শেখ মুজিব ও হাসিনার গণতন্ত্রে মৌলিক কোনো পার্থক্য নেই

কিশোরগঞ্জ ।।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, শেখ মুজিবের গণতন্ত্র আমরা দেখেছি, শেখ হাসিনার গণতন্ত্রও আমরা দেখছি। শেখ মুজিব ও শেখ হাসিনার গণতন্ত্রে মৌলিক কোনো পার্থক্য নেই। সেদিনও যারাই বিরোধিতা করেছে, তাদেরকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। সেদিনও ৩০ হাজার তরুণ যুবককে হত্যা করা হয়েছে। আজও একইভাবে তরুণ যুবকদের হত্যা করা হচ্ছে।

মঙ্গলবার দুপুরে শহরের গাইটাল এলাকার অতিথি কমিউনিটি সেন্টার প্রাঙ্গণে কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, ইলিয়াস আলী ক্ষমা পায় নাই। সাড়ে তিন বছর আগে তাকে তুলে নিয়ে গেছে। তার ছোট বাচ্চাটা এখনো দরজার দিকে তাকিয়ে থাকে, কখন বাবা আসবে! আসে না। ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের তিন তিনবার নির্বাচিত কমিশনার চৌধুরী আলম সেও তিন বছর আগে গুম হয়ে গেছে। ফেরে না। পারভেজ, হিরুও গুম হয়ে গেছে, ফেরে না। সুমন, পারভেজ থেকে শুরু করে কেবল ঢাকা মহানগরের ২১জন ছাত্রনেতা গুম হয়ে গেছে, ফেরে না। তাদের মা-বোনদের কথা শোনা যায় না। দক্ষিণখানের মুন্না ফেরেনি। তার বাবা চারদিন আগে ছেলের শোকে মারা গেছেন।

তিনি আরো বলেন, দেশনেত্রীর বিরুদ্ধে ২৯টি মামলা। প্রত্যেকটি তৈরি করা, সাজানো। আমাদের চোখের সামনে দেখতে হয়, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে আদালতে আসামির কাঠগড়ায় বসিয়ে রাখা হচ্ছে। যে মানুষটি শুধু গণতন্ত্রের জন্য সারাটা জীবন বিলিয়ে দিয়েছেন, তাকে বাড়ি থেকে বের করে উদ্বাস্তু করে দিয়েছে। সেই নেত্রীকেও রেহাই দিচ্ছে না।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে সুপ্রিম কোর্ট জামিন দিয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত তাকে বের করা সম্ভব হয়নি। হাবিব উন নবী সোহেলও বেরোতে পারেনি। আবদুস সালাম পিন্টু দশ বছর ধরে কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে রয়েছেন। কাশিমপুর কারাগারে আমি গেছি, দেখেছি আমাদের নেতাকর্মী ছাড়া বন্দী কেউ নেই। সেন্ট্রাল জেলে গেছি, সেখানেও আমাদের নেতাকর্মী ছাড়া আর কেউ নেই। সমগ্র দেশটাকেই তারা কারাগারে পরিণত করেছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, যখনই সংলাপের মধ্য দিয়ে কথা বলার চেষ্টা করেছি, তখন তারা তা নাকচ করেছে। কারণ একটাই, সুষ্ঠু নির্বাচন যদি হয়, তাহলে তারা কোনদিনই ক্ষমতায় আসতে পারবে না। এজন্যে তারা কোনভাবেই সুষ্ঠু নির্বাচন করতে চায় না। বিএনপি একটি উদারপন্থি গণতান্ত্রিক দল। বিএনপি নির্বাচনের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনায় যেতে চায়, অন্য কোন পথে যেতে চায় না। এই সরকার গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। জনগণকে বোকা বানানোর জন্যে তারা মুখে গণতন্ত্রের কথা বলে। গণতন্ত্রের কথা বলে তারা জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করে। ২০১৪ সনে তারা একটা নির্বাচন করেছে, যেটা সম্পূর্ণরূপে ভোটারবিহীন নির্বাচন। ওই নির্বাচনে শতকরা পাঁচজন মানুষও ভোট দিতে যায়নি এবং ১৫৪ জন প্রার্থীকে তারা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত করেছে। মিথ্যাচার, ইতিহাস বিকৃতির মাধ্যমে জাতিকে বিভ্রান্ত করতে তাদের জুড়ি নেই বলেও মন্তব্য করেন ফখরুল।

দেশে ধর্মপালনের স্বাধীনতা নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, হিন্দুদের ওপর হামলা হচ্ছে, সাওতাঁলদের ওপরও হামলা হচ্ছে। এমনকি বৌদ্ধ-খ্রিস্টানরাও নিরাপদে নেই। আর মুসলমানদেরকে বিশেষ করে দাড়ি টুপিওয়ালা দেখলেই ধরে নির্যাতন করা হচ্ছে।

জেলা বিএনপির সভাপতি ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট মো. ফজলুর রহমানের সভাপতিত্বে সম্মেলনের উদ্বোধক বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান বলেন, হাজার হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা। হাজার হাজার নেতাকর্মী এখনো জেলে। অনেক নেতাকর্মী পঙ্গু, অনেকেই শাহাদাত বরণ করেছে। এই বর্বরতা আমাদের থামিয়ে রাখতে পারেনি। গণতন্ত্রের বিজয় হবেই। দেশের মানুষ প্রস্তুত হয়ে আছে। কেবল আমাদের বিএনপির প্রস্তুতির প্রয়োজন।

জেলা বিএনপির যুগ্মসাধারণ সম্পাদক অসীম সরকার বাধনের পরিচালনায় সম্মেলনের প্রথম অধিবেশনে অন্যদের মধ্যে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, যুগ্মমহাসচিব মজিবর রহমান সারোয়ার, ময়মনসিংহ বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. শরীফুল আলম, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও জামালপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ওয়ারেস আলী মামুন, যুবদলের সাবেক সহ-সভাপতি রুহুল আমিন আকিল, ছাত্রদলের সহ-সভাপতি ইশতিয়াক আহমেদ নাসির প্রমুখ বক্তৃতা করেন। এতে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম সম্পাদকীয় প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন।

পরে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহানের সভাপতিত্বে দ্বিতীয় অধিবেশনে জেলা কমিটি গঠনের ব্যাপারে কাউন্সিলরদের মতামত গ্রহণ করা হয়। তবে সেখান থেকে কমিটির কোনো ঘোষণা আসেনি। পরে কেন্দ্র থেকে কমিটি ঘোষণা করা হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

এর আগে সম্মেলনকে কেন্দ্র করে সকাল থেকেই জেলার ১৩টি উপজেলা এবং ৮টি পৌর শাখার নেতাকর্মী এবং সমর্থকদের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে সম্মেলনস্থল এলাকা। সীমিত পরিসরে হলেও সুশৃঙ্খল পরিবেশে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে তারা সম্মেলনে অংশ নেন।

Print Friendly, PDF & Email

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর