প্রিয়া সাহা বুদ্ধিজীবীদের লুঙ্গি খুলে দিয়েছেন

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ রাজা কহিলেন, ‘কথা তুমি নিশ্চয়ই বলবে, তবে তুমি তাই বলবে, যা আমি শুনতে চাই।’ প্রিয়া সাহা  প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে হিন্দুরা তাই বলছে, যা ক্ষমতাসীনরা বা সংখ্যাগরিষ্ট মানুষ শুনতে চায়? সামান্য ব্যতিক্রম আছে। আসল চিত্র মেলে সামাজিক মাধ্যমে। বহির্বিশ্বে বাংলাদেশি সংখ্যালঘুরা একচেটিয়া প্রিয়া সাহা’র পক্ষে। পশ্চিমবঙ্গে কিছুটা বাতাস লেগেছে। যুগশঙ্খ ব্যাপক কভারেজ দিয়েছে। আনন্দবাজারের মত কাগজ, যারা হিন্দু নামে নাক সিটকায়, তারাও নিউজ করেছে। রাজ্য উদ্বাস্তু সেল, বিজেপি, পশ্চিমবঙ্গ, কলকাতায় ডেপুটি হাইকমিশনের সামনে বিক্ষোভ করছে।

বাংলাদেশে প্রিয়া সাহা প্রশ্নে মোটামুটিভাবে একটি ধর্মীয় বিভাজন টানা হয়ে গেছে। কেউ পক্ষে, কেউবা বিপক্ষে। কেউ চুলচেরা বিশ্লেষণ করছেন, প্রিয়া সংখ্যাটা ঠিক বলল, নাকি ভুল বা অতিরঞ্জিত? প্রিয়া কি আবেগে ওই কথা বলেছেন, নাকি পরিকল্পিতভাবে বলেছেন? তিনি কি আমেরিকায় থেকে যাবেন, নাকি দেশে ফিরে যাবেন? মোদ্দাকথা হচ্ছে, প্রিয়া’র অপ্রিয় সত্য কথা দেশে সবাইকে বিপাকে ফেলে দিয়েছে। তিনি নিজে পড়েছেন আরও মহাবিপাকে। কথার কি অপরিসীম শক্তি? সামান্য ক’টি কথায় একটি পুরো দেশ আলোড়িত। প্রিয়া নাম সবার মুখে মুখে।

প্রিয়া সাহা কথা বলেছেন মাত্র তেতাল্লিশ সেকেন্ড। তিনি আওয়ামী লীগ বা বিএনপি’র বিরুদ্ধে কথা বলেননি। তার বক্তব্য সরাসরি আঘাত করেছে রাষ্ট্রযন্ত্রের ওপর। বাংলাদেশ রাষ্ট্রটি একজন মাত্র নারী প্রিয়া সাহা’র সামান্য কথায় নড়েচড়ে ওঠেছে। সংখ্যালঘু সমস্যাকে প্রিয়া ‘বিশ্বজনীন’ করে দিয়েছেন। বাংলাদেশে সংখ্যালঘুরা ক্রমাগত অত্যাচারিত হচ্ছেন, দেশত্যাগে বাধ্য হচ্ছেন, এটি সবাই জানেন, কিন্তু মানতে চান না; রাষ্ট্রযন্ত্র এতে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত বা সহায়তা করছে, অথবা নির্বিকার; প্রিয়া সাহা এই অমোঘ সত্য প্রকাশ করে দিয়েছেন।

মঙ্গলবার (৩০শে জুলাই) স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলছেন, বাংলাদেশে হিন্দু’র সংখ্যা বাড়ছে। একেই বলে ঠেলার নাম বাবাজী। রাতারাতি হিন্দুর সংখ্যা বাড়ছে। সামনে আরও বাড়বে? বছর দুই আগে এমনিভাবে হটাৎ করে কোন সেন্সাস ছাড়াই এক বিবৃতিতে দুই শতাংশ হিন্দু বেড়ে যায়? অনেকটা কাঁচা কাঁঠাল যেমন ‘জাগ্’ দিয়ে পাঁকানো হয়, সেইভাবে। কথায় বলে, একজন নারী নয় মাসে একটি সন্তান জন্ম দিতে পারেন; কিন্তু নয় জন মহিলা মিলে এক মাসে একটি বাচ্চা জন্ম দেয়া সম্ভব নয়? পরিস্থিতি অনুকূল না হলে বা ভয়ভীতি দূর না হলে, নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে শতাংশ হারে হিন্দু’র সংখ্যা বাড়ার যৌক্তিক কোন কারণ নেই?

প্রিয়া সাহা’র কি হবে? কারও কারও মতে, তিনি পরবর্তী বিচারপতি সিন্হা, যিনি সরকারের রোষানলে পড়ে দেশত্যাগ করতে বাধ্য হন। প্রিয়া সাহা চেষ্টা করেছেন প্রধানমন্ত্রীর সান্নিধ্য পাবার। খুব একটা লাভ হবে বলে মনে হয় না? প্রধানমন্ত্রী অনেককে ক্ষমা করে দেন, কিন্তু  ভুলেন না! প্রিয়াকেও ভুলবেন না? প্রিয়া কি দেশে ফিরে যাবেন? এ সময়ে দেশে গেলে তার কিচ্ছু হবে না। সরকার তার সবরকম নিরাপত্তা দেবেন। স্বভাবতঃই সরকার বিশ্বকে দেখাতে চাইবেন, বাংলাদেশে কথা বললে কিচ্ছু হয় না, বরং চাইলে নিরাপত্তা দেয়া হয়। তবে ভবিষ্যত অজানা। তার মেয়ে দু’টো আমেরিকা এসেছে। স্বামী মলয় সাহা দেশে, আড়ালে আছে, তবে আপাতত: ভালোই!

দেশে জনগণ এবং সরকার প্রিয়া সাহার বিরুদ্ধে। মোল্লারা তো হুঙ্কার দিয়েই যাচ্ছে। মন্ত্রী ও নেতাদের বক্তব্য বেশ কঠিন ছিল। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের পর এরা চুপ আছেন, কিন্তু তলে তলে বিষোদগার থেমে নেই। মার্কিন চাপে পররাষ্ট্রমন্ত্রী উল্টো সুর গাইছেন। প্রধানমন্ত্রীর অবস্থান কৌশলগত। দেশের জনগোষ্ঠীর তিনি বিরাগভাজন হতে পারেন না; আবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে এই সামান্য বিষয়ে ক্ষেপিয়ে তোলার কোন যুক্তি নেই? সুতরাং আপাততঃ দেশে গেলে প্রিয়া সাহা ভালোই থাকবেন। তবে জনসমক্ষে যেতে পারবেন না? একদা বন্ধুরা তাকে এড়িয়ে যাবেন। অনেকে কথা বলতে ছেড়ে দেবেন না? চুলাচুলি, হাতাহাতি, অসম্ভব নয়!

প্রাথমিকভাবে হিন্দুরা প্রিয়া সাহাকে সমর্থন দিতে চাইলেও এখন চাপের মুখে পিছু হটছেন। দোষ দিচ্ছেন প্রিয়া সাহাকে। অবাক কান্ড যে, একটি সামান্য ঘটনায় পুরো দেশ এক নারীর বিপক্ষে চলে গেছে। নামটি তার ‘প্রিয়া সাহা’, শুধুমাত্র এজন্যেই? এমনকি তথাকথিত প্রগতিশীল বুদ্ধিজীবীরা হয় বিপক্ষে গেছেন, নয়তো বা চুপ থাকতে পছন্দ করছেন। সামাজিক মাধ্যমে একজন লিখেছেন, প্রিয়া সাহা আমাদের দেশের মেকি ধর্মনিরপেক্ষ (!) বুদ্ধিজীবীদের ‘লুঙ্গি’ খুলে দিয়েছেন।

মৌলবাদী মহল প্রিয়া’র ক্ষেত্রে খুব একটা আগ্রহী নন, কারণ এতে তারা সরকারের চাইতেও বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হবেন? প্রিয়া সাহা তাদের মৌলবাদী রাজনীতির ভিত্তির ওপর সরাসরি আঘাত হেনেছেন। প্রিয়ার সাহসী উচ্চারণ, ‘মৌলবাদী মুসলিম’ শব্দ দু’টি শক্তিশেল হিসাবে আঘাত হেনেছে। প্রিয়া সাহা’র বক্তব্যে পরিষ্কার যে, বাংলাদেশে ইসলামী মৌলবাদ সংখ্যালঘুদের অত্যাচার করছে। ফলশ্রুতিতে তাদের সংখ্যা কমছে। আগেই বলেছি, সংখ্যালঘু সমস্যার বিশ্বায়ন হয়েছে। বিশাল মহীরুহ এই সমস্যা হেসে উড়িয়ে না দিয়ে সমাধানে সচেষ্ট হওয়া দরকার। ছেলেবেলায় পড়েছিলাম ‘অমঙ্গলকে হাসিয়া উড়াইয়া দিলে মঙ্গল সমেত উড়িয়া যাইবে।’ সত্য, সর্বদাই কঠিন, তবে শেষমেষ তা মেনে নিতেই হয়?

সূত্র: মানবজমিন

Print Friendly, PDF & Email

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর