আওয়ামী লীগের তিন সংগঠন ‘গতিহীন’

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ আওয়ামী লীগের সহযোগী ও ভাতৃপ্রতীম সংগঠনগুলোর সবশেষ সম্মেলন হয়েছিল ২০১২ সালে। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ২০১৫ সালে নতুন করে আবার হওয়ার কথা ছিল সম্মেলন। কিন্তু সেটা না হয়ে পার হয়ে যাচ্ছে আরও চারটি বছর। সব মিলিয়ে তিন বছরের কমিটি চলছে সাত বছর। মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি নিয়ে চলা যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও শ্রমিক লীগের নেতাকর্মীরা অক্টোবরে মূল দলের হতে যাওয়া জাতীয় সম্মেলনের আগে নতুন কমিটি পাওয়ার আশা করছেন। তবে এটা হবে কি না এ নিয়ে সন্দিহানও তারা। কারণ, ২০১৬ সালের অক্টোবরে আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনের আগেও আশাহত হতে হয়েছে তাদের।

নেতা-কর্মীরা প্রশ্ন তুলছেন, আওয়ামী লীগ সময় মতো তার সম্মেলন করে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করলে তাদের সংগঠনে কেন এই দেরি। এ বিষয়ে মূল দলের দৃষ্টিও আকর্ষণ করেছেন তারা। বলছেন, নিয়মিত সম্মেলন না হওয়ায় নতুন নেতৃত্ব যেমন হচ্ছে না, তেমনি সংগঠনের কার্যক্রমও ঝিমিয়ে পড়েছে।

পদ প্রত্যাশীদের অভিযোগ, দায়িত্বে থাকা নেতাদের আন্তরিকতার ঘাটতির কারণেই হচ্ছে না নতুন কাউন্সিল। তাই তারা এ বিষয়ে দলের প্রধান শেখ হাসিনার দিকেই তাকিয়ে আছেন।

একটি সহযোগী সংগঠনের একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করে বলেন, ‘এভাবে একটা সংগঠন চলতে পারে না। আওয়ামী লীগকে সরকার চালাতে হচ্ছে। এর মধ্যেও তারা সময় মতো সম্মেলন করে ফেলছে। আর আমরা কিছুই করতে পারছি না। এটা কেন হচ্ছে তা সহজেই বোঝা যায়। কিন্তু আমরা কিছু বলতেও পারি না।’

আওয়ামী লীগের চার সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনের একটি যুবলীগ। সংগঠনটির বর্তমান চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী ২০০৯ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত ছিলেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। ২০১২ সালের ১৪ জুলাইয়ে সম্মেলনে হন চেয়ারম্যান। ওই কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক হলেন হারুন অর রশিদ।

২০১৫ সালে যে সম্মেলন হওয়ার কথা, সেটি কবে হতে পারে-জানতে চাইলে ওমর ফারুক চৌধুরী সাংবাদিককে বলেন, ‘আমাদের জেলা সম্মেলন শুরু হয়েছে, পর্যায়ক্রমে সব জেলার হবে। আমাদের সম্মেলন আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনের আগে হবে।’

স্বেচ্ছাসেবক লীগের সবশেষ সম্মেলন হয়েছিল ২০১২ সালের ১২ জুলাই। সংগঠনটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন মোল্লা মো. আবু কাওসার, সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন পঙ্কজ দেবনাথ।

কবে সম্মেলন হবে-জানতে চাইলে সংগঠনটির সভাপতি আবু কাওসার বলেন, ‘সম্মেলন করার জন্য আমাদের শতভাগ প্রস্তুতি আছে। আমরা মানসিক ও রাজনৈতিকভাবে প্রস্তুত। প্রধানমন্ত্রী সময় দিলেই হয়ে যাবে। আওয়ামী লীগের সম্মেলনের আগে হওয়ার সম্ভাবনা আছে।’

একই অবস্থা শ্রমিক লীগেরও। শ্রমিক লীগের সাংগঠনিক অবস্থাও নড়বড়ে। সভাপতি শুক্কুর মাহমুদ ও সাধারণ সম্পাদক মো. সিরাজুল ইসলাম নেতৃত্বাধীন শ্রমিক লীগের বর্তমান কমিটিও মেয়াদ পেরিয়েছে প্রায় তিন বছর আগে। সম্মেলন কবে হবে বা হবে কিনা, তা নিয়ে শ্রমিক লীগে কোনও আলোচনা নেই। তবে নেতাদের ভাষ্য, হয়ে যাবে।

ক্ষমতাসীদের ২০তম জাতীয় সম্মেলনের পর থেকে বার বার সংগঠনগুলোকে সম্মেলনের তাগিদ দেওয়া হয় দল থেকে। কিন্তু মেয়াদোত্তীর্ণ চারটি সহযোগী সংগঠনের কোনোটিতেই এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে দৃশ্যমান কোনও উদ্যোগ নেয়নি। সর্বশেষ ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সহযোগী সংগঠনের সম্মেলনের তারিখও ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু সেই তারিখ পেরিয়েও চলে গেছে বহু সময়।

ক্ষমতাসীন দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল-আলম হানিফ সাংবাদিককে বলেন, ‘আমাদের সহযোগী ও ভাতৃপ্রতীম কিছু সংগঠনের অনেক আগেই মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেছে। মূলত এসব সংগঠনের দেখভাল তারাই করে। দলীয়ভাবে আমরা তাদের বলেছি, প্রস্তুতি নিয়ে সম্মেলন করতে। আশা করছি তারা ঢেলে সাজিয়ে যত দ্রুত সম্ভব তাদের সম্মেলন ভালোভাবে সম্পূর্ণ করবে।’

আওয়ামী লীগের ২১ তম জাতীয় সম্মেলনের আগে সহযোগী ও ভাতৃপ্রতীম সংগঠনগুলোর সম্মেলন সম্ভব কি না- জানতে চাইলে হানিফ বলেন, ‘সম্ভব হবে কিনা সেটা বলা কঠিন। কারণ হাতে খুব বেশি সময় নেই, তারপরও যদি কারও সম্মেলন করার মত প্রস্তুতি থাকে সেটা হতে পারে।’

Print Friendly, PDF & Email

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর