলিমা জানায়, নিষিদ্ধ সংগঠন জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) নারী জঙ্গীদের নেপথ্যে ইন্ধন দিচ্ছে জামায়াত-শিবির। তারাই নেপথ্যে থেকে নারী জঙ্গীদের সংগঠিত করছে। গ্রেফতারকৃত চার নারী জঙ্গীই উচ্চশিক্ষিত। তাদের সঙ্গে আরও যে নারী জঙ্গী আছে তারা এখনও পলাতক।

 

তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চার নারী জঙ্গীসহ আকলিমাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে আকলিমা জবানবন্দীতে জানায়, নারী জঙ্গীরা পুরুষ জঙ্গীদের মতোই কোডনেম ব্যবহার করে। এ কোডনেমেই তারা গাজীপুরের সাইনবোর্ড এলাকার ‘হাজীর পুকুরে’ মিলিত হয়। আর সেখানে তাদের সঙ্গে ধর্মীয় বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে আসে দুই পাকিন্তানী নারী। এদের বয়ান শুনে নতুন ধারার জেএমবির নারী জঙ্গীরা দুই পাকিস্তানীর হাতে হাত রাখে। জিজ্ঞাসাবাদে আকলিমা জানায়, নারী জঙ্গীদের সবাই শিক্ষিত বা উচ্চশিক্ষিত। মানারাতে আরও জঙ্গী আছে। প্রাথমিকভাবে দুজনের নামও বলেছে। আকলিমার তথ্য অনুযায়ী, তিন মাস আগে পরপর দুই শুক্রবার ‘হাজীর পুকুরে’ মিলিত হয় তারা। সেখানে তাদের নির্দেশনা দিতে তিন যুবকও আসে। তারা নারী জঙ্গীদের কাছে কিছু বইপত্রও দিয়ে যায়। আগেও তারা সেখানে একাধিকবার মিলিত হয়েছিল। বিশেষ করে জায়গাটি নিরাপদ হওয়ায় কোন ঝুঁকি ছিল না। তাই হাজীর পুকুর এলাকার মসজিদে তারা জুমার নামাজ পড়ত। পরে জঙ্গী আনসার আলীর লাইব্রেরিতে বসে আলোচনা করত তারা।

 

তদন্তকারীদের জিজ্ঞাসাবাদে আকলিমা জবানবন্দীতে বলেছে, হাজীর পুকুরে এক হওয়ার আগে তারা নিজেদের মধ্যে থ্রিমা এ্যাপসে যোগাযোগ করে। রাবেয়া বিনতে আজহার নামে এক নারী এসব সমন্বয় করত। এ নারী সবাইকে এ্যাপসে দাওয়াত দিত। দিন-তারিখ মোতাবেক শুক্রবার জুমার নামাজের আগেই তারা সেখানে হাজির হতো। এ রাবেয়াই সবাইকে আসল নাম-পরিচয় গোপন রাখার পরামর্শ দেয়। রাবেয়া বিনতে আজহার হচ্ছে জামায়াতের আনুকূল্যে গড়া ইসলামী ছাত্রী সংস্থার সাংগঠনিক পর্যায়ের নেত্রী। রাবেয়ার হাত ধরেই আকলিমা ছাত্রী সংস্থায় যোগ দেয়। পরে সাংগঠনিক তৎপরতার কারণে বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতৃত্বে আসে। সে বাংলা, আরবী, ইংরেজী ও হিন্দি ভাষা জানে। আরবী থেকে অনুবাদ করেও সে অন্যদের বোঝাত। জিজ্ঞাসাবাদে আকলিমা জানায়, গ্রেফতারের দুই সপ্তাহ আগে জামায়াতের এক নেতার স্ত্রীর সঙ্গে আকলিমা দেখা করে। রাবেয়া বিনতে আজহার তাকে সেখানে নিয়ে যায়। ইসলামী ছাত্রী সংস্থায় আকলিমার ‘বড় পদ’ পাওয়ার কথা ছিল। সে আইএসের দাবিক ম্যাগাজিন, অডিও-ভিডিও বার্তা, আইএস সংক্রান্ত নানা তথ্য নিজেদের মধ্যে আদান-প্রদান করত। আইএসের কর্মকাণ্ডে উদ্বুদ্ধ করতে নিজ ফোরামে থাকা নারীদের ‘ছবক’ দিত। তাদের হাতে আপডেট ভিডিও পাঠানো হতো এ্যাপসে। মানারাত বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষার্থী খাদিজা পারভীন মেঘলা।

 

Print Friendly, PDF & Email

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর