আইভিই হচ্ছেন আ.লীগ প্রার্থী

২২ ডিসেম্বর দ্বিতীয়বারের মতো অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন। ২৪ নভেম্বর প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষ দিন।২৬ থেকে ২৭ নভেম্বরের মধ্যে মনোনয়নপত্র যাচাই বাছাই করবে নির্বাচন কমিশন।আর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন ৪ নভেম্বর।

সোমবার বিকেলে নির্বাচন কমিশন এই তফসিল ঘোষণা করেছে।এদিকে তফসিল ঘোষণার পর থেকেই নির্বাচনকে ঘিরে নগরীর সর্বত্রই আলোচনা চলছে।

নারায়ণগঞ্জের রাজনৈতিক অঙ্গণ থেকে শুরু করে, ব্যবসায়ী মহল, পেশাজীবীসহ সর্বস্তরের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু এখন সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন।সম্ভাব্য কাউন্সিলর প্রার্থীরা এরই মধ্যে পোষ্টার সাঁটিয়ে নির্বাচনী সালাম জানিয়ে প্রচার প্রচারণা শুরু করে দিয়েছেন। আগাম নির্বাচনী সালাম জানানোর তালিকায় দুজন মেয়র প্রার্থীও রয়েছেন।

নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে সাধারণ মানুষের মধ্যে কৌতুহল ততই বাড়ছে।সকলেরই প্রশ্ন কে হতে যাচ্ছেন আগামী নির্বাচনে বড় দুই দলের মেয়র প্রার্থী। ইতিমধ্যে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন মেয়র নির্বাচনে তার প্রার্থিতা ঘোষণা করে প্রচারণায় নেমে পড়েছেন।

অপরদিকে বর্তমান মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী পুনরায় প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়ে নির্বাচনের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন। আওয়ামী লীগ থেকে আনোয়ার হোসেন মনোনয়ন পাবেন এমনটা প্রচার থাকলেও সরকারি প্রজ্ঞাপন জারি করে মেয়র আইভীকে উপ-মন্ত্রীর পদমর্যাদা দেয়ার পর আনোয়ার সমর্থকরা অনেকটা হতাশ হয়ে পড়েছেন।খোদ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে আইভীর দল থেকে মনোনয়ন পাওয়া নিয়ে যে সন্দেহ ছিলো তা অনেকটা কেটে গেছে। কিছুদিন পূর্বেও যাদেরকে আইভীর বিরুদ্ধে মন্তব্য করতে দেখা গেছে, তারাই এখন উল্টো সুরে কথা বলা শুরু করেছেন। শহরের বামপন্থিদের মধ্যেও নতুন করে উৎসাহ বেড়ে গেছে।

ফেইসবুকে আইভী সম্পর্কে তার বিরোধীপক্ষ আপত্তিকর কিছু মন্তব্য করলেও যুবলীগের ও ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে মেয়র আইভীকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়েছে। আওয়ামী লীগ থেকে আইভীই মনোনয়ন পাচ্ছেন এটা নিশ্চিত বলে মনে করছেন দলীয় নেতাকর্মীরা। তবে আনোয়ার হোসেনের সমর্থকরা এখনো হাল ছাড়েনি।

এ ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জ জেলা যুবলীগের সভাপতি আব্দুর কাদির বলেন, আসন্ন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী দলীয় মনোনয়ন পাচ্ছেন বলে দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে আগেই গ্রিন সিগন্যাল দেয়া হয়েছে। তখন থেকেই আমরা তার পক্ষে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। তিনি দলের সকল নেতাকর্মীদের নিকট ভোট প্রার্থনা করে বিগত নির্বাচনের মতো এবারও নেতাকর্মীরা ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর পাশে থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেন।

তবে নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পাচ্ছেন কিনা জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের বর্তমান মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মরক্কো সফর থেকে দেশে না ফেরা পর্যন্ত নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি কোনো মন্তব্য করবেন না।

অপরদিকে বিএনপির পক্ষ থেকে সিটি কর্পোরেশনের আসন্ন নির্বাচনে একাধিক প্রার্থীর নাম শোনা গেলেও এখনো পর্যন্ত সাবেক এমপি আবুল কালাম অনেকটা নিশ্চিত বলে জানা গেছে। আবুল কালাম নির্বাচন না করলে সেক্ষেত্রে বিএনপি হাইকমান্ড বিকল্প হিসেবে জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেনকে তাদের প্রার্থী হিসসেবে পছন্দের তালিকায় রেখেছেন বলে জেলা বিএনপির কয়েকজন সিনিয়র নেতা আভাস দিয়েছেন। তবে অ্যাডভোকেট আবুল কালাম নিজেও আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে তার ঘনিষ্ঠজনরা জানিয়েছেন। পাশাপাশি অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেনও প্রার্থী হিসাবে প্রচার প্রচারণার কাজ করে যাচ্ছেন। নারায়ণগঞ্জ নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এটিএম কামাল বলেন, বিএনপি প্রার্থী না দিলে নিজেই প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিবেন। তবে দল যদি প্রার্থী দেয় তাহলে তার পক্ষে কাজ করার সিদ্ধান্তের কথা জানান তিনি।

এছাড়া জাতীয় পার্টি থেকে প্রয়াত সাংসদ নাসিম ওসমানের স্ত্রী পারভীন ওসমান ও বর্তমান সাংসদ সেলিম ওসমানের স্ত্রী নাসরিন ওসমানের নাম শোনা যাচ্ছে। বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি থেকে ‘কোদাল’ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন  অ্যাড. মাহবুবুর রহমান ইসমাঈল। তবে এখন পর্যন্ত আইভী ছাড়া সকলের নামই গুঞ্জন হিসেবে শোনা যাচ্ছে। এ পর্যন্ত আইভী ও আনোয়ার হোসেনই আনুষ্ঠানিকভাবে নাসিকের মেয়র পদে নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার জোড় আলোচনা হচ্ছে। অন্যরা এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কোন ঘোষণা দেননি। যদিও বিগত শারদীয় দুর্গোৎসবে পোষ্টার ও ব্যানার সাঁটিয়ে নির্বাচনী সালাম দিয়েছেন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন এবং বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির মাহবুবুর রহমান ইসমাঈল।

নির্বাচন প্রসঙ্গে নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান বলেন, কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের সীমানা জটিলতা নারায়ণগঞ্জেও রয়েছে। বিগত নাসিক নির্বাচনের সময় সীমানা ছিলো মাসদাইর কবর স্থান সংলগ্ন গভর্মেন্ট গালর্স স্কুল পর্যন্ত। যেটা নারায়ণগঞ্জ ৪ আসনের সাংসদ শামীম ওসমান চাষাড়া রেল লাইন পর্যন্ত করে দিয়েছে। তাহলে বলা যেতে পারে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের সীমানা জটিলতাও রয়েছে। এখন দেখার বিষয় কেউ এই সীমানা জটিলতা দাঁড় করেন তাহলে সেটা সমস্যা হয়ে দাঁড়াতে পারে।

২০১১ সালের ৩০ অক্টোবর প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হয়েছে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন। যেখানে ভোটাররা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে ১ জন মেয়র, ২৭ জন কাউন্সিলর ও ৯ জন সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর নির্বাচিত করেছিলেন। এবারো নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন ২৭ টি ওয়ার্ডে ভোটাররা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে বিগত নির্বাচনের ন্যায় প্রতিনিধি নির্বাচিত করবেন।

নারায়ণগঞ্জ জেলা নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, বিগত নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা ছিল ৪ লাখ ৪ হাজার ১৮৯ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৩ হাজার ৩৪৪ এবং নারী ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৮৪৫ জন। তবে এবারের নির্বাচনে প্রায় পৌনে এক লাখ ভোটার সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় মোট ভোটার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৭৯ হাজার ৩৯২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৪১ হাজার ৫১৪ এবং নারী ভোটার ২ লাখ ৩৭ হাজার ৮৭৮ জন। আগামী ২২ ডিসেম্বরের নির্বাচনে সম্ভাব্য ১৬৩ ভোট কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ করা হবে। ভোট কক্ষ থাকবে ১২১৭টি। নির্বাচনে ১৬৩ জন প্রিজাইটিং অফিসার, ১২১৭ জন সহকারী পিজাইটিং অফিসার, ২৪৩৪ জন পোলিং এজেন্ট দায়িত্ব পালন করবেন বলে প্রাথমিকভাবে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর