কিশোরগঞ্জে সাড়া ফেলেছে মন্দিরভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রমের শিক্ষা কেন্দ্রে ভর্তি

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ পাঁচ বছরের ছোট্ট শিশু শ্রেয়সী চক্রবর্তী ধারা। তাঁর কচি কণ্ঠে মিষ্টি ছন্দে ছড়া আর গীতার শ্লোক মোহিত করে সবাইকে। বাবা চয়ন কুমার চক্রবর্তী জানান, তার মেয়ে ধারাকে গত বছর তিনি বাসার পাশের আখড়া বাজার শ্যামসুন্দর আখড়ায় মন্দিরভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রমের শিক্ষা কেন্দ্রে ভর্তি করেছিলেন। অল্প দিনেই শিক্ষা কেন্দ্রটির শিক্ষিকা মাধবী দাসের স্নেহ, মমতা আর আদর কেড়ে নেয় তার মেয়ের মন। এরপর থেকেই সকাল ৯টা বাজার আগে তার মেয়ে ছুটে যায় মন্দির প্রাঙ্গণে। সেখানেই সে শিখেছে বর্ণমালা। নানা ছড়া আর গীতার শ্লোক।

চয়ন কুমার চক্রবর্তী বলেন, ধারার মুখে মিষ্টি ছড়া আর শ্লোক অসাধারণ লাগে। মন্দিরভিত্তিক এই শিশু শিক্ষা কেন্দ্রটি আমাদের কাছে আশির্বাদ হয়ে এসেছে। এটি আমার সন্তানের জন্য যেন এক নবজীবনের সূচনা এনে দিয়েছে। একই ধরনের কথা বলেন শহরের বত্রিশ এলাকার সুজন চন্দ্র বিশ্বাস। তিনি জানান, তার ছেলে অরণ্য বিশ্বাস অর্ক বাসার পাশের গোপীনাথ জিউর আখড়ার মন্দিরভিত্তিক শিশু শিক্ষা কেন্দ্রের একজন শিক্ষার্থী। গত বছর থেকে সে কেন্দ্রটিতে শিক্ষাগ্রহণ করছে। অত্যন্ত আনন্দমুখর পরিবেশে কেন্দ্রটিতে সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি নৈতিক শিক্ষা দেয়া হয় বলেও তিনি জানান।

বেশ কয়েকজন অভিভাবক জানান, তাদের ৪-৫ বছরের শিশু সন্তানদের কাছে কাছে শৈশব মানে ছিল খাওয়া-খেলা-ঘুম। মন্দিরভিত্তিক শিশু শিক্ষা কেন্দ্র এসে বদলে দিয়েছে সেইসব শিশুদের রুটিন। এখন সকাল হতেই খাওয়া-দাওয়া সেরে তারা ছুটে শিক্ষা কেন্দ্রে-যেখানে শুরু হয়েছে তাদের প্রথম পাঠ, জীবনের নবযাত্রা।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, কিশোরগঞ্জ জেলায় ২০০৮ সালে হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের আওতায় মন্দিরভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। বর্তমানে জেলার ১৩টি উপজেলায় ৯১টি শিক্ষা কেন্দ্র চালু রয়েছে। এর মধ্যে গীতা কেন্দ্র ৮টি, বয়স্ক শিক্ষা কেন্দ্র ৪টি এবং প্রাক-প্রাথমিক ৭৯টি কেন্দ্র রয়েছে। ৮টি গীতা কেন্দ্রের মাধ্যমে ১০-১৮ বছর বয়সী ২২০ জন, ৪টি বয়স্ক শিক্ষা কেন্দ্রে ১০০ জন এবং ৭৯টি প্রাক-প্রাথমিক কেন্দ্রে ৪-৬ বছর বয়সী ২৩৭০ জন শিশু শিক্ষা গ্রহণ করছে।

এর মধ্যে কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলায় ১৫টি, হোসেনপুর উপজেলায় ৩টি, পাকুন্দিয়া উপজেলায় ৩টি, কটিয়াদী উপজেলায় ৭টি, করিমগঞ্জ উপজেলায় ৫টি, তাড়াইলে ৭টি, ইটনায় ৭টি, মিঠামইন উপজেলায় ৪টি, অষ্টগ্রাম উপজেলায় ৮টি, ভৈরব উপজেলায় ৪টি, কুলিয়ারচর উপজেলায় ৬টি, বাজিতপুর উপজেলায় ২০টি ও নিকলী উপজেলায় ৪টি শিক্ষা কেন্দ্র রয়েছে।

প্রতিটি কেন্দ্রে একজন করে শিক্ষক প্রতিদিন আড়াই ঘন্টা পাঠদান করেন। শিক্ষা কেন্দ্রে সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি ধর্মীয় নৈতিক শিক্ষার পাঠদান করানো হয়। শিক্ষার্থীদের বইসহ সকল শিক্ষা উপকরণ বিনামূল্যে সরবরাহ করা হয়। কিশোরগঞ্জ জেলার দায়িত্বে থাকা সহকারী প্রকল্প পরিচালক মো. হুমায়ুন কবির জানান, শিক্ষা কার্যক্রম তদারিকর জন্য সাত সদস্য বিশিষ্ট জেলা মনিটরিং কমিটি এবং আট সদস্য বিশিষ্ট উপজেলা মনিটরিং কমিটি রয়েছে। কিশোরগঞ্জ জেলায় শিক্ষা কেন্দ্রগুলোর সার্বিক অবস্থা খুব ভালো। জেলা প্রশাসনের উর্ধতন কর্মকর্তা, নেতৃবৃন্দও শিক্ষাকেন্দ্র পরিদর্শন করে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ট্রাস্টি রিপন রায় লিপু বলেন, জীবনমান উন্নয়নে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার এই বিশেষ উদ্যোগটি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের জন্য এক বিরাট আশির্বাদ। মন্দিরভিত্তিক শিক্ষা কেন্দ্রগুলোকে কেন্দ্র করে তাদের মধ্যে বিপুল আগ্রহ তৈরি হয়েছে। সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি ধর্মীয় রীতিনীতি শেখার এক আদর্শস্থানে পরিণত হচ্ছে শিক্ষা কেন্দ্রগুলো। শিশু শিক্ষা কেন্দ্র শিশুদের নৈতিকতা শিক্ষায় উদ্ধুদ্ধ করছে। ফলে ধর্মীয় ও নৈতিকতা শিক্ষায় শিশুদের মানসিকভাবে বিকাশ ঘটছে।

Print Friendly, PDF & Email

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর