লিচুর গ্রাম মঙ্গলবাড়িয়া

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ রসে টইটম্বুর। স্বাদে-গন্ধে অতুলনীয়। আকারে বড় অথচ বিচি ছোট। সিঁদুরে লাল এই লিচুতে রঙিন এখন মঙ্গলবাড়িয়া গ্রাম। কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া পৌর এলাকার পূর্ব-দক্ষিণে অবস্থিত ছোট্ট গ্রাম মঙ্গলবাড়িয়ার নামেই লিচুর নাম হয়েছে ‘মঙ্গলবাড়িয়ার লিচু’। এবার এই লিচু বিক্রি দুই কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে চাষিরা আশা করছেন।

বৈশাখের শেষ দিকে পাকতে শুরু করে মঙ্গলবাড়িয়ার লিচু। বাজারে অনেক জাতের লিচু উঠলেও লোকজনের চোখ থাকে মঙ্গলবাড়িয়ার লিচুর দিকে। রসালো, সুমিষ্ট, সুন্দর গন্ধ ও গাঢ় লাল রঙের বৈশিষ্ট্যের কারণে মঙ্গলবাড়িয়ার লিচুর খ্যাতি দেশজুড়ে। অনুকূল আবহাওয়ায় এবার এ লিচুর বাম্পার ফলন হয়েছে। এই সময়টাতে গ্রামে প্রবেশের মুখে চোখে পড়ে সারি সারি লিচু গাছে সিঁদুর রঙের থোকা থোকা লিচু। বাতাসের তালে, গাছের পাতার ফাঁকে দুলছে লাল লিচু। প্রায় প্রতিটি বাড়ির আঙিনা, ঘরের পাশে এবং রাস্তার ধারে সারি সারি লিচুগাছ। মঙ্গলবাড়িয়া গ্রামের প্রায় সবার বাড়িতেই রয়েছে ৮-১০টি বা তার চেয়েও বেশি লিচুগাছ। এ লিচুর ফলন প্রচুর ও কদর বেশি থাকায় এর চাষ এলাকার মানুষের ভাগ্য বদলে দিয়েছে। মঙ্গলবাড়িয়াসহ আশপাশের চার শতাধিক পরিবারে লিচু চাষই জীবন-জীবিকার অন্যতম উপায়। তারা বংশ পরম্পরায় লিচু চাষের সঙ্গে যুক্ত। অন্যান্য ফসল উৎপাদনের পাশাপাশি লিচুর আবাদ করে এই গ্রামের মানুষ পেয়েছে সচ্ছলতা, বদলে গেছে তাদের জীবন।

চাষিরা জানিয়েছেন, মৌসুম শুরুর আগেই অনেকে লিচুর জন্য আগাম টাকা দিয়ে রেখে যান। দেশ-বিদেশে থাকা এ গ্রামের আত্মীয়স্বজনও লিচুর মৌসুমের জন্য মুখিয়ে থাকেন। লিচু পাকার সময়ে তারা ছুটে আসেন স্বজনদের বাড়িতে। স্থানীয় লোকজন জানান, প্রায় দুইশ’ বছর ধরে এখানে লিচুর আবাদ হচ্ছে। সুমিষ্ট ও উৎকৃষ্ট জাতের কারণে মঙ্গলবাড়িয়ার লিচুর কদর ক্রমেই বেড়েছে। গাছে ফুল আসার সঙ্গে সঙ্গেই ব্যাপারি বা পাইকাররা লিচুবাগান কিনে নেন। আর লিচু পাকার পর তা চালান করে দেন রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।

মঙ্গলবাড়িয়া গ্রামে ৪০০-৫০০ চাষির অন্তত ছয় থেকে সাত হাজার লিচুগাছ আছে। কোনো কোনো লিচুগাছ এক থেকে দেড় লাখ টাকায় পর্যন্ত বিক্রি হয়। বর্তমানে লিচু পেকে ওঠায় তা বিক্রির ধুম পড়েছে। এবার মঙ্গলবাড়িয়া লিচু বিক্রি দুই কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে চাষি, ফড়িয়া ও ব্যবসায়ীরা জানান।

Print Friendly, PDF & Email

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর