বিএনপির ৬ নেতা আলোচনায়, পদ না পেলে পদত্যাগ

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ বিএনপির স্থায়ী কমিটির তিনটি শূন্যপদ পূরণের তোড়জোড় চলছে। সম্প্রতি দুই নেতাকে স্থায়ী কমিটির ১৭ ও ১৮নং ক্রমিকে যথাক্রমে ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ও সেলিমা রহমানকে নিযুক্ত করার পর মূলত এ আলোচনা সামনে আসে।

বিএনপির পক্ষে আপাতত কাউন্সিল করার পরিবেশ না থাকায় দলটি গত কাউন্সিলের পর থেকে খালি পদগুলো পূরণের জন্য কাজ করছে। তবে খালেদা জিয়াকে জেলে রেখে এ পদগুলো ঘোষণা করায় অনেকটাই ক্ষুব্ধ দলের সিনিয়রদের একটি অংশ। তারা মনে করছেন, স্থায়ী কমিটির মতো পদে পদায়নগুলো এমন সময় করা হচ্ছে; যা অনেকের জন্য অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁয়িয়েছে। অবস্থা এমন পর্যায়ে গেছে স্থায়ী কমিটিতে না আসতে পারলে অনেক নেতাই আর বিএনপিতে থাকবেন না বলে জোর গুঞ্জন রয়েছে।

এ অবস্থার মধ্যে তিনটি খালি পদে আলোচনায় আছেন অন্তত্ব ছয়জন ভাইস চেয়ারম্যান। যারা দলটির স্থায়ী কমিটিতে আসতে পারেন বলে অপেক্ষায় ছিলেন।

গত কাউন্সিলের পর বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান বেশি মনোক্ষুণ্ন হয়েছিলেন বলে সেসময় ব্যাপক আলোচনার জন্ম হয়। তাকে স্থায়ী কমিটিতে স্থান না দেওয়ার পর তিনি অনেকটাই নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েন দলে। পরে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ডেকে নিয়ে তাকে একপ্রকার আশ্বাসের বাণী শুনিয়েছেন বলে দলের মাঝে বেশ আলোচনা হয়েছিল। তাই এবার খালি তিনটি পদে তাকে নিয়ে আসার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি বলে মনে করছেন তার অনুসারী নেতারা। তবে অনেকে মনে করছেন, এবারে তাকে স্থায়ী কমিটিতে না আনা হলে তার বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় থাকার ব্যাপারে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। এ বিষয়ে তার বক্তব্য জানতে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

অন্যদিকে এবার স্থায়ী কমিটিতে না আসতে পারলে দল থেকে পদত্যাগের চিন্তা করছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর। গত বুধবার তিনি একটি নিউজ এজেন্সির কাছে এমন মনোভাবের কথা জানান। স্থায়ী কমিটিতে যুক্ত হওয়া নতুন ওই দুই সদস্যের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে শাহজাহান ওমর বলেন, ‘আমার দ্বারা হয়তো এ দল করা সম্ভব হবে না। এসব বিষয়ে কথা বলা আমরা জন্য বিব্রতকর। আমি কিছু বলতে চাই না। আরো আগেই আমার স্থায়ী কমিটির সদস্য হওয়ার কথা।’

বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের আমলে আইন প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর। বিএনপির ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য থেকে ভাইস চেয়ারম্যান করা হয় তাকে। ওই কাউন্সিলে স্থায়ী কমিটির সদস্যের মধ্যে দুটি পদ শূন্য ছিল। পরবর্তীতে স্থায়ী কমিটির তিন সদস্য মারা যাওয়ায় পাঁচটি পদ শূন্য হয়। শূন্য ওই পদগুলো পূরণে যাদের নাম আলোচিত হচ্ছিল তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর। কিন্তু সেখানে তাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।

এ দুজনের বাহিরে অন্য যারা আলোচনায় আছেন তারা হলেন—শাহ মোয়াজ্জেম, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ, অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, আব্দুল আউয়াল মিন্টু, অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন। এ ছাড়া আরো যারা আলোচনায় আছেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন—ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান, অ্যাডভোকেট জয়নুল আবদিন, বরকত উল্লাহ বুলু, ড্যাব নেতা এ জেড এম জাহিদ হোসেন।

সর্বশেষ ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ বিএনপির ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। কমিটি ঘোষণার সময়ই ১৯ সদস্যের স্থায়ী কমিটির দুটি পদ ফাঁকা ছিল। বাকি ১৭ সদস্যের মধ্যে তরিকুল ইসলাম, আ স ম হান্নান শাহ ও এম কে আনোয়ার মারা যাওয়ায় ফাঁকা হয়ে যায় ৫টি পদ। দীর্ঘ ৩ বছর পর গত বুধবার স্থায়ী কমিটিতে জায়গা পেয়েছেন সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। তারা দুজনই বর্তমান কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন। এ ছাড়া দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান ও ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া অসুস্থ ও বয়োবৃদ্ধতার কারণে অবসর নিচ্ছেন। এ পরিস্থিতিতে বর্তমানে স্থায়ী কমিটির ১৯টির মধ্যে মোট ৫টি পদ শূন্য হতে পারে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আমার বয়স হয়েছে, এখন রাজনীতি থেকে অবসর নেওয়ার কথা ভাবছি। বর্তমানে দলের প্রয়োজনে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে—এমন তরুণ নেতাদের জন্য স্থান ছেড়ে দেওয়া উচিত।’

আব্দুল আউয়াল মিন্টু বলেন, ‘আমি যেখানে আছি ভালো আছি। তবে দল যদি যোগ্য মনে করে স্থায়ী কমিটির সদস্য করে, দায়িত্ব পালনে প্রস্তুত আছি, তবে পাওয়া না পাওয়া নিয়ে আমার মধ্যে কোনো গোস্যা নেই।’ অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, ‘দল যা ভালো মনে করছে, সেই অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। ফলে আমি চুপ থাকতে চাইছি। পদ নিতে আমরা হ্যাঁ বা না কোনোটাই বলতে চাই না।’

Print Friendly, PDF & Email

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর